ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকায় এবার কুমারী পূজা হবে না

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৮ অক্টোবর ২০২০

ঢাকায় এবার কুমারী পূজা হবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ শারদোৎসবেও এবার ছেদ পড়েছে প্রাণঘাতী করোনার কারণে। দুর্গাপূজা এলেই মাতোয়ারা হয়ে উঠেন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি মানুষ। আর মাত্র পাঁচ দিন পর হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের বছরের বড় প্রাণের উৎসবেও যেন বাদ সেধেছে মহামারী করোনা। প্রতিবছর প্রতিটি ম-পেই আধুনিক থিমের সঙ্গে ডিজিটাল আলোকসজ্জায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠত চারদিক, এবার সেই প্রতিযোগিতাটুকুও নেই। ২৬ দফা দিক-নির্দেশনা মেনেই এবার পালিত হবে দুর্গাপূজা। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ঢাকায় কোন ম-পে এবার অনুষ্ঠিত হবে না কুমারি পূজা। তবে ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গায় কুমারী পূজা হতেও পারে। নির্দেশনা মেনে এবারের পূজায় থাকবেনা পূজার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন। অঞ্জলিদানের সময় ফেসবুক লাইভের সহযোগিতা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংক্রমণ এড়াতে রাত ৯টার মধ্যে পূজাম-প বন্ধ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর আগেই ঘটা করে প্রসাদ বিতরণ এবং দশমীতে শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতির কারণে এবার পূজায় উৎসবের আয়োজন থাকবে না। এ জন্য মন্দিরে আলোকসজ্জা, বিশেষ সাজসজ্জা, মেলা, আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিহার করা হবে। ভক্তিমূলক গান ছাড়া অন্য কোন রকম গান বাজানো যাবে না। কোন আতশবাজি বা পটকার ব্যবহার করা যাবে না। তা ছাড়া এবার জনসমাগম পরিহার করতে মন্দির কর্তৃপক্ষ প্রসাদ বা খিচুড়ি বিতরণ থেকেও বিরত থাকবে। শনিবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত দুর্গাপূজার নানা বিধিনিষেধ তুলে ধরে বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এ বছর ঢাকায় কোন ম-পে কুমারী পূজা উদযাপন করা হবে না। তবে ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গায় কুমারী পূজা হতেও পারে। তিনি জানান, মহামারীর কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে এ বছর বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে। সভায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী বলেন, করোনা মহামারীর কারণে এবার উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করছি। এবার মহালয়া ছিল গত ১৭ সেপ্টেম্বর। কিন্তু পঞ্জিকার হিসেবে এবার আশ্বিন মাস ‘মল মাস’, মানে অশুভ মাস। সে কারণে এবার আশ্বিনে দেবীর পূজা না হয়ে তা হবে কার্তিক মাসে। পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন, পরদিন সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল আচার অনুষ্ঠান। ২৬ অক্টোবর মহাদশমীতে বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে এবার পূজা করতে হবে, সে বিষয়ে গত ২৬ আগস্ট পূজা উদযাপন পরিষদ ২৬ দফা দিক-নির্দেশনা দেয়। পরে ৪ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে পূজাকেন্দ্রিক সভার সিদ্ধান্তের আলোকে অতিরিক্ত ৭ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা মেনে এবারের পূজায় থাকবেনা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন। অঞ্জলিদানের সময় ফেসবুক লাইভের সহযোগিতা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্মল চ্যাটার্জী আরও জানান, যেসব জায়গায় সরাসরি অঞ্জলি হবে, সেখানে ২৫ থেকে ৫০ জনের বেশি আসতে পারবে না। সন্ধ্যা আরতির পর রাত ৯টার মধ্যে অবশ্যই পূজামন্ডপ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি বলেন, সপ্তমী তিথিতে বিশ্ববাসীর করোনামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে করা হবে বিশেষ প্রার্থনা। জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্তের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরের সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন ম-ল, পরিষদের নেতা জে এল ভৌমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, পূরবী মজুমদার, সুভাষ বিশ্বাস প্রমূখ।
×