ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ১৮ অক্টোবর ২০২০

অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি

দু’মাস আগে সার্কভুক্ত বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছিল। শুক্রবার এলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় রফতানি বাড়াতে আরেক বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার উদ্যোগের খবর। করোনাকালে বিশ্ব বাণিজ্য যখন কিছুটা থমকে দাঁড়িয়েছে, সে সময় বাংলাদেশ প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। এ থেকেই সরকারের দূরদৃষ্টি ও সক্রিয়তার পরিচয় মেলে। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গেলে রোহানপুর-সিঙ্গাবাদ ব্রডগেজ রেলপথ লিংক নেপালের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে সম্মতি দেয় ভারত। আর এতেই সুযোগ সৃষ্টি হয় ভারতের ভূখ- ব্যবহার করে নেপালের সঙ্গে রেলপথে ট্রানজিট যোগাযোগ কার্যকর করার। বাংলাদেশ এখন পাটজাত পণ্য, ব্যাটারি, তৈরি পোশাক, টয়লেট্রিজ পণ্য, ওষুধসহ কিছু পণ্য নেপালে রফতানি করছে। উভয় দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। এ অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে রেলপথে ট্রানজিট সুবিধা কার্যকর হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। নেপালের সঙ্গে চুক্তির ফলে বাংলাদেশ ১৪০ ও নেপাল ১৩০ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় রফতানি করতে পারবে। এছাড়া নেপাল জলবিদ্যুত উৎপাদন করছে, যা বাংলাদেশে রফতানির সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রফতানি হবে গার্মেন্টস পণ্য। এছাড়া নেপালী কৃষিপণ্য রফতানি হবে এদেশে। মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের আগে নেপালের সঙ্গে পিটিএ চুক্তি সম্পন্ন করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার। এর আগে ভুটানের সঙ্গে পিটিএ চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য অনুকূলে রয়েছে। এ কারণে পরীক্ষামূলক যেসব দেশের সঙ্গে পিটিএ এবং এফটিএ (মুক্তবাণিজ্য চুক্তি) করা হবে তার মধ্যে নেপালকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানো এবং পর্যটন বিনিময়ের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। উভয় দেশ এ সুযোগ ও সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে কাজও শুরু করেছে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল (বিবিআইএন) প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সব দেশ উপকৃত হবে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ দুটি চুক্তি ঐতিহাসিক চুক্তি ও মাইলফলক হবে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর সঙ্গে দ্বিমতের অবকাশ নেই। এর আগে কোন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করা হয়নি। ভুটানের সঙ্গে করা পিটিএ অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে। এই পিটিএর ফলে বাংলাদেশের ১০০টি পণ্য ভুটানে এবং ভুটানের ৩৪টি পণ্য এ দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। তবে পর্যায়ক্রমে আলোচনার মাধ্যমে পণ্য সংখ্যা বাড়াতে পারবে দুই দেশ। বাংলাদেশী পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ, রফতানি বৃদ্ধি এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে চীন, ভারত ও সৌদি আরবসহ অন্তত ১৫টি দেশের সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। রফতানি সম্প্রসারণে এফটিএ ও পিটিএ চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। ফলে এখন এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ যে শূন্য শুল্ক সুবিধা পায় বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে, সেই সুবিধা অব্যাহত রাখতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করাই সমীচীন। বিশ্বের আরও এগারোটি দেশের সঙ্গে দ্রুত পিটিএ এবং এফটিএ চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ, যা দেশের অর্থনীতির জন্য সন্দেহাতীতভাবে শুভফল বয়ে আনবে।
×