ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে স্থাপনা উচ্ছেদে সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০১:৩০, ১৮ অক্টোবর ২০২০

কক্সবাজারে স্থাপনা উচ্ছেদে সংঘর্ষ

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ ব্যবসায়ীদের প্রতিবন্ধকতা, প্রতিরোধের মুখে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী অভিযানে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে সাগরপাড়ের ৫২টি অবৈধ স্থাপনা। যেখানে রয়েছে রেস্তরাঁ, শুঁটকি মাছের দোকান, ট্যুরিজম অফিস, ফার্মেসিসহ ইত্যাদির দোকান। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়ে পাঁচটার দিকে অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবু জাফর রাশেদ। এ ঘটনায় দোকান মালিক সমিতির কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মুকুলসহ ৮ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে গিয়ে ব্যবসায়ী ও পুলিশের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় যমুনা টিভির কক্সবাজার প্রতিনিধি নুরুল করিম রাসেল, সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) পংকজ বড়ুয়া, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনির উল গীয়াস আহত হয়েছেন। ব্যবসায়ীদের নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করে বিকেল সাড়ে তিনটায় এস্কেভেটর দিয়ে যখন উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়, ঠিক তখনই ব্যবসায়ীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কাফন পরে বিক্ষোভ করে তারা। সুগন্ধা সড়কের পূর্ব প্রান্ত থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ থামাতে ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। পুলিশের শক্ত অবস্থান ও প্রতিরোধের মুখে বিক্ষোভকারী দোকানদার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা পিছু হটে। অভিযানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) পংকজ বড়ুয়া, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনির উল গীয়াসের নেতৃত্বাধীন পুলিশ সদস্যরা অংশ গ্রহণ করে। জেলা প্রশাসনের পক্ষে কক্সবাজার সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ শাহরিয়ার মোক্তার ছিলেন। জানা যায়, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্টের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা পুলিশের ওপর হামলে পড়েন। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বুলডোজার দিয়ে দোকানপাটগুলো গুঁড়িয়ে দেয়ার মুহূর্তে এ ঘটনা ঘটে। সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে প্রশাসনের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে ৫২টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলে। এ সময় উচ্ছেদের বিরোধিতা করে ব্যবসায়ীদের তুমুল বিক্ষোভ, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সৈকত পাড়ের সুগন্ধা এলাকাটি। বাধ্য হয়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। এ সময় পর্যটকরা দিগি¦দিক পালিয়ে যায়। জানা যায়, সাগর পাড়ের সুগন্ধা পয়েন্টে সরকারী জায়গা জবর দখল করে কতিপয় ভূমিদস্যু ব্যবসা চালিয়ে আসছে। ওই জায়গায় ৫২টি দোকান-মার্কেট বসিয়ে অবৈধ দখল করে রেখে পর্যটন শহরের সৌন্দর্য বিনষ্ট করে ওই দখলবাজরা। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। সূত্র মতে, উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বৃহস্পতিবারও দখলবাজদের বাধার মুখে ফিরে আসতে বাধ্য হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সৈকত সড়কের কলাতলী সুগন্ধা পয়েন্টে অবৈধ দখলদার ভূমিদস্যু সেই ৫২ জনের স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযানে নামলে বাধা দেয় তারা। প্রশাসনের লোকজন মামামাল সরাতে সময় চাইলে শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। শুক্রবার বিকেলে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত ছিল। এরপর আরও একদিন পর শনিবার বিকেলে উচ্ছেদ অভিযানে নামেন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় অবৈধ দখলকারীরা ভাড়া করা লোকজন নিয়ে এসে প্রশাসনের লোকজনের ওপর হামলে পড়ে। এর আগে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে শুক্রবার সকাল থেকে দোকানের মালামাল সরিয়ে নিয়েছে সুগন্ধা পয়েন্টের ব্যবসায়ীরা। অনেক দোকানের সাইনবোর্ডসহ প্রয়োজনীয় স্থাপনা নিজ দায়িত্বে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেছে তারা। এদিকে ১ অক্টোবর সমুদ্র সৈকতের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টে ৫২ জনের স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্টের দেয়া রুল ও স্থগিতাদেশ খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ভূমি মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল আপীল বেঞ্চ এ রায় দেন।
×