ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হেঁটে ৪০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম

প্রকাশিত: ০০:০০, ১৮ অক্টোবর ২০২০

হেঁটে ৪০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম

গাইবান্ধা টু বাংলাবান্ধা। প্রায় ৪০৪ কিলোমিটারের মতো পথ। হেঁটে অতিক্রম করা চারটে খানি কথা নয়। তবুও এই অসাধ্যকে সাধন করলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহেল রানা সোহান। সাধারণ মানুষকে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করার পাশাপাশি অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, বাল্যবিয়ে এবং শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও অবহেলাজনিত নির্যাতনের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতেই সোহানের এ ভিন্নধর্মী উদ্যোগ। ১৫ সেপ্টেম্বর ভোর ৫টা। গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়ন থেকে একা হেঁটে যাত্রা শুরু করেন সোহান। সারাদিন হেঁটে ৬০.৮৫ কিমি পথ অতিক্রম করে উলিপুরে গিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের সফর। পরদিন ভোরবেলা আবার বেরিয়ে পড়েন হাঁটতে। প্রায় ৬৭.২৩ কিমি এই পথ উলিপুর থেকে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট হয়ে রংপুরের কাউনিয়ায় এসে শেষ হয়। তৃতীয় দিন হেঁটে অতিক্রম করেন কাউনিয়া, সাতমাথা, রংপুর ও বদরগঞ্জের মোট ৪৮.৪৩ কিমি পথ। চতুর্থ দিন এসে পড়েন দিনাজপুর জেলায়। হেঁটে হেঁটে এ জেলার পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর, দিনাজপুর সদর ও বীরগঞ্জের মোট ৬৮.৮৬ কিমি পথ অতিক্রম করেন। পঞ্চম দিন খানসামা উপজেলা হয়ে ঢুকে পড়েন নীলফামারী জেলায়। ৬৫.৪৫ কিলোমিটারের এই পথে অতিক্রম করেন সৈয়দপুর, নীলফামারী সদর ও নীলসাগর। ষষ্ঠ দিনে পা রাখেন ঠাকুরগাঁও জেলায়। ৫০.৪৫ কিলোমিটারের এই পথে অতিক্রম করেন ঠাকুরগাঁও, বোদা, পঞ্চগড়, জগদল। সপ্তম দিনে পঞ্চগড়ের জগদল থেকে ৪৩.৮৫ কিমি পথ অতিক্রম করে সোহান তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে যান। বাংলাবান্ধার জিরো পয়েন্টে এসে তার যাত্রার সমাপ্তি হয়। শুধু হেঁটেই ক্ষান্ত হননি সোহান। ৪০৪ কিলোমিটার হাঁটার পাশাপাশি একটি প্রজেক্টের আওতায় রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে ২০০-এর অধিক গাছ লাগান তিনি। পাশাপাশি একটি এতিমখানায় ৫০ জন শিশুর এবং একটি বৃদ্ধাশ্রমের ৩০ জন বৃদ্ধ মা-বাবার একবেলার খাবারের ব্যবস্থা করেন। রংপুরের ছেলে সোহান। তার গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার নিজদর্পা গ্রামে। গ্রামে বড় হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই বেশ ডানপিটে সোহান। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়েন তিনি। পড়ালেখার পাশাপাশি ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিয়ে কয়েকটি প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও জিতেছেন। সোহান জানান, ‘আমি সবসময় ভাবি এমন কিছু একটা করব যা কেউ কখনও করেনি। আমার স্বপ্ন একদিন হাঁটা পথে বাংলাদেশ জয় করব। টেকনাফ টু তেঁতুলিয়া এই ড্রিম প্রজেক্টের প্রস্তুতি হিসেবে আমি এই ৪০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে অতিক্রম করার চ্যালেঞ্জ হাতে নেই। ‘৪০০ কিমি ওয়াকিং চ্যালেঞ্জ-রংপুর ডিভিশন’ নামক এই মিশনে আমি ৭ দিনে রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার ৪০৪ কিলোমিটার পথ হেঁটেছি। এর জন্য আমি চার মাস ধরে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করি। এর আগে দীর্ঘ সময় ধরে ডিস্টেন্স রানিং আর লং ডিস্টেন্স সাইক্লিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকায় মানসিকভাবে আমি কিছুটা এগিয়ে ছিলাম। অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে সোহান জানান, গত বছর একটি রানিং চ্যালেঞ্জে ১৫ দিনে ৫৮১ কিলোমিটার দৌড়ালেও হাঁটার ক্ষেত্রে এই ৭ দিনে ৪০৪ কিলোমিটারই ছিল এখন পর্যন্ত আমার সর্বোচ্চ। এই প্রজেক্টে ৭ দিনে আমার ব্যক্তিগত খরচ হয়েছে মাত্র ৪৯২ টাকা। এই হাঁটাটি আমি আমার সবচেয়ে প্রিয় ট্রাভেলার ও মাউন্টেনার হেঁটে ৬৪ জেলা ভ্রমণকারী বাবর আলী ভাইকে উৎসর্গ করছি। রোদ বৃষ্টিকে সঙ্গী করে পুরো সফরের সেরা মুহূর্ত ছিল বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট। দুই সারি পাথরবাহী ভারতীয় ট্রাকের মাঝখানে দিয়ে হাঁটছি। নিজের সফলতা থেকে যখন মাত্র কয়েক মিনিট দূরে আমি। আমি এই সফর থেকে অনেক কিছু শিখেছি। নিজের সম্পর্কে জেনেছি অনেক কিছু। প্রচ- মানসিক ও শারীরিক চাপে নিজেকে ধরে রাখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। যা আমার পরবর্তী জীবনে কাজে আসবে। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে এ বছরের শেষদিকে শীতার্ত মানুষের জন্য কিছু করার প্রয়াসে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে হাঁটার পরিকল্পনা রয়েছে।
×