ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক পরিচয়ে দেড়’শ একর বনায়ন দখল শত শত স্থাপনা নির্মাণ

কক্সবাজারের ফুলছড়িতে সরকারী বনায়ন নিশ্চিহ্ন

প্রকাশিত: ২০:১৯, ১৮ অক্টোবর ২০২০

কক্সবাজারের ফুলছড়িতে সরকারী বনায়ন নিশ্চিহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জ চকরিয়া ফুলছড়ি এলাকায় সামাজিক বনায়নের গাছ নির্বিচারে ধ্বংস করে দেড়’শ একরের বেশি সরকারি জমি দখল করেছেন ক্ষমতাসীন যুবলীগ নেতার ক্যাডারা। বনবিভাগ অসহায় হয়ে পড়েছে। ইসলামপুর ইউনিয়ন যুূবলীগের সভাপতি ওসমান আলী মোরশেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবছারের নেতৃত্বে নেতৃত্বে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল নামধারী কিছু দখলবাজসহ হেডম্যান, ভিলেজার এবং সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা কোটি কোটি টাকা মূল্যের বনজ সম্পদ জবরদখল করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি বনবিটের অধীনে বিভিন্ন অর্থ বছরে বনভূমিতে সরকারী এবং বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এসব বনায়ন সৃজন করা হয়েছিল। বনবিভাগ অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও প্রতিবারই ফের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে জবর দখলকারীরা। সশস্ত্র পাহারায় রাখতে সন্ধ্যার পর অবৈধ স্থাপনাগুলো অবৈধ অস্ত্রে ভরে যায়। বনকর্মীরা প্রাণের ভয়ে কাছেও যেতে পারছেনা বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, দখলবাজদের অনেকে বিভিন্ন লোকদের কাছে প্লট আকারে বিক্রি করে দিয়েছে। ফুলছড়ি বনবিটের অধীনে ২০০৪-৫, ২০০৬-৭ ও ২০১৮-১৯ সালে শতশত একর বনভুমিতে বনায়ন সৃজন করা হয়। এসব বনায়ন নিচিহ্ন করে সেখানে গড়ে তুলেছে বসতবাড়ি। তবে বনভুমি বেহাত হওয়ার পেছনে ফুলছড়ি বনবিট কর্মকর্তা ও হেডম্যানের বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই। অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে বনায়ন ও বনভুমি ধ্বংস করেছে তারা। বনবিভাগ ২০১৯ সালে ২৬ জুন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল। কিন্ত সেখানে পুনরায় দখলবাজ চক্র অবৈধভাবে স্থাপনা গড়ে তুলেছে। গত ৯ অক্টোবর সহকারী বনসংরক্ষক সোহেল রানার নেতৃত্বে বনবিভাগ অভিযান চালিয়ে বেশকিছু পলিথিন ও বাঁশের খুঁটি নিয়ে তৈরি স্থাপনা উচ্ছেদ করে গুড়িয়ে দেয়। কিন্তু যুবলীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে প্রতি দিনই নতুন নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। সুত্রে জানা যায়, জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালে ফুলছড়ি বনবিটের অধীনে ফুলছড়ি জুম নগরের আশপাশ এলাকায় চন্দ্রবনিয়া ও বউ লামানির শিয়া এলাকায় ৫০ হেক্টর সামাজিক বনায়ন সৃজন করে সেই সময়ে তা জামায়াত-বিএনপি পন্থীদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। ৪-৫ বছর যেতে না যেতেই ওইসব বনভুমির মধ্যে ৪০ হেক্টর বনায়নের গাছ অংশীদাররা সাবাড় করে তা বিক্রি করে দেয়। পরে বনভুমিও শতক হিসেবে বিক্রি করায় সেখানে কয়েক’শ অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে। অবশিষ্ট ১০ হেক্টর সামাজিক বনায়নের কিছু গাছ ছিল। পরে সেগুলো কেটে ২০১৭-১৮ সালে ১০ হেক্টর বনায়ন সৃজন করা হয়। এই ১০ হেক্টর বনায়নের মধ্যে অন্তত ৪ হেক্টরে ঘরবাড়ি তৈরী হয়েছে গত বছর। এছাড়া ২০১৭-১৮ সালে সৃজিত ১০ হেক্টর বনায়নের জন্য এখনও উপকারভোগী নিয়োগ করা হয়নি। বর্তমানে অবশিষ্ট ৬ হেক্টর বনবভুমি যুূবলীগের সভাপতি ওসমান ও সাধারণ সম্পাদক আবছারের নেতৃত্বে হেডম্যান আবদু শুক্কুরের ভাই যুবদল নেতা আবদুল মজিদ, যুবদল থেকে যুবলীগে অনুপ্রবেশকারী সবুজ, এহেসান, ডাকাত জসিম, ইসলামপুর বিএনপি সভাপতি মনজুর আলম, যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন ও শিবির নেতারা দখল করে সেখানে ঘর নির্মাণ করেছে। নির্বিচারে কেটে ফেলেছে বনায়নের চারা গাছ। ফুলছড়ি বনবিটের বিভিন্ন সময়ে বনভুমি দখল, প্লট আকারে বিক্রিকারীদের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন স্থানীয় পরিবেশবাদীদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা রয়েছে। এতে বনভুমি দখলকারী ১৭০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ১৯ জন যুবলীগ, ২৬ জন যুবদল, ছাত্র দল, ২৪ জন ছাত্রশিবিরসহ অন্য রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া বিএনপির ৪৮ জন, ভিলেজার ২৫ জন, হেডম্যান একজনসহ প্রভাবশালী আরও ৩৫ জন দখলদারের নাম তালিকায় আছে। বনবিট কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও তোলা হয়েছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) তোহিদুল ইসলাম বলেন, যারা অবৈধভাবে বনায়ন ও বনভুমি দখল করেছেন, তারা যে দলেরই হোক না কেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উচ্ছেদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
×