ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৭ থেকে ৯ দিনের মধ্যেই শেষ হবে ডিএনসিসির এ বিশেষ অভিযান

শীতে মশকমুক্ত রাখতে ৬২৯ স্পটে আজ থেকে অভিযান

প্রকাশিত: ২২:১৯, ১৭ অক্টোবর ২০২০

শীতে মশকমুক্ত রাখতে ৬২৯ স্পটে আজ থেকে অভিযান

মশিউর রহমান খান ॥ এডিস মশাকে সম্পূর্ণরুপে নিধন করে সফলতার পর এবার আসন্ন শীতে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য আজ শনিবার থেকে মাঠে নামছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। আধুনিক ৪র্থ জেনারেশনের (৪ জি) শক্তিশালী মশা মারার ওষুধ ছিটানোর মাধ্যমে সংস্থাটির ৬২৯টি মশা উৎপাদনের হটস্পটে একযোগে এ অভিযান পরিচালনা করবে সংস্থাটি। নোভালুরন নামের লার্ভিসাইড এ ওষুধটি ইংল্যান্ড থেকে আনা হয়েছে। যা বিশ্বে অধিক কার্যকরী মশার ওষুধ হিসেবে প্রমাণিত। আগামী শীতে নাগরিকদের মশকমুক্ত রাখতেই এ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। শনিবার থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান ৭ থেকে ৯ দিনের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন ডিএনসিসির উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট কর্নেল গোলাম মোস্তফা সারোয়ার। জানা গেছে, মশক নিধনে দেশে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নতুন ওষুধ প্রয়োগ করার কারণে প্রাথমিকভাবে পূর্বের চিহ্নিত হটস্পটে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এতে সফলতা পেলে ডিএনসিসির সকল এলাকায় এ ওষুধ ছিটানো হবে। এছাড়া নতুন ওষুধ ব্যবহারের জন্য ডিএনসিসির মোট ৯ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। সরাসরি এই টিমের তত্ত্বাবধানে এ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। সরাসরি এসব কর্মকর্তারা এ ওষুধ প্রয়োগের সময় মাঠে থেকে নির্দেশনা দেবেন। এজন্য তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। জানা গেছে, উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ৪ জন সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কৃষি অধিদফতর থেকে ডিএনসিসিতে প্রেষণে আসা তিনজন কীটতত্ত্ববিদ রয়েছেন। ডিএনসিসি শুধু মশক নিধন করেই ক্ষান্ত হবে না স্থানীয় নাগরিকদের দৃষ্টিতে মশক নিধন কার্যকরভাবে করা হচ্ছে কি না তা পরীক্ষা করতে নাগরিকদের কাছে মশক নিধন কর্মীদের এ সংক্রান্ত জবাবদিহিতা করতে বাধ্য করবে সংস্থাটি। নির্বিঘœ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে এমন নতুন পদ্ধতির দিকে যাচ্ছে সংস্থাটি। নাগরিকদের মশার হাত থেকে মুক্তি দিতে চলতি বছরে এডিস মশা নিধনের জন্য চার দফা বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সংস্থাটি। সর্বশেষ গত ৩ অক্টোবর থেকে নতুন করে আবার কিউলেক্স মশা নিধনে অভিযান শুরু করে। তবে নতুন করে আধুনিক ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে আজ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে নির্দিষ্ট ওয়ার্ডগুলোতে মশক নিধনে মাঠে নামছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। মশক নিধনে পুরনো মান্দাতার আমল থেকে বেরিয়ে আসছে সংস্থাটি। প্রাথমিকভাবে ওষুধ পরিবর্তন করে আধুনিক পদ্ধতিতে মশক নিধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। তাই আধুনিক ৪র্থ জেনারেশনের (৪ জি) শক্তিশালী ওষুধে এডিস, কিউলেক্সসহ সকল প্রকার মশক নিধন করা। পরবর্তীতে এ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনয়নে বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার জনসম্পৃক্ততা বাড়াতেও নেয়া হয়েছে উদ্যোগ। মশক নিধন কার্যকর করতে এখন থেকে মশক নিধন কার্যক্রমে নিয়োজিত কর্মীরা কোন প্রকার অবহেলা করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সংস্থাটির স্বাস্থ্য শাখা। যে কোন এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো না হলে অভিযোগ দিলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে মশক নিধন কর্মী এলাকায় নিয়মিত উপস্থিত হয়ে সকালে লার্ভিসাইডিং ও বিকেলে ফগিং করছে কি না এবং দায়িত্ব সঠিকভাবে পাল করছে কি না তাও মনিটরিং করা হবে। নির্ধারিত কর্তব্য পালনে কোন প্রকার শৈথিল্য প্রদর্শন করলে বা অর্পিত দায়িত্ব পুরোপুরি পালন না করলে তাকে শাস্তি প্রদান করা হবে। সংস্থাটির পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরাতন পদ্ধতিতে ও পুরনো ওষুধে যেহেতু সকল মশা মরছে না তাই শক্তিশালী ও আধুনিক পদ্ধতিতে মশক নিধন করা হবে। এরই অংশ হিসেবে ইংল্যান্ড থেকে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব ওষুধ ক্রয় করা হয়েছে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে সংস্থাটি উদ্বোধনের অপেক্ষায় মহাখালীতে নির্মিত ডিএনসিসি পাইকারি মার্কেটের নীচতলায় পানি জমে থাকে। তাই বদ্ধ পানিতে মশার উৎপন্ন হয় বিধায় গত ৩০ জুলাই থেকে এই ওষুধ কতটুকু কার্যকর সেখানে তা পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি। ইংল্যান্ডের তৈরি নোভালুরন নামের এই মশার ওষুধটি বিশ্বব্যাপী মশক নিধনে কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে স্বীকৃত। ডিএনসিসি এর কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগকে ওষুধটি নিয়ে গবেষণা করায় বিশ্ববিদ্যালয় গত ৭৫ দিনে এ ওষুধটির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও কোন প্রকার পার্শ¦প্রতিক্রিয়া রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখেছে যে, ওষুধটি শতভাগ কার্যকর। তাই পাইলট প্রকল্প হিসেবে ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ ডিএনসিসি মার্কেটে একবার (লার্ভিসাইড) ওষুধ ছিটানোর পর একটানা ২ মাস পর গবেষণা করে দেখেছে সেখানে নতুন করে কোন প্রকার মশার জন্ম হয়নি বা কোন প্রকার লার্ভা উৎপাদন হয়নি। একইসঙ্গে মশার কোন ডিমের অস্তিত্ব না থাকায় ডিএনসিসির সীমানায় এ ওষুধ ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে। ডিএনসিসির স্বাস্থ্য শাখা সূত্র জানায়, কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে মানুষের কোন প্রকার ক্ষতি হবে না এই ওষুধে। একবার মশার ওষুধ ছিটালে কমপক্ষে ২-৩ মাস আর কোন প্রকার মশা জন্ম নিতে পারবে না। জলাধার, ডোবা বা বদ্ধ পানিতে একবার এই লার্ভিসাইড ছিটানোর মাধ্যমে কমপক্ষে ২ মাস মশার লার্ভা জন্ম নেয়নি তা পরীক্ষা করেই মাঠ পর্যায়ে এ ওষুধ ছিটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন ওষুধে কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকায় স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি নিশ্চিত হবে পরিবেশ রক্ষা। নতুন ওষুধে প্রতি দশ লিটার পানিতে মাত্র ২ গ্রাম ওষুধ দিলেও হবে। এতেই সকল প্রকার মশা মরে যাবে। ছিটানোর পর একটানা সর্বনিম্ন ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত যেহেতু কোন প