ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪ বাহিনী

প্রকাশিত: ২২:২০, ১৭ অক্টোবর ২০২০

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪ বাহিনী

নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী, ১৬ অক্টোবর ॥ বিশেষ কয়েকটি বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন এখলাসপুরসহ উপজেলার অন্তত ১০ ইউনিয়ন। ইতোমধ্যে সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে খ্যাত রয়েছে আলাইয়ারপুর ইউনিয়ন। লক্ষ্মীপুর সিমান্তবর্তী এই ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের ঝনঝনানি কারণ লক্ষ্মীপুরের অনেক দাগী সন্ত্রাসী এই এলাকায় আত্মগোপন করে থাকে। আলাইয়ারপুরের ইউনিয়নের ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ৪ বাহিনী কাজ করে বলে জানা গেছে। সেগুলো হলো- টিটু গ্রুপ, শাহাবউদ্দিন গ্রুপ, লিটন ও শাকিল গ্রুপ। এ সব গ্রুপের অধিকাংশ সদস্যের বয়স ১৫-২৫ বছরের মধ্যে। এলাকাবাসী জানান গত দুমাস আগে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ এক নেতা মিলন বাহিনীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখায় এক যুবক এলাকায় গেলে তাকে ধাওয়া করা হয়। যার বহির্প্রকাশ হলো যুবলীগ নেতার মামলায় সাক্ষ্য না দেয়ায় এক টাইলস মিস্ত্রিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জের চরশাহী ইউনিয়ন থেকে তুলে নিয়ে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মারধর ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত রাসেল আমিন (৪৮) লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব সৈয়দপুর গ্রামের নজম উদ্দিন পাঠোয়ারী বাড়ির তছির আহমেদের ছেলে। বেগমগঞ্জ থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুন উর রশীদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন বলেন, চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার চরশাহী ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক রিয়াজ বর্তমানে দুটি মামলায় জেলে রয়েছে। তার একটি মামলায় সাক্ষী ছিল নিহত রাসেল। রিয়াজ খারাপ প্রকৃতির লোক হওয়ায় রাসেল ওই মামলায় সাক্ষ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করে এবং সর্বশেষ ওই মামলায় সাক্ষ্য দেয়নি সে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের জাফরপুর এলাকার তায়ের মার্কেট সংলগ্ন কালার পোল ব্রিজে দাঁড়িয়ে ছিল নিহত রাসেল। এক পর্যায়ে একই এলাকার শান্ত নামে এক যুবক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা রাসেলকে ব্রিজের ওপর থেকে ধরে নিয়ে মারধর করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে মরদেহ লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালীর সীমান্তবর্তী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ছয়ানি ইউনিয়নের একটি ধানখেতে ফেলে দিয়ে যায়। অভিযুক্ত শান্ত দু’দিন আগে লক্ষ্মীপুর কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে। রিয়াজের মামলায় সাক্ষ্য না দেয়ার জের ধরে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। বেগমগঞ্জের ন্যক্কারজনক এ ঘটনায় শুক্রবার চৌমুহনী সরকারী এস এ কলেজের সাবেক ভিপি শাহাজান সাত্তার বলেন, এ ঘটনা মধ্যযোগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। দেশে