ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষুধাসূচকে এগিয়ে-

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ১৯ অক্টোবর ২০২০

ক্ষুধাসূচকে এগিয়ে-

বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২০ উপলক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবিশেষ জোর দিয়ে বলেছেন, দেশে কেউ না খেয়ে থাকবে না। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর ভয়াবহ সংক্রমণের প্রাক্কালেও প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছিলেন। অকপটে স্বীকার করতে হবে যে, সরকার তার কথা রেখেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও একটানা ৬৬ দিন লকডাউন তথা শাটডাউনে থাকলেও দেশে কেউ না খেয়ে থাকেনি। সত্য বটে, এ সময়ে দেশে সাধারণ মানুষ তথা খেটেখাওয়া দিনমজুরদের দৈনন্দিন আয়-রোজগার কমেছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে ফিরে গিয়েছেন গ্রামে। তবে দেশের কোথাও খাদ্য সঙ্কট ও খাদ্যাভাব হয়নি। সরকার ত্রাণ তৎপরতা বাড়িয়েছে দেশের সর্বত্র। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় নগদ প্রণোদনাসহ নিত্যপণ্য পৌঁছে দিয়েছে গরিবের ঘরে ঘরে, যা অব্যাহত ছিল অতিবৃষ্টি ও বন্যার সময়েও। হাওড়ে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে, যা অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে সর্বস্তরের মানুষের জন্য। আমদানি-রফতানি কার্যত বন্ধ থাকলেও অভ্যন্তরীণ মজুদ থেকে চাল ও আটার সঙ্গে অন্যবিধ নিত্যপণ্যের জোগান দেয়া সম্ভব হয়েছে। কৃষকদের ধান-চালের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার জন্য ক্রয়মূল্য বাড়ানোর পাশাপাশি মজুদও বাড়িয়েছে বেশি পরিমাণে কিনে, যাতে গড়ে তোলা যায় খাদ্য নিরাপত্তা। এরই সুফল পেয়েছে সর্বস্তরের মানুষ। যে কারণে করোনাকালে বিশ্বের অনেক দেশে লকডাউন প্রত্যাহারের দাবিসহ দোকানপাট, কল-কারখানা খুলে দেয়ার জন্য ক্ষোভ-বিক্ষোভ-ভাংচুর-ধর্মঘট হলেও বাংলাদেশে সেসব ছিল অনুপস্থিত। খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের এই সময়োচিত হস্তক্ষেপ ও নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সহজেই এড়ানো সম্ভব হয়েছে দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি। এরই প্রতিফলন ঘটেছে কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও ওয়েল্ট হিলপের যৌথভাবে প্রণীত গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স তথা জিএইচআইয়ের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে। তাতে দেখা যায়, বিশ্ব ক্ষুধাসূচকে ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৫তম। গত বছরের চেয়ে ১৩ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। এই সূচকে ভারতের অবস্থান ৯৪তম এবং পাকিস্তানের ৮৮তম। অর্থাৎ, ক্ষুধা মেটানোর ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ, যা বর্তমান সরকারের জন্য একটি ইতিবাচক অর্জন। তবে ক্ষুধা মেটানোর পাশাপাশি বাংলাদেশকে এখন জোর দিতে হবে পুষ্টিপূরণ অর্থাৎ, মাছ-মাংস, ডিম-দুধ, ডাল, মসলা উৎপাদনের দিকে। দেশের করোনা মহামারী পরিস্থিতি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাস্থ্য খাতে সীমিত সম্পদ ও জনবল নিয়েও পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন আন্তরিকতা ও সাহসের সঙ্গে। যে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কম। প্রধানমন্ত্রীর এই সময়োচিত পদক্ষেপ ও বিচক্ষণতা প্রশংসিতও হয়েছে বহির্বিশ্বে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সবকিছু ছাপিয়ে সব কিছুর উর্ধে যে বিষয়টি দৃশ্যমান, তা হলো অত্যন্ত দক্ষতা ও আস্থার সঙ্গে অর্থনীতি সামলানোসহ খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি। সদ্য পাসকৃত জাতীয় বাজেটে কৃষি খাতে ব্যাপক ভর্তুকি, প্রণোদনা ও স্বল্প সুদে ঋণ সহায়ক কর্মসূচী রাখা হয়েছে, যাতে কৃষকসহ গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি খামারি, ফুলফল-সবজি উৎপাদক প্রায় সবাই উপকৃত হয় কমবেশি। সরকার এবার আউশ-আমনেও রেকর্ড পরিমাণ ধান-চাল উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী গভীর প্রত্যয়ে বলেছেন যে, দেশে কেউ না খেয়ে থাকবে না। বরং নিজেরা খেয়ে-পরে যদি সম্ভব হয় তবে অন্যদের সহায়তা করব। করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্বে এটি অবশ্যই ইতিবাচক।
×