ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গণফোরামের দুপক্ষের পৃথক পৃথক কর্মসূচী পালন

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১৮ অক্টোবর ২০২০

গণফোরামের দুপক্ষের পৃথক পৃথক কর্মসূচী পালন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একই দিনে পৃথক পৃথক কর্মসূচী পালন করল বিভক্ত গণফোরাম। শনিবার ১০০ গজের কম দূরত্বে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন অংশ জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে আহ্বায়ক কমিটির সভার আয়োজন করে। অপরদিকে জাতীয় প্রেসক্লাসের সামনের সড়কে নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, বলাতকার ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ সমাবেশ করে অপর অংশ। দু’পক্ষের দ্বিধা বিভক্তির মধ্যে একই সময়ে আহূত কর্মসূচী নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে। তৃণমূলে দলকে সংগঠিত করার আহ্বান জানিয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, শুধু চাঁদা আদায় করার জন্য নয়, সত্যিকারের অর্থে পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে হবে। সেজন্য তৃণমূল থেকে দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সভায় বাসা থেকে সংযুক্ত হন সংবিধান বিশেষজ্ঞ কামাল হোসেন। গত ১২ মার্চ গণফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর এই প্রথম সভা হলো। সভায় আহ্বায়ক কমিটির ৭০ সদস্যসহ ১৩০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, আমি বলতে চাই, আপনারা জেলায় জেলায় দলকে সংগঠিত করুন, দলে তরুণ ও নারীদের সংখ্যা বাড়ান। দলের পক্ষ থেকে সারাদেশে সভা-সমাবেশ করুন এবং গণফোরামের নীতি-আদর্শ মানুষের কাছে তুলে ধরুন। দেশের মানুষ সবাই সচেতন হলে আমাদের সংবিধানের যে লক্ষ্যগুলো আছে- গণতন্ত্র, মানুষের মৌলিক অধিকার, সেগুলো মানুষকে বোঝাতে হবে। জনগণকে সচেতন করার পরামর্শ দিয়ে ড. কামাল বলেন, জনগণের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করার মধ্য দিয়ে আমাদের যে আকাক্সিক্ষত দেশ ও সমাজÑ যেখানে কার্যকর গণতন্ত্র থাকবে, মানুষের মধ্যে বৈষম্য থাকবে না, নারী-পুরুষের মধ্যে অধিকারের দিক থেকে বৈষম্য থাকবে না। সেই জিনিসগুলো শুধু কাগজে থাকলে চলবে না, এগুলোকে মানুষের চিন্তাধারার মধ্যে নিয়ে আসা গেলে মানুষ সচেতন হবে। তিনি বলেন, দলের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। এই সদস্য শুধু নামকাওয়াস্তে চাঁদা নেয়ার জন্য নয়, যাদের সদস্য করা হবে তাদের সত্যিকার অর্থে পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা দেখেছি, জেলা নেতারা বলেছেন অনেক মানুষ আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসছেন গণফোরামের সদস্য হওয়ার জন্য। এটা খুব ভাল লক্ষণ। আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোকাব্বির খান এমপির সভাপতিত্বে সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, আওম শফিক উল্লাহ, মহসিন রশিদ, সুরাইয়া বেগম, জানে আলম ও মোশতাক আহমেদ মূল মঞ্চে ছিলেন। সভায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। অপর অংশের কর্মসূচী ॥ একই দিনে জাতীয় প্রেসক্লাবের বাইরে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে গণফোরামের আরেক অংশ। ওই অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, সাবেক নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণফোরামের জাতীয় কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মোস্তফা মহসিন মন্টু। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ, নির্বাহী সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, এ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, মেজর (অব) আসাদুজ্জামান বীরবিক্রম, খান সিদ্দিকুর রহমান, আইয়ুব খান ফারুক, আতাউর রহমান, হাসিব চৌধুরী, মোঃ হেলাল উদ্দিন, এ্যাডভোকেট লতিফুল বারী হামিম প্রমুখ। বাংলাদেশে এখন ধর্ষণের মহোৎসব চলছে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম একাংশের আহ্বায়ক মন্টু বলেন, আজকে সারাদেশে ধর্ষণের মহোৎসব চলছে। এর প্রতিবাদ জানাতে আজকে আমরা এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করছি। আজকে হেরোইনে আসক্ত হয়ে ক্ষমতাসীন যুবকরা যাকে তাকে ধর্ষণ করে যাচ্ছে। দেশে দুর্নীতির হরিলুট চলছে। ধর্ষণ ও হরিলুট যদি শিখতে চাও, দুর্নীতি শিখতে চাও তাহলে বাংলাদেশে আস। দেশব্যাপী নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও বলাতকার যেভাবে বেড়েই চলেছে তা দেশ, জাতি, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, এর জন্য দায়ী চলমান জবাবদিহিতাহীন শাসন ব্যবস্থা, মাদকের সহজলভ্যতা এবং যুবসমাজের ওপর সর্বগ্রাসী ভয়াল থাবা, অবৈধ কালো টাকার ছড়াছড়ি, সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার অবক্ষয়। দেশের চলমান এই নৈরাজ্যজনক অবস্থার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তি, গণতান্ত্রিক সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াস করি। এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আজ মানুষের নিরাপত্তা নেই। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটকারীরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লুণ্ঠনকারী, ধর্ষণকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করুন। এ স্বৈরাচারী মনোভাবাপন্ন সরকার ও চলমান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র, যুব, মহিলা, পেশাজীবীসহ সকল সচেতন নাগরিককে সোচ্চার হতে এবং গণফোরামের এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, চলমান সংসদ ব্যর্থ। রাতের আঁধারে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নির্বাচিত সাংসদরা এদেশের নির্যাতিত-নিপীড়িত মা-বোনের কান্না শুনতে পায় না। রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও প্রশাসনিক উদাসীনতা এ সকল জঘন্য অপরাধ প্রবণতাকে আরও উস্কে দিচ্ছে। আটজন বহিষ্কার ॥ দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে মোস্তফা মহসিন মন্টু ও অধ্যাপক আবু সাইয়িদসহ আটজনকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানোর পর এবার তাদের বহিষ্কার করেছে গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন অংশ। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের সভায় এই বহিষ্কারের পাশাপাশি ১২ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ও নেয়া হয়। বহিষ্কৃত বাকিরা হলেন- সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, হেলালউদ্দিন, লতিফুল বারী হামিম, খান সিদ্দিকুর রহমান ও আব্দুল হাসিব চৌধুরী। এদের মধ্যে শেষের চারজনকে আগে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। এখন চূড়ান্ত বহিষ্কার করা হলো।
×