সুশৃঙ্খল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিদ্যমান থাকা অবস্থায় দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কোন ব্যক্তি বিশেষ বা গোষ্ঠী বাহিনীর আমজনতার কাছে কাম্য নয়, সার্জেন্ট জহুরুল হক, বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন, জননন্দিত নেতা আব্দুল মালেক উকিল, জননেতা নুরুল হকের পবিত্র জন্মভূমি থেকে সন্ত্রাসী, ধর্ষক প্রগতির পথে অন্তরায় সৃষ্টিকারী, রাষ্ট্র ও সমাজ বিরোধীদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দিয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। বেগমগঞ্জের ঘটনায় থানা পুলিশের আচরণ রহস্যজনক। নির্যাতনের স্বীকার নারীকে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে রেখেছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল ওই নারীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে নানা টালবাহানা করে দেখা করতে দেননি থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এই বিষয়ে জানতে চাইলেও সাবেক ওসি উদাসিনতা দেখিয়েছেন। অভিযুক্ত, শান্ত চরশাহী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের কালা মিয়া ব্যাপারীর ছেলে আব্দুল মোতালেত প্রকাশ। বেগমগঞ্জ উপজেলার প্রধান দুই বাহিনী স¤্রাট ও সুমন বাহিনীসহ কয়েকটি গ্রুপের নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা আছে। তবে উপজেলা সদর থেকে কয়েকটি ইউনিয়নের দুর্গম জনপদে সন্ত্রাসীরা চলাচল করে মোটরসাইকেলে। এখলাসপুরের ন্যক্কারজনক ঘটনার পর গোপালপুরের চানকাশিপুরে কুপ্রস্তাবে প্রবাসীর স্ত্রী রাজি না হওয়ায় ওই বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে সন্ত্রাসী সাদ্দাম বাহিনী। পরে ৯৯৯-এ কল করে সাদ্দাম বাহিনীর হাত থেকে রক্ষাপান ওই নারী। বেগমগঞ্জ থেকে ভেঙ্গে সোনাইমুড়ী উপজেলার জাকের বাহিনীর সঙ্গে মাছুম বাহিনীর বিরোধ আছে। তাদের মধ্যে একাধিকবার গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। স্থানীয়রা জানান, এর মূলে রয়েছে মাদক ব্যবসা। এছাড়া এই এলাকায় রয়েছে একটি ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং। কিশোর মাস্তান ‘শিশু রাসেল’ এর নিয়ন্ত্রক। তার গ্রুপে প্রায় ১০-১৫ সদস্য রয়েছে। এলাকার বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে তারা জড়িত। এছাড়া বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী। বিএনপি অধ্যুষিত ছয়ানি ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার করছে রাসেল বাহিনী, জাবেদ বাহিনী ও বাবু বাহিনী। রাজগঞ্জে রয়েছে মিলা-সুজন বাহিনী ও মঞ্জু বাহিনী। এর মধ্যে জাবেদ বাহিনী ও মিলা-সুজন বাহিনী কয়েকটি বড় সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এলাকার মাদকের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ নিয়েই মূলত তাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। মঞ্জুর কাছে সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ এমএম পিস্তলসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন অস্ত্র রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। সে একাধিক মামলার আসামি বলে জানা গেছে। এখলাসপুরবাসী জানায়, এ ঘটনায় জড়িতদের দৃশ্যমান তাদের কোন পেশা নাই। চুরি চামারি ছিনতাই, অস্ত্রবাজি, অস্ত্র