ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ২০:০২, ১৯ অক্টোবর ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের হুঁশিয়ারি

যুক্তরাষ্ট্রে চীনা নাগরিকদের আটক এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় ওয়াশিংটনকে হুঁশিয়ারি করেছে বেজিং। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা নাগরিকদের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসন যে ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, এর জবাবে চীনও তাদের দেশে অবস্থানকারী মার্কিনীদের আটক করতে পারে। এদিকে হংকং থেকে পালিয়ে যাওয়া বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের কানাডায় আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে কানাডায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত কং পেইউ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, হংকংয়ে চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কানাডা নিজের অবস্থান পাল্টাবে না। তিনি বলেন, ‘কানাডা চীনের হুমকিকে ভয় পায় না।’ ওয়াশিংটন পোস্ট ও আলজাজিরা। যুক্তরাষ্ট্রে আটক হওয়া ওই চীনা নাগরিকদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন সন্দেহে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা দ্য ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। তাদের বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগও আনা হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় মার্কিন সরকারের কর্মকর্তাদের কয়েক দফা হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। ওই চীনা নাগরিকদের বিরুদ্ধে আনা মামলা মার্কিন আদালতে সমাপ্তি ঘটানোর বার্তা দিয়েছে বেজিং। না হলে চীনে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধেও আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনার হুমকি দেয়া হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর চীন ভ্রমণে সতর্কতা জারি করে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, চীন সরকার নির্বিচারে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের আটক করছে। মার্কিন নাগরিক এবং অন্য দেশের নাগরিকদের আটকের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে বলে চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য করা হয়নি। চীনের বিরুদ্ধে বরাবরই মার্কিন প্রযুক্তি চুরিসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক সময়ে দেশ দুটির মধ্যে বৈরী সম্পর্ক বিদ্যমান। গত জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানায়, তারা তিন চীনা নাগরিককে আটক করেছে। চীনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকলেও তারা তাদের সেই পরিচয় গোপন করে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেছে বলে দাবি করে এফবিআই। মার্কিন কৌঁসুলিদের দাবি, সামরিক বিজ্ঞানীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করানোর পরিকল্পনা অনেক দিন ধরেই চীনের রয়েছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চীনা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পরিচয় গোপন করে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। যুক্তরাষ্ট্র অনেকদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, চীন তাদের বিভিন্ন সাইবার স্পেসে আক্রমণ করে তথ্য হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। মার্কিন সামরিকসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরির চেষ্টা করছে এবং বিভিন্ন দাফতরিক কার্যক্রমের উপর অবৈধ নজরদারি করছে। কিন্তু এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে চীন। মার্কিন বিচার বিভাগ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ২৫ শহরে পরিচয় গোপন করে চীনের সেনা সদস্যরা অবস্থান করছেন এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বিভিন্নভাবে নজরদারি করছেন। চীনে মানবাধিকার রক্ষায় কানাডার ভূমিকা অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানিয়ে দিয়ে ট্রুডো বলেন, ‘আমরা বিশ্বজুড়ে মানুষের অধিকার রক্ষায় সব সময় সরব। আমরা যে কোন দেশেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেব। চীনে উইঘুরদের বিরুদ্ধে দেশটির সরকারী অবস্থান, হংকংয়ে চীনের ভূমিকা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। আমরা তা সমর্থন করি না।’ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে কানাডা ও চীনের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে। কানাডার দুটি সংবাদপত্র দ্য গ্লোব ও মেইল সম্প্রতি হংকং ছেড়ে যাওয়া কয়েকজন গণতন্ত্রপন্থীকে কানাডা রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে বলে জানায়। কানাডার তরফ থেকে অবশ্য এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা হয়নি।
×