ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভরাট জলাশয় পুনর্খননের উদ্যোগ

বাড়বে মাছের উৎপাদন, কর্মসংস্থান হবে গ্রামের মানুষের

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ১৮ অক্টোবর ২০২০

বাড়বে মাছের উৎপাদন, কর্মসংস্থান হবে গ্রামের মানুষের

ওয়াজেদ হীরা ॥ দেশের ভরাট হয়ে যাওয়া জলাশয়সমূহ পুনর্খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পুকুর, দিঘি, বিল, হাওড় ইত্যাদি জলাশয় পুনর্খননের মাধ্যমে সারাবছর প্রযুক্তিনির্ভর চাষাবাদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। হবে গ্রামীণ কর্মসংস্থানও। জলাশয়গুলোর ইজারা মূল্য বৃদ্ধির ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। ৪০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ৬১ জেলায় ৩৪৯ উপজেলার ২,৫৯৭.৪৩ হেক্টর আয়তনের তালিকাভুক্ত পতিত/অব্যবহৃত বিভিন্ন শ্রেণীর জলাশয় পুনর্খননের মাধ্যমে মৎস্যচাষ উপযোগী করা হবে। যেখানে ১০ হাজার ২৩৪ মেট্রিক টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদনসহ প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে প্রায় বিশ হাজার মানুষের। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের ভরাট হয়ে যাওয়া অসংখ্য পতিত সরকারী খাস জলাশয় প্রয়োজনীয় পুনর্খননের মাধ্যমে সারাবছর মাছ চাষের উপযোগী করা হচ্ছে। এতে অব্যবহৃত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ বিপুল পরিমাণ গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। উন্নয়ন করা জলাশয়ের পাড়ে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসাবে ফলদ বৃক্ষরোপণসহ নানা ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ সম্ভব হবে এবং পরিবেশের উন্নয়নসহ পার্শ্ববর্তী কৃষিকাজে সেচ ব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এসব করতে ‘জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১৫ থেকে ২০২২ মেয়াদের এই প্রকল্পে সরকার ব্যয় করছেন ৪০৯ কোটি টাকা। দেশব্যাপী ইতোমধ্যেই চলমান এ প্রকল্পটি মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত সরকারী খাস পতিত/ভরাট জলাশয় পুনর্খননের মাধ্যমে মৎস্য চাষের আওতায় আনার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাছের উৎপাদন নিয়ে এর আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেছেন, বর্তমান সরকার মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। সব ধরনের দেশী মাছ এখন মানুষের খাবারের থালায় ফিরে আসছে। আমাদের কর্মকর্তারা এসব নিয়ে কাজ করছেন। এছাড়াও দেশী মাছের পাশাপাশি ইলিশের উৎপাদনও বাড়ছে। অর্থাৎ সরকারের যুগপোযোগী সিদ্ধান্তের কারণে উৎপাদন বাড়ছে, মানুষের আয় বাড়ছে। প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আলীমুজ্জামান চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, শুধু ভরাট জলাশয় মাছ চাষের উপযোগী করা নয়। এর সঙ্গে অসংখ্য মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হচ্ছে। বর্তমান সরকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছে। এটি সে ধরনের একটি প্রকল্প। কেননা, জলাশয়ের পাড়ে নানা ধরনের কৃষিজ পণ্য তৈরি করে মানুষ অর্থ পাচ্ছে। মাছ চাষকে কেন্দ্র করে জীবিকা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অনেক মানুষ এর সুফল ভোগ করছে। আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমরা একটা দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারছি। মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এক সময়ে প্রাকৃতিক নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড় ইত্যাদি জলাশয় ছিল নানা জাতের দেশীয় মাছের প্রধান আবাসস্থল। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ৯০% মৎস্য আহরিত হত এ সকল জলাশয় হতে। ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বসতি স্থাপন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন, শিল্পের প্রসার, কৃষির আধুনিকায়নে ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারসহ মনুষ্যসৃষ্ট বহুবিধ কারণে এসব প্রাকৃতিক জলাভূমি একদিকে দারুণভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে অন্যদিকে উৎপাদনশীলতাও হারিয়েছে। বর্তমানে এ সকল জলাশয় থেকে মোট উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বর্ধিত চাহিদা যোগান দিচ্ছে চাষকৃত মাছ। বর্তমান বাজার মূল্য এবং পুষ্টিকর খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে মৎস্য চাষ একটি লাভজনক পেশা হওয়ায় ব্যক্তি পর্যায়ে কৃষিজমি রুপান্তরের মাধ্যমে অসংখ্য আধুনিক বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য খামার গড়ে উঠছে। ফলে বর্তমানে কৃষি ফসলের সঙ্গে মৎস্য চাষের একটি প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। আর তাই সরকার ভরাট হয়ে যাওয়া জলাশয়গুলো মাছ চাষে ফেরাতে চায়।
×