বিক্রি ও অস্ত্র ভাড়া দেয়া এবং এলাকার প্রভাব বিস্তারে একে মেরে, ওকে হুমকি দিয়ে, চাঁদাবাজি করে তার দিন কাটছে। এলাকাবাসী জানে, সে শাসক দল আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় রয়েছে। এ দেলোয়ার বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর কবিরের পক্ষ নিয়ে নির্বাচনে প্রচারে অংশ নেয় এবং নির্বাচনের দিন ১টি ভোট কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগ নেতাদের নজরে আসে। যদিও আলমগীর কবির বিএনপি প্রার্থী খলিলুর রহমানের কাছে বিপুল ভোটে হেরে যায়। মামুনুর রশিদ কিরন এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সে আলমগীর কবির আলোর নেতৃত্বে বিশাল হোন্ডা বহর নিয়ে গিয়ে এমপিকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে পুনরায় আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে হয়ে উঠেন বড় মাপের নেতা। এমপিকে ফুলের তোড়া দেয়া ছবি দিয়ে সে পোস্টার, প্লেকার্ড ও ব্যানার তৈরি করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে, এমনকি উপজেলা ও জেলা সদরেও টাঙ্গিয়ে দেয়। কিন্তু নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার এখলাসপুরে ২ সেপ্টেম্বর এক গৃহবধূ (৩৭) কে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানানো বর্বরতার মধ্য বিবস্ত্র করে মারধর করে তার ছবি ভাইরালের কারণে নোয়াখালী জেলাসহ গোটা দেশ ফুসে উঠে। তখনি তৎপর হয় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। ছুটে আসেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন রাত জেগে বেগমগঞ্জ থানায় বসে ভিকটিমকে উদ্ধার, মামলা দায়ের, আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করে। ৯ জনকে আসামি করে বেগমগঞ্জ থানায় শিশু ও নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের হওয়ার পর এলাকাবাসী মুখ খুলতে শুরু করেছে। জানা যায়, মৃত ছায়েদল হকের ছেলেদের মধ্যে দেলোয়ার তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। বড় ভাই আনোয়ার হোসেন ও ছোট ভাই মিন্টুও ইয়াবা ব্যবসা, গরু চুরি, সিঁদেল চুরি, ছিনতাই করে থাকে। র্যা বের হাতে গ্রেফতার পর সে র্যা বকে তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলার কথা জানিয়েছে দেলোয়ার। আর বেগমগঞ্জ পুলিশ তার বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ চাঁদাবাজি, রাহাজানি, বিস্ফোরক আইনে আরও ৪টি মামলার কথা জানান। এরপর এখন তার বিরুদ্ধে নতুন করে আরও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অস্ত্র আইনে ১টি, বেগমগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (ধর্ষণ) ১টি মামলা র্যা ব দায়ের করেছে। এলাকার মসজিদের পেশ ইমাম (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, দুরন্ত সাহসের অধিকারী দেলোয়ার ছোটবেলা থেকে এ বাড়ি, ও বাড়ি চুরি করত। খেতের ফসল নষ্ট করত, পুকুরের মাছ চুরি করত। গত ৭/৮ বছর ধরে সে সিএনজি চালাতে শুরু করে। তখন বেগমগঞ্জের হাজীপুরের সুমন বাহিনী ও জিরতলীর ফাজিলপুরের নিজাম বাহিনীর সঙ্গে তার সখ্য হয়। পরে সিএনজি চালানো ছেড়ে এ বাহিনী গুলির সঙ্গে কক্সবাজার থেকে ইয়াবা চালান এনে বিক্রি শুরু করে। ইয়াবার সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রের বেচাকেনা ও অস্ত্র ভাড়া দিতে শুরু করে। দেলোয়ার তার