ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তৈরি করছে নতুন পরিকল্পনা

বহুমুখী টেকসই উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে বগুড়া আরডিএ

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১৮ অক্টোবর ২০২০

বহুমুখী টেকসই উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে বগুড়া আরডিএ

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ মুজিব শতবর্ষে মাঠ পর্যায়ে গ্রামের মানুষকে শহরের সকল সুযোগ সুবিধায় টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ)। দেশে এই প্রথম এক গ্রাম এক সমিতি এবং কৃষকের উৎপাদিত ফসলের মূল্য নিশ্চিতে ক্রপ ইন্স্যুরেন্সের (শস্য বীমা) আওতায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়াও আবাদে পানির অপচয় রোধ, ফসলের ওপরে বিশেষ ব্যবস্থায় সোলার প্যানেলে যান্ত্রিক কৃষিতে বিদ্যুতায়ন, পল্লী জনপদে পরিবেশবান্ধব ফ্ল্যাট বাড়িসহ বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। শনিবার সকালে বগুড়ায় আরডিএর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র বার্ষিক পরিকল্পনা কনফারন্সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। কোভিড-১৯ এর ক্রান্তিকালে মাঠ পর্যায়ে সচেতনতার মধ্যে কর্মসূচী বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আরডিএর মহাপরিচালক (ডিজি) খলিল আহমেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বছরের কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ রেজাউল আহসান। সার্বিক পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে পরামর্শ দেন দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ডাঃ এম এ কাশেম এবং ডাক ও টেলিযোগযোগ বিভাগের সচিব আফজাল হোসেন। তারা জুম ভার্চুয়ালে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক। আরডিএর ডিজি খলিল আহমেদ জানান, ১৯৭৪ সালে বগুড়ায় ১২০ একর ভূমির ওপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির ৮০ একর ভূমির ওপর চলে নিড বেজ রিসার্চ (মাঠের প্রায়োগিক গবেষণা)। অর্থাৎ এলাকার মাটি, প্রকৃতি ও আবহওয়ার ওপর ভিত্তি করে কৃষক কিভাবে কম খরচে অধিক ফসল এবং ফসল বহুমুখীকরণ করবে তার ওপর প্রায়োগিক গবেষণা। বগুড়া আরডিএ এ পর্যন্ত ৪৯৩টি সফল গবেষণা করেছে। মাঠ পর্যায়ে চলছে ২০টি। গবেষণালব্ধ ফলাফল কৃষি মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেয়া হয়। মহাপরিচালক জানান, বগুড়া আরডিএর সফল কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে। তিনি আরডিএর প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা দিচ্ছেন। আরডিএ শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৬ লাখ কৃষককে জীবন মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যার ২৭ শতাংশ নারী। এ ছাড়াও বিসিএস সকল ক্যাডার (শিক্ষা স্বাস্থ্য প্রশাসন) কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের দেশের সার্বিক উন্নয়ন মাঠ পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পল্লী জনপদের সার্র্বিক বিষয়কে প্রাধ্যান্য দেয়া হয়। ধান আবাদে ড্রেনের পানির অপচয় রোধ করে বিশেষ পাইপ লাইন স্থাপন করেছে। কৃষক জমির পানি যাচাই করে নিতে পারে। ভাল বীজ উৎপাদনের গ্রাম তৈরি করেছে। ফসলে কোন ধরনের অসুবিধা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক টেলিসেবা ও পরামর্শ শেল পল্লী পাঠশালা স্থাপিত হয়েছে। কৃষি উন্নয়ন কার্যক্রমসহ যান্ত্রিক কৃষিকে সোলার সিস্টেমে বিদ্যুতায়িত করার পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। চরের মানুষের জীবন মান উন্নয়নে চর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিচালক (কৃষি প্রকৌশলী) ফেরদৌস আলম জানালেন দেশে সমবায়ী ভিত্তিতে আইলবিহীন জমিতে আবাদের উদ্যোক্তা আরডিএ। গত বছর শেরপুর উপজেলায় প্রায় ৬০ একর জমির আইল তুলে দিয়ে সমবায়ী ভিত্তিতে সফলভাবে আবাদ করে বড় দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। এ বছরও কৃষক আইল উঠিয়ে সমবায়ী ভিত্তিতে আবাদের উদ্যোগ নিয়েছিল। করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়। উচ্ছিষ্ট ও পরিত্যক্ত কোন জিনিস ফেলে দেয়ার নয় এমন ধারণায় আবর্জনা থেকে বিদ্যুত, বায়োগ্যাসের বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদনেও সফলতা দেখিয়েছে আরডিএ। গ্রামের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও আধুনিক নাগরিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত সমবায় বহুতল ভবন ‘পল্লী জনপদ’ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে বগুড়া রংপুরসহ সাতটি বিভাগে। পল্লী জনপদের চারতলা ভবনের ফ্ল্যাটে ২৭২টি করে পরিবার বাস করতে পারবে। থাকবে সুপেয় পানির ব্যবস্থা। এতে কৃষি জমির অপচয়রোধ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ডিজি খলিল আহমেদ জানালেন কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে থাইল্যান্ডের একটি রিটেইল বাজারের অনুসরণে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও ভারত যে ভাবে শস্য বীমার মাধ্যমে কৃষকের ফসলের ন্যয্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে সেই বিষয়েও পরিকল্পনা প্রণয়েনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×