ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেড় শ’ একর ভূমি দখল করে শত শত স্থাপনা

কক্সবাজারে বনায়নের গাছ সাবাড়

প্রকাশিত: ২০:২৮, ১৯ অক্টোবর ২০২০

কক্সবাজারে বনায়নের গাছ সাবাড়

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জ চকরিয়া ফুলছড়ি এলাকায় সামাজিক বনায়নের গাছ নির্বিচারে ধ্বংস করে দেড় শ’ একরের বেশি সরকারী জমি দখল করেছেন ক্ষমতাসীন যুবলীগ নেতার ক্যাডার। বন বিভাগ অসহায় হয়ে পড়েছে। ইসলামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ওসমান আলী মোরশেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবছারের নেতৃত্বে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল নামধারী কিছু দখলবাজসহ হেডম্যান, ভিলেজার এবং সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা কোটি কোটি টাকা মূল্যের বনজ সম্পদ জবর দখল করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে উত্তর বন বিভাগের ফুলছড়ি বনবিটের অধীনে বিভিন্ন অর্থবছরে বনভূমিতে সরকারী এবং বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এসব বনায়ন সৃজন করা হয়েছিল। বনবিভাগ অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও প্রতিবারই ফের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে জবর দখলকারীরা। সশস্ত্র পাহারায় রাখতে সন্ধ্যার পর অবৈধ স্থাপনাগুলো অবৈধ অস্ত্রে ভরে যায়। বনকর্মীরা প্রাণের ভয়ে কাছেও যেতে পারছে না বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, দখলবাজদের অনেকে বিভিন্ন লোকদের কাছে প্লট আকারে বিক্রি করে দিয়েছে। ফুলছড়ি বনবিটের অধীনে ২০০৪-৫, ২০০৬-০৭ ও ২০১৮-১৯ সালে শত শত একর বনভূমিতে বনায়ন সৃজন করা হয়। এসব বনায়ন নিশ্চিহ্ন করে সেখানে গড়ে তুলেছে বসতবাড়ি। তবে বনভূমি বেহাত হওয়ার পেছনে ফুলছড়ি বনবিট কর্মকর্তা ও হেডম্যানের বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই। অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে বনায়ন ও বনভূমি ধ্বংস করেছে তারা। বনবিভাগ ২০১৯ সালে ২৬ জুন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল। কিন্তু সেখানে পুনরায় দখলবাজ চক্র অবৈধভাবে স্থাপনা গড়ে তুলেছে। গত ৯ অক্টোবর সহকারী বনসংরক্ষক সোহেল রানার নেতৃত্বে বনবিভাগ অভিযান চালিয়ে বেশকিছু পলিথিন ও বাঁশের খুঁটি নিয়ে তৈরি স্থাপনা উচ্ছেদ করে গুঁড়িয়ে দেয়। কিন্তু যুবলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে প্রতিদিনই নতুন নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। সূত্রে জানা যায়, জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালে ফুলছড়ি বনবিটের অধীনে ফুলছড়ি জুম নগরের আশপাশে এলাকায় চন্দ্রবনিয়া ও বউলামানির শিয়া এলাকায় ৫০ হেক্টর সামাজিক বনায়ন সৃজন করে সেই সময়ে তা জামায়াত-বিএনপিপন্থীদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। ৪-৫ বছর যেতে না যেতেই ওইসব বনভূমির মধ্যে ৪০ হেক্টর বনায়নের গাছ অংশীদাররা সাবাড় করে তা বিক্রি করে দেয়। পরে বনভূমিও শতক হিসেবে বিক্রি করায় সেখানে কয়েক শ’ অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। অবশিষ্ট ১০ হেক্টর সামাজিক বনায়নের কিছু গাছ ছিল। পরে সেগুলো কেটে ২০১৭-১৮ সালে ১০ হেক্টর বনায়ন সৃজন করা হয়। এই ১০ হেক্টর বনায়নের মধ্যে অন্তত ৪ হেক্টরে ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে গত বছর। এছাড়া ২০১৭-১৮ সালে সৃজিত ১০ হেক্টর বনায়নের জন্য এখনও উপকারভোগী নিয়োগ করা হয়নি। বর্তমানে অবশিষ্ট ৬ হেক্টর বনভূমি যুবলীগের সভাপতি ওসমান ও সাধারণ সম্পাদক আবছারের নেতৃত্বে হেডম্যান আবদু শুক্কুরের ভাই যুবদল নেতা আবদুল মজিদ, যুবদল থেকে যুবলীগে অনুপ্রবেশকারী সবুজ, এহেসান, ডাকাত জসিম, ইসলামপুর বিএনপি সভাপতি মনজুর আলম, যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন ও শিবির নেতারা দখল করে সেখানে ঘর নির্মাণ করেছে। এতে বনভূমি দখলকারী ১৭০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ১৯ যুবলীগ, ২৬ যুবদল, ছাত্রদল, ২৪ ছাত্রশিবিরসহ অন্য রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া বিএনপির ৪৮ জন, ভিলেজার ২৫ জন, হেডম্যান একজনসহ প্রভাবশালী আরও ৩৫ দখলদারের নাম তালিকায় আছে। বনবিট কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও তোলা হয়েছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) তোহিদুল ইসলাম বলেন, যারা অবৈধভাবে বনায়ন ও বনভূমি দখল করেছেন, তারা যে দলেরই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×