বাহিনীর তরুণ সদস্যদের দিয়ে ইয়াবার চালান ও অস্ত্রের চালান করাত। ক্রমশ এ বাহিনী এতই দুর্ধর্ষ হয়ে উঠে যে, তারা বিভিন্ন এলাকায় ৫ হাজার টাকায় অস্ত্র ভাড়া ও শূটারসহ ১৫ হাজার টাকা ভাড়া দিত। এলাকায় প্রচার আছে যে, বেগমগঞ্জের আমান উল্যাপুরে আওয়ামী লীগের দুগ্রুপে সংঘর্ষে এ বাহিনীর অস্ত্র ও শূটার দিয়ে এক ছাত্রলীগ ও এক যুবলীগ নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। তাছাড়া হাজীপুরে খুন ও এখলাসপুরে জোড়া খুন দেলোয়ার বাহিনীর অস্ত্র দিয়েই হয়েছে। তারপরও সে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরাফিরা করেছে। বেগমগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রসিদ কিরন সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, তিনি দেলোয়ারকে চিনেন না। নির্বাচনে জয়লাভ করার পর কোন ফাঁকে তাকে ফুল দিয়েছিল তা তার জানা নাই। তিনি এখলাসপুরে নারী নির্যাতনকারী দেলোয়ার বাহিনীসহ সুমন বাহিনী, নিজাম বাহিনী সব বাহিনীকে গ্রেফতারের দাবি জানান। দেলোয়ার বাহিনীর অন্য কমান্ডাররা হচ্ছেÑ দেলোয়ারের কিশোর গ্যাং ক্যাডার বাহিনী নির্ভরযোগ্য সদস্য। পিতৃ পরিচয়হীন এ বাদলের এলাকার কেউ তার পিতার পরিচয় বলতে রাজি নয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে বর্তমান পিতা রহমত উল্যা, পূর্বের পিতা সাহাব উদ্দিন। সে বসবাস করে মধ্যম এখলাসপুর মহরম আলী মুন্সী বাড়িতে। ছোটবেলা থেকে ঘাত প্রতিঘাতে বড় হয়েছে। তাই তাকে দেলোয়ার বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখলে দলে ভিড়িয়ে নেয়। তারপর থেকে সে ছাত্রলীগ নেতা। কোন স্কুল কলেজে না গিয়েও এলাকায় চুরি চামারি করেও ছাত্রলীগ নেতার নাম ভাঙিয়ে এলাকায় চাঁদাবাজি করে ও দেলোয়ারের অস্ত্রের শূটারম্যান হিসেবে ভাড়ায় খাটে এবং দেলোয়ারের নির্দেশে কক্সবাজার থেকে ইয়াবা ও অস্ত্রের চালান আনা নেয়া করে। তার নেতৃত্বে রয়েছে মিনি ক্যাডার কিশোর গ্যাং বা ছোট মামা বাহিনী। এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২০/২৫ এর কম না। সে গাবুয়া থেকে রেললাইন এবং টেলিভিশন সেন্টার ও শরীফপুর এলাকায় প্রবাসীরা বাড়ি ঘর করতে গেলে তাকে চাদা দিতে হয়। ঘরপ্রতি ১০ হাজার টাকা চাঁদা না দিলে সে তার বাহিনী পাঠিয়ে রাতে ভাংচুর করত। কোরবানির সময় কয়েকদিন ধরে এখলাসপুর বাজারে জেলার বৃহত্তর গরুর হাট বসে। এ বাজারে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রংপুর, রাজশাহী থেকে গরু ব্যাপারীরা গরু নিয়ে আসলে এ বাদলের নেতৃত্বে গরুপ্রতি ৫০০/১০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে দেলোয়ার বাহিনী। আবার যারা গরু কিনে নেয় পথিমধ্যে তাদের থেকে ও চাঁদা আদায় করে দেলোয়ারের কাছে জমা দেয়। এ ২০ বছর বয়সে সে কোন মামলার আসামি হয়নি। তবে ২০১৯ সালে তিন বার ডিবি পুলিশ তাকে মাদকসহ গ্রেফতার করলেও দলীয় নেতাদের সুপারিশে সে ছাড়া পায়। এরপর থেকে সে মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিতে আরও বেপরোয়া হয়ে যায়। তার নেতৃত্বেই বেগমগঞ্জের একলাসপুরে গৃহবধূকে নির্যাতন করে বিবস্ত্র ছবি তুলে ভাইরাল করা হয়েছিল। ওই ছবিতে তাকে বারবার দেখা গেছে। এ নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ মামলায় সে ১ নম্বর আসামি। মামলার এজাহারে মোঃ রহিম লিখলেও তার নাম আবদুর রহিম। তার বয়সও ২০ বছর। সে দেলোয়ারের নেতৃত্বে বাদলের প্রধান সহযোগী ও দুর্ধর্ষ ক্যাডার। তার পিতা শেখ আহমদ ওরপে দুলাল এলাকায় ছা পোষা নিরীহ প্রকৃতির হলেও ছেলে রহিম ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। সে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে প্রতিদিন ১টি গুলি ও ১টি ককটেল না ফোটালে তার হাত ফিসফিস করে বলে এলাকায় শ্রুতি রয়েছে। পিতামাতা ছোটবেলা থেকে অনেক চেষ্টা করেও তাকে লেখাপড়া করাতে পারেনি। সে দেলোয়ারের হাতে পড়ে কিশোর গ্যাং এ যোগ দিয়ে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এ বয়সে ৪/৫টা ইয়াবা না খেলে তার ঘুম হয় না। সে তার অনুগত ৫/৬ জন ক্যাডার নিয়ে সারারাত রাস্তায় চলাফেরা করে। গভীর রাতে চলাচলকারী সিএনজি, অটোটেম্পু থামিয়ে যাত্রী ও চালকদের সর্বস্ব কেড়ে নেয়া তার পেশা। সারারাত যা আয় রোজগার করত ভোরে দেলোয়ারের হাতে তুলে দিতে হতো। তার পিতার আহাজারি দেলোয়ার তার ছেলের জীবন ধ্বংস করেছে। রহিমের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। জানা যায়, পূর্ব এখলাসপুর নোয়াব আলী ব্যাপারী বাড়ির লোকমান মিয়ার ছেলে সাজু (২১) সম্ভ্রান্ত ধার্মিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করার পর থেকে লোকমান মিয়ার বড় আশা ছিল ছেলেকে বড় করে মানুষের মতো মানুষ করবে। কিন্তু সে লেখাপড়া না করে বখাটে হয়ে যায়। বিগত ইউপি নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলমগীর কবির আলোর পক্ষে কাজ করতে গিয়ে দেলোয়ারের ক্যাডার গ্রুপে নাম লিখায়। তারপর থেকে আর বাবা মার নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসেনি। লোকমানের দুঃখ তার ছেলে সাজু তার কথা না শোনে দেলোয়ারের কমান্ডে চলে আকাম কুকাম করে। এলাকাবাসী আড়ালে আবডালে জানায়, এ সাজু করে না এমন কোন কর্ম নেই। ইয়াবা ব্যবসা, ভাড়াটিয়া ক্যাডার হিসেবে মানুষের সম্পত্তি দখল করা, চাঁদাবাজি করা, গ্রাম্য সালিশে গিয়ে গন্ডগোল করা, সড়কে গাড়ি আটক করে টাকা আদায় করে, স্কুল কলেজে ছাত্রীদের যাওয়ার পথে ইভটিজিং করা এবং কক্সবাজার থেকে অস্ত্র ও ইয়াবা আমদানি করা সবই করে। সে ২/৩ বার ডিবি পুলিশের হাতে আটক হলেও দলীয় নেতারা তাকে ছাড়িয়ে আনেন। তবে তার বিরুদ্ধে সুধারামে থানায় রয়েছে ২টি মাদক মামলা। সে মামলায় সে জামিনে রয়েছে। মধ্যম এখলাসপুরের মৃত আবদুল করিমের ছেলে রহমত উল্যা। এক সময় দিনমজুর ছিল। ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর কবির আলোর এর পক্ষে কাজ করে ভোট কেন্দ্র দখল করতে গিয়ে সখ্য হয় দেলোয়ারের সঙ্গে। তারপর থেকে দিনমজুরের কাজ ছেড়ে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। তরুণ কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা যখন কোথাও ভাড়ায় খাটতে যায়। সে তাদের মুরুব্বি হিসেবে সেখানে হাজির থাকে। আর ক্যাডাররা কাজ করে কোন ঝামেলায় পড়লে তাদের উদ্ধার করা তার কাজ। বিভিন্ন স্থানে মাদক বিক্রির টাকা আদায় করে এ রহমত উল্যা। সে নিজেকে জেলা শ্রমিক লীগের নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়। এ রহমত উল্যাও দুবার ডিবির হাতে মাদকসহ আটক হওয়ার পরও দলীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে সে ছাড়া পায়। এক সময় ছোটখাটো ব্যবসা করলেও দেলোয়ার দলে ভিড়ার পর গত তিন বছর পর থেকে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। ক্যাডার বাহিনী কোন অঞ্চলে ভাড়া খাটতে গেলে সে ৪/৫ জন সিনিয়র ক্যাডার নিয়ে সিএনজি যোগে তাদের উদ্ধারকারী দল হিসেবে অপেক্ষা করে। এলাকায় আওয়ামী যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়। এলাকার জায়গা জমিন ক্রয় বিক্রি করতে হলে যে কেউ তাকে চাঁদা না দিয়ে করতে পারে না। কেউ জমিন ক্রয় বিক্রি করলে তার মাধ্যমে ৩ থেকে ৫% টাকা চাঁদা না দিলে সে জমিনের দখলে যেতে পারে না। ২০১৯ এ সেপ্টেম্বর গাবুয়ায় আমেরিকান প্রবাসীর বাড়িতে তার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে। বেগমগঞ্জ থানায় চাঁদা মামলা দিতে গেলে পুলিশের আদেশে মামলা থেকে তার নাম বাদ দিতে হয়েছে বাদীকে। এ রাসেল দেলোয়ার বাহিনীর অস্ত্র আনা নেয়ার কাজ করে। তার বিরুদ্ধেও থানায় কোন মামলা করতে সাহস পায়নি কেউ। মানিক (২১) দেলোয়ার এর কিশোর গ্যাং মামা বাহিনীর সদস্য। লেখাপড়া না করে পরিবারের অবাধ্য এ সন্তান দেলোয়ার বাহিনীতে জড়িয়ে পড়ে, মাদক সেবন, মাদক ব্যবসায়ই তার পেশা ও নেশা। এ মাদক সেবন করে সে কয়েকবার তার বাবা মাকে মারধর করে আহত করেছে। এলাকায় শ্রুতি আছে মানিক অস্ত্র নিয়ে দু’হাতে গুলি ছুড়তে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার পিতা তাকে ফাঁসিতে ঝুলানোর জন্য আহ্বান করেন এবং কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এ ছেলেকে সরকার ফাঁসি দিলে সে তার লাশ গ্রহণ করবে না। এ মানিকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও পর্নোগ্রাফি আইনের সন্দিগ্ধ আসামি ছাড়া কোন মামলা নেই। এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করলেও কেউ তার বিরুদ্ধে মামলা করতে বা মুখ খুলতে সাহস পায়নি। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী দেলোয়ারের প্রধান মাস্টারমাইন্ড আবুল কালাম। জয়কৃষ্ণপুর খাল পাড়ের জুলফিকার আলী বাবুলের ছেলে। বাবুলও ছিল এলাকার গরু ও ছাগল চোর। তার বখাটে ছেলে আবুল কালাম ওরফে কালা দেলোয়ারের প্রধান সহকারী। দেলোয়ারের অস্ত্র পরিষ্কার করা, জুতা মুছে দেয়া, মাদক তৈরি করে খাওয়ানো, দেলোয়ারকে চাহিদামতো এলাকার কেউ চাঁদা না দিলে তাদের ওপর হামলা করে চাঁদা আদায় করা এবং অস্ত্র ভাড়া নিয়ে সময়মতো অস্ত্র ফেরত না দিলে বা টাকা দিতে দেরি করলে তাদের ধরে এনে শাস্তি দিয়ে টাকা আদায় করা ছিল এ আবুল কালাম কালার কাজ। এর বাহিরেও দলীয় অনেক নেতাদের চাহিদা মোতাবেক বিদেশী মদ ও নারী সরবরাহ করত বলেও শাসক দলের একটি অংশ এলাকায় প্রচার করছে। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩ মামলা ছাড়া থানায় কোন মামলা হয়নি। তবে বেগমগঞ্জ পুলিশ ২ বার ও ডিবি পুলিশ ৩ বার মাদকসহ আটক করলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ছাড়া পেয়ে যায় এ আবুল কালাম কালা। এলাকাবাসীর তথ্য মতে দেলোয়ারের অস্ত্র ভা-ার রক্ষণাবেক্ষণ করেন এ আবুল কালাম। পুলিশের খাতায় দীর্ঘদিন পলাতক হত্যা, বিস্ফোরক, রাহাজানি, চাঁদাবাজির ৫ মামলার আসামি দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেল্যা চোরা রাজনৈতিক প্রশ্রয় পেয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠে। এখলাসপুর ও শরীফপুর ইউনিয়ন নিয়ে গড়ে তোলে বিশাল অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী। এ বাহিনীর সংখ্যা ৫০/৬০ জন।
×