ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফিটনেস ঘাটতি দ্রুতই কাটিয়ে উঠছেন মারজিয়া-নাজমা

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ১৮ অক্টোবর ২০২০

ফিটনেস ঘাটতি দ্রুতই কাটিয়ে উঠছেন মারজিয়া-নাজমা

রুমেল খান ॥ আশ্বিন মাসের ৩০তম দিবস। রাজধানী ঢাকার গত বৃহস্পতিবারের ভোরের প্রহর শেষ হয়ে সকালের আগমনী বার্তা। রাস্তাঘাট একেবারেই ফাঁকা। কোন যানজট নেই। মতিঝিলের বাফুফে ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি ভাড়া করা মিনিবাস। যাত্রা শুরু করল সেটি। রওনা হবার মাত্র মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই গন্তব্যস্থল কমলাপুরে এসে পৌঁছুল বাসটি। ঢুকে পড়ল বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণে। বাস থেকে নেমে এলেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের হেড কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু, মাহমুদা আক্তার অনন্যা, টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলিসহ অন্য কোচিং স্টাফরা। তারপরই একে একে বাস থেকে নেমে এলেন ৩৩ নারী ফুটবলার যাদের নিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা গর্ব করে, ভালবেসে ‘বাংলার বাঘিনী’ বলে ডাকে। ফুটবলাররা একে একে স্টেডিয়ামের ভেতরে মাঠে চলে গেলেন। অবাক কা-, এই সাতসকালেই তাদের অনুশীলন দেখতে হাজির হয়েছে শ’খানেক দর্শক, ভক্ত, সমর্থক, অনুরাগী। মেয়েদের ঘণ্টা দেড়েক অনুশীলন করার পুরো সময়টা তারা গভীর মনোযোগ-আগ্রহ নিয়ে অনুশীলন দেখেছে। মেয়েদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন পুলিশ অবশ্য শঙ্কিত ছিলেন তারা আবেগ সামলাতে না পেরে আবার মাঠে ঢুকে পড়ে মেয়েদের কাছে চলে যায়। এ জন্য তারা দোতলায় গ্যালারিতে অবস্থানরত (নিচতলায় কাউকেই নিরাপত্তার জন্য বসতে দেয়া হয়নি) দর্শকদের উদ্দেশে কয়েকবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণও করেন। কিন্তু আসলে তার দরকার ছিল না। কেননা দর্শকরা ছিলেন আন্তরিক ও শৃঙ্খলাপরায়ণ। আগামী বছরের ১৩-২১ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে এএফসি অনুর্ধ-২০ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব, এছাড়া ৩-১১ এপ্রিল পর্যন্ত হবে এএফসি অনুর্ধ-১৭ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব। এই দুটি টুর্নামেন্টের জন্য কোচ ছোটন ইতোমধ্যেই ৩৩ খেলোয়াড় ক্যাম্পে ডেকেছেন। এর মধ্যে অনুর্ধ-২০ দলে ১৮ এবং অনুর্ধ-১৭ দলে ১৫ জন। এই খেলোয়াড়দের অনুশীলন করাতেই কমলাপুরে নিয়ে আসা। অনুশীলন শেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুই ফুটবলারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাওয়া গেল। ছোটনই ব্যবস্থা করে দেন। কাকতালীয়ভাবে সেই দু’জনই ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কলসিন্দুর গ্রামের বাসিন্দা। উভয়েই অনুর্ধ-২০ দলের খেলোয়াড়। একজন মারজিয়া আক্তার। অন্যজন জান্নাতুল নাজমা। দু’জনই গ্রামের বাড়ি থেকে বাফুফের ক্যাম্পে এসেছেন গত ৮ অক্টোবর। তবে অনুশীলন শুরু হয়েছে এর দুদিন পর থেকে। গত প্রায় সাত মাস ধরে নিজের গ্রামের বাড়িতে থাকার সময় একেবারে বসে ছিলেন না তারা। এ প্রসঙ্গে মারজিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, ‘কোচ ছোটন স্যার নিয়মিত আমাদের সঙ্গে মোবাইলে ও অনলাইনে যোগাযোগ রাখতেন। যেন ফিটনেস ধরে রাখতে পারি, সে জন্য তিনি আমাদের সবসময়ই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন। তবে ঢাকায় থাকতে বাফুফের অধীনে যেভাবে অনুশীলন করেছি, গ্রামের বাড়িতে সেভাবে পারিনি। কারণ দেশে অনুশীলনের জন্য সে রকম সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ ছিল না। এ কারণেই আমাদের ফিটনেসে এখনও কিছুটা ঘাটতি রয়ে গেছে।’ ঢাকায় অনুশীলনের সময় ৩০-৩৫ জনের সঙ্গে দল বেঁধে অনুশীলন করেছেন মারজিয়ারা। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে অনুশীলন করতে হয়েছে ৯-১০ জনের সঙ্গে। ওখানে তার সঙ্গে ছিলেন তহুরা, মারিয়া, সানজিদা, সাজেদা, নাজমা, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সুলতানা, মাহমুদারা। মারজিয়া আরও বলেন, ‘গ্রামে অনুশীলন করে ফিটনেসের ব্যাপারে যতটা পিছিয়ে পড়েছি, ঢাকায় থাকলে অবশ্যই সেটা হতো না। যাহোক এখন আবারও আমরা সবাই একসঙ্গে হয়েছি। আশাকরি আবারও আমরা আগের মতো ফিটনেসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারব।’ ঢাকায় ফিরে প্রথমদিনের অনুশীলন, আর ষষ্ঠদিনের অনুশীলনের মধ্যে কোন পার্থক্য কী বোঝা গেছে? ‘অবশ্যই। প্রথমদিনের অনুশীলনে আমাদের সবারই একটু কষ্ট হয়েছিল। বিশেষ করে দমের। কিন্তু আজ ষষ্ঠদিনের মাথায় আমাদের সেই কষ্টটা আর হচ্ছে না। আপনি নিজেই তো দেখলেন, আজ আমরা কি পরিমাণে দৌড়েছি (১৫ চক্কর)। মোট কথা প্রতিদিনই আমাদের ফিটনেসের একটু একটু করে উন্নতি হচ্ছে।’ পাশেই দাঁড়ানো কোচ ছোটন মারজিয়ার কথাকে সমর্থন করলেন, ‘প্রথমদিন ওরা মাঠে চক্কর দিয়েছিল ৫ বার, আর আজ দিয়েছে এর তিন গুণ, মানে ১৫ বার। কাজেই বুঝতেই পারছেন .. এই পদ্ধতি হচ্ছে কোভিড নাইন্টিনের প্রেক্ষাপটে রেগুলেশন অব ফিফা-এফসি স্টাইল।’ মারজিয়া অনুশীলন করছেন অনুর্ধ-২০ দলের হয়ে। এএফসি অনুর্ধ-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে এই দলের লক্ষ্যটা কী? ‘বিগত আসরগুলোতে আমরা যেভাবে ভাল রেজাল্ট করে চূড়ান্তপর্ব খেলেছিলাম, এবারও সেভাবেই খেলতে চাই। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’ এরপর কথা হয় জান্নাতুল নাজমার সঙ্গে। লকডাউনের মধ্যে বাড়িতে অনুশীলন করা আর ঢাকায় এসে দলের মধ্যে অনুশীলন করার মধ্যে তফাতটা কী? নাজমার ভাষ্য, ‘বিভিন্ন সমস্যার কারণে (বৃষ্টি, বন্যা, অনুপযোগী মাঠ) দেশের বাড়িতে গিয়ে সেভাবে শতভাগ অনুশীলন করতে পারিনি। ফলে ফিটনেসে ঘাটতি রয়ে গেছে। এখন ঢাকায় এসে দলের সঙ্গে অনুশীলন করে সেটার অনেকটাই আমিসহ সবাই কাটিয়ে উঠছি।’
×