ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ১৯ অক্টোবর ২০২০

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ক্রমশই সর্বত্র ব্যাপকতা লাভ করছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, পাঁচ সাত বছর আগে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগত যা ছিল, এখন আর তা নেই। এখন ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগতে প্রবেশের জন্য আর হেডসেটের প্রয়োজন পড়ে না। এ এক অসাধারণ পরিবর্তন বা অগ্রগতি। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) কি? সেটা হলো আমাদের কম্পিউটারের মাধমে এমন সব জিনিসের দর্শন ও অভিজ্ঞতা লাভ করা, সেগুলোর বাস্তবে অস্তিত্ব নেই। আপনি সম্ভবত মঙ্গলগ্রহে কখনই যাবেন না। কখনই ডলফিনের সঙ্গে সাঁতার কাটবেন না, অলিম্পিকে ১০০ মিটারের দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন না কিংব মাইলস বা জেমসের সঙ্গে স্টেজে দাঁড়িয়ে গান গাইবেন না। কিন্তু ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে আপনি এসব কিছু তো বটেই, আরও অনেক কিছুই করতে পারবেন এবং তার জন্য আপনার বাড়ির বাইরে যাওয়ারও দরকার হবে না। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রকৃত বাস্তবতা নয়। অর্থাৎ, সত্যিকারের যে জগতে আমরা বাস করি সে জগত নয়। বরং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হলো উচ্চ শক্তির কম্পিউটার এবং হেডসেট ও দস্তানার মতো সরঞ্জাম ব্যবহার করে আমাদের বাস্তব জগতের খ-িত অংশ অনুকরণ করা কিংবা সম্পূর্ণ কল্পিত জগত রচনা করা। এখন অবশ্য আবার হেডসেটও লাগে না। গেম ও বিনোদন ছাড়াও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার বেশ আগে থেকেই হয়ে আসছে বিমানের পাইলটদের ও সার্জনদের ট্রেনিং দেয়ার কাজে এবং বিজ্ঞানীদের প্রোটিন মলিকুলের কাঠামোর মতো জটিল সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অর্থ বাস্তব জগত থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে তার পরিবর্তে কম্পিউটারের সৃষ্ট এক বিকল্প জগত রচনা করা। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বদৌলতে আপনি ভিনসেন্ট ভ্যানগগের চিত্রকলা দেখার সময় দেড় শ’ বছর আগের ফ্রান্সের দৃশ্য ও ধ্বনির অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন। ক্লাসিক্যাল মিউজিক তন্ময় হয়ে শুনতে চোখ জোড়া মুদ্রিত করে এমন কোন কিছুর কল্পনা করতে শুরু করুন যার বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই- তাহলে সেটাকে কি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বলা যাবে না? মনে করুন কোন একটা বই পড়তে পড়তে কিংবা মুভি দেখতে দেখতে তার মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন। সেটা কি এক ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নয়? না, বই, মুভি, চিত্রকলা বা কোন একটা সঙ্গীত ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মতো একই জিনিস নয়। কেন নয় তা বোঝার জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বিষয়টিকে সুস্পষ্টরূপে অনুধাবন করা দরকার। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ত্রিমাসিক বা থ্রিডি কম্পিউটারের সাহায্যে এমন এক বিশ্বাসযোগ্য, মিথষ্ক্রিয়াযুক্ত ভুবন রচনা করা হয় সেখানে আপনার অনুভব হতে পারে যে, আপনি মানসিক ও শারীরিক উভয় দিক দিয়ে সত্যি সত্যি সেই জগতে বসে গেছেন। কথাটাকে ভিন্নভাবে বললে বলতে হয় যে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মূলত হলো বিশ্বাসযোগ্য। অর্থাৎ, আপনাকে সত্যিই অনুভব করতে হবে যে আপনি মঙ্গলগ্রহে হোক আর সমুদ্র তলদেশে হোক একটা ভার্চুয়াল জগতে আছেন এবং সেই বিশ্বাসটা আপনাকে ধরে রাখতে হবে। নইলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইলিউশনটা অদৃশ্য হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত, এটা হতে হবে মিথষ্ক্রিয় অর্থাৎ এর পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বা প্রভাব থাকতে হবে। আপনি যখন চারদিকে ঘুরে বেড়াবেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগতকেও আপনার সঙ্গে সঙ্গে চলতে হবে। আপনি হয়ত একটা থ্রিডি মুভি দেখছেন। সেখানে আপনাকে হয়ত বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চাঁদে অথবা সাগরতলে। কিন্তু তার পরও সেটা ইন্টারএ্যাকটিভ নাও হতে পারে এবং সেই কারণে সেটা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নাও হতে পারে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগত হতে হলে থ্রিডি কম্পিউটার গ্রাফিক্স ও বিকল্প জগত হয় যা কিনা আপনার গমনাগমনের সঙ্গে সঙ্গে সে জগতেরও পরিবর্তন হয়। তা ছাড়া বিশ্বাসযোগ্য ও মিথষ্ক্রিয় হতে হলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগতটা এমন হতে হবে যাতে আপনার দেহ ও মন তার সঙ্গে মিশে লীন হয়ে যায়। শিল্পীর আঁকা যুদ্ধের ছবি থেকে আপনি সংঘর্ষের সামান্য কিছু ধারণা পেতে পারেন। কিন্তু সেই ছবি কখনই আপনাকে যুদ্ধের দৃশ্য, ধ্বনি, ঘ্রাণ, স্বাদ, অনুভূতি জানিয়ে দিতে পারবে না। আপনি আপনার পিসিতে ফ্লাইট সিমুলেটর গেম খেলতে এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতি বাস্তবানুগ ইন্টারএ্যাকটিভ অভিজ্ঞতায় হারিয়ে যেতে পারেন। প্লেনটি উড়ে চলার সময় দৃশ্যপটের প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটে চলবে। অথচ আপনি প্লেন চালাচ্ছেন না। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, বই পড়া, চিত্রকর্ম দেখা, ক্লাসিক্যাল মিউজিক শোনা কিনা মুভি দেখা কেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নয়। এসবই আরেকটি বাস্তবতার খ-িত অংশের ধারণা দেয়। কিন্তু কোনটাই ইন্টারএ্যাকটিভ, অন্বেষণযোগ্য কিংবা পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য নয়। ধরুন, সিনেমা হলে বসে পর্দায় মঙ্গলগ্রহের বিশাল ছবি দেখছেন। এমন সময় সহসা আপনার মাথাটা বেশ খানিকটা ঘুরিয়ে নিলেন এবং তখনই দেখতে ও বুঝতে পারলেন যে, আপনি আসলে পৃথিবীতেই আছেন। আপনার সেই ইলিউশন মুহূর্তেই দূর হয়ে যাবে। অন্যদিকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সম্পূর্ণ আলাদা। ওটা আপনাকে ভাবতে বাধ্য করবে যে, আপনি আসলে সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য এক ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে রয়েছেন, যার সঙ্গে আপনি আংশিকভাবে কিংবা পুরোপুরি মিশে গেছেন। কোভিড-১৯ এর কারণে লকডাউনের সময় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগের ব্যাপকতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। অন্য মিউজিশিয়ানরা যখন নিজেদের সোফায় এলিয়ে দিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন, তখন আমেরিকান হিপ হপ সঙ্গীত তারকা একটা কনসার্টের আয়োজন করেন বাস্তবে নয়, ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে। ২৩ এপ্রিল ফোর্টনাইট নামক এক ভিডিও গেমের ত্রিমাত্রিক জগতের আওতায় প্রায় সোয়া কোটি দর্শক-শ্রোতা অনলাইনে সরাসরি এই কনসার্ট উপভোগ করেছে। স্টেজে বিস্ফোরণের রূপ নিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায় এবং স্কট এক বিশালদেহীর রূপ ধারণ করে সেখানে আবির্ভূত হয়ে পরাবাস্তববাদী দৃশ্যপটের মধ্যে নৃত্য পরিবেশনা শুরু করেন। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি নিওন সাইবর্গে রূপান্তরিত হয়ে যান। এরপর পৃথিবীটা জলরাশিতে পূর্ণ হয়ে গেলে স্কট গভীর সমুদ্রের ডুবুরিতে পরিণত হন এবং দর্শকরাও তার বিশাল দেহের চারপাশে সাঁতার কাটতে শুরু করে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে শরীর ও মন দুই-ই মিশে লীন হয়ে যাওয়ার এ এক যথার্থ দৃষ্টান্ত। এ বছর আমেরিকায় করোনা মহামারীর কারণে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান বাতিল করা হলেও কেউ কেউ আবার ‘রোবলোক্স’ ও ‘মাইনক্র্যাফট’ নামক দুটি জনপ্রিয় গেমের ভার্চুয়াল জগতকে গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানের বিকল্প ভেন্যুতে পরিণত করে। গেম দুটি বস্তুতপক্ষে ডিজিটাল কনস্ট্রাকশন সেট। বার্কলেস্থ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এই গেমের ভেতর তাদের ক্যাম্পাসকে পুনর্নির্মিত করে গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। চ্যান্সেলর ও ভাইস চ্যান্সেলরদের বক্তৃতার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং শেষ হয় সদ্য গ্রাজুয়েট হওয়া উৎফুল্ল ছাত্রদের ভার্চুয়াল হ্যাট আকাশে ছুড়ে মারার মধ্য দিয়ে। করোনা মহামারীর বেশ আগে থেকেই এসব প্রযুক্তির অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু সেগুলোর ব্যাপক ব্যবহার এই করোনা সঙ্কটের কারণে ত্বরান্বিত হয়েছে। আর একবার ব্যাপক ব্যবহার যখন শুরু হয়েছে তখন আর সেই অবস্থা থেকে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। এ এক অসাধারণ পরিবর্তন। কয়েক দশক ধরে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রবক্তারা বিচিত্র দর্শনের এবং ব্যয়বহুল হেড সেট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আসছিল। এসব হেড সেট পরিধানকারীর দর্শন ক্ষেত্রকে কম্পিউটার সৃষ্ট ইমেজ দিয়ে ভরে দেয়। হেডসেট ধারণ করে ভার্চুয়াল জগতে চলে যাওয়ার ব্যাপারটা বেশ আগে থেকেই বইপত্রে বর্ণিত আছে। ফেসবুকের মালিক মাইক জাকারবার্গ বলেছেন, প্রযুক্তি যত সস্তা হচ্ছে এবং সক্ষমতা বাড়ছে তাতে স্মার্টফোনের পর কম্পিউটিংয়ের পরবর্তী প্লাটফর্ম হবে হেডসেটবিহীন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। তবে হেডসেট ব্যবহারের ব্যাপারটা ঐচ্ছিক। আপনি ব্যবহার করতেও পারেন, না-ও করতে পারেন। কম্পিউটার সৃষ্ট বাস্তবতা শুধু ভিডিও গেম বা প্রপার্টি ওয়েবাসইটের মতো স্থানেই নয়, ইতোমধ্যে সর্বত্রই এর অস্তিত্ব দেখা দিয়েছে। এগুলো আছে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র উৎপাদনের দৃশ্যপটের আড়ালে, ব্যবসায় ও প্রশিক্ষণের বিস্তারিত জগত সিমুলেশনের এবং স্বয়ংক্রিয় গাড়িকে কিভাবে চলতে হয় তা শিখিয়ে দেয়ার কাজে। খেলাধুলার ঘটনাবলী টেলিভিশনে দেখানোর সময় গ্রাফিক্সের কাজ এমনভাবে সুপার ইম্পোজ করা হয় যে, তার ফলে বাস্তব জগত ও ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে পার্থক্য রেখা মুছে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল জগত জনসাধারণের জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে তারা তা উপলব্ধি করুক আর নাই করুক। কিছু কিছু শিল্পে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রযুক্তি সঠিক মূল্য ও সক্ষমতায় পৌঁছলে অনেক কাজে দেবে এমন লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে। ২০১৯ সালে পিডব্লিউসি নামক একটি কনসালটেন্সি ফার্ম ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি স্বাস্থ্য পরিচর্যা, প্রকৌশল, পণ্যের উন্নয়ন, লজিস্টিকস, রিটেইল ও বিনোদনের মতো ক্ষেত্রে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে দেড় ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করবে, এমন সম্ভাবনা যথেষ্ট মাত্রায় রয়েছে। তথ্যের প্রদর্শন যেহেতু আর ডেস্কটপ কিংবা মোবাইল ডিভাইসের স্ক্রিনের আকারের দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরো দৃষ্টিক্ষেত্রকে পূর্ণ করে দিতে পারে, তাই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে কম্পিউটারের সঙ্গে ইন্টারএ্যাক্ট করার নতুন ও আরও উদ্ভাবনীমূলক উপায় সৃষ্টি হচ্ছে। গোল্ডম্যান সাক্সের হিসেবে এই প্রযুক্তির বাজার ২০২৫ সালের মধ্যে ৯৫০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। অবশ্য এমন পূর্বাভাস করোনার কারণে ভার্চুয়াল পরিবেশ কাজ করার আগ্রহ বেড়ে যাওয়ার আগেই করা হয়েছিল। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির উন্নয়নে অগ্রগতির ব্যাপারটি স্মার্টফোন শিল্পের হার্ডওয়্যার এবং ভিডিও গেম শিল্পের সফটওয়্যারের দ্বারা চালিত হচ্ছে। উজ্জ্বল রঙিন স্ক্রিন ও মোশন সেন্সর সংবলিত আধুনিক স্মার্ট ফোনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই থাকে। বস্তুতপক্সে এমন একটি ফোন কয়েকটি লেন্সসহ কার্ডবোর্ড ভিউওয়ারে বসিয়ে দেয়া হলে সেটাই সাধারণ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির হেডসেট হিসেবে কাজ করতে পারবে। কোন কোন কোম্পানি আরও উন্নত মোশন সেন্সর কাজে লাগিয়ে থাকে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একই উপাদান ব্যবহার করতে পারে। স্মার্ট ফোন তার ক্যামেরা থেকে ইমেজগুলোর ভার্চুয়াল আইটেমগুলো বেছে নিয়ে সরবরাহ করতে পারে। এর সবচেয়ে বিখ্যাত দৃষ্টান্ত হলো ‘পোকিমন গো’ নামের একটি ভিডিও গেম, যা বাস্তব জগতের চারপাশে লুকিয়ে থাকা ভার্চুয়াল মনস্টারগুলোকে ধরে রাখে। সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে ভিডিও গেমগুলো যেভাবে নির্মিত হয়, তাতে সংঘটিত পরিবর্তন থেকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি লাভবান হয়েছে। এই গেমগুলোতে এখন আর পিক্সেলযুক্ত মনস্টার নেই, যেগুলো দ্বিমাত্রিক গ্রিডের ওপর দিয়ে চলে। এই গেমগুলো বরং বাস্তব জগতের অত্যাধুনিক সিমুলেশন কিংবা তার অন্তত আংশিক সংস্করণ। লাখ লাখ কোড বা সাঙ্কেতিক চিহ্নের রেখামালা প্লেয়ারের বাটন প্রেসকে পর্দার গায়ে সিনেম্যাটিক ইমেজে পরিণত করে। যে সফটওয়্যার এই কাজটা করে সেটি ‘গেম ইঞ্জিন’ নামে পরিচিত। এই গেম ইঞ্জিনই ভার্চুয়াল জগতের নিয়মকানুন ঠিক করে ও চালায়। এই গেম ইঞ্জিনের চরিত্রগুলো দেয়াল ভেদ করে হাঁটা-চলা করা কিংবা মেঝে ভেদ করে নিচে পড়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকে, পানির প্রবাহ ঘটে স্বাভাবিক উপায়ে এবং বস্তুসমূহের মধ্যকার মিথষ্ক্রিয়া বাস্তবানুগভাবে এবং পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রানুযায়ী ঘটে। এই গেম ইঞ্জিন দৃশ্যপটের লাইটিং, শ্যাডো এবং বিভিন্ন বস্তুর টেক্সচার ও প্রতিসরণতা হিসেবে নিয়ে নানা ধরনের গ্রাফিকস হাজির করে। ভার্চুয়াল জগতকে সিমুলেট করার কাজটা বর্তমান গেম ইঞ্জিনকে দিয়ে করার ফলে ছোট-বড় সব ধরনের ডেভেলপারের পক্ষে এখন গেম ডিজাইনিংয়ের সৃজনশীল বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর বর্ণনাযোগ্য চরিত্র, এ্যাসেট ও সার্বিক চেহারার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটা অবশ্য অন্যান্য সৃজনশীল শিল্পের পরিচিত শ্রম বিভাগের মতো ব্যাপার। স্টুডিওগুলো মুভি তৈরির সময় তাদের নিজস্ব ক্যামেরা, লাইট বা এডিটিং সফটওয়্যার তৈরি করে না। তারা এসব সরঞ্জাম কিনে নেয় এবং নিজেদের কাজের সৃজনশীল দিকের ওপর সমস্ত শক্তি নিয়োজিত করে। গেম ও সেগুলোর ইঞ্জিনকে যখন একবার পৃথক করা হলো তখন গেমের জগতের বাইরের অন্য ব্যক্তিরা অনুধাবন করল যে, তারাও এসব ইঞ্জিন দিয়ে ইন্টারএ্যাকভি থ্রিডি অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করতে পারে। এভাবেই শুরু হলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অভিজ্ঞতা। সুতরাং ভার্চুয়াল জগত সৃষ্টির জন্য গেম ইঞ্জিন ছিল একান্ত অপরিহার্য উপাদান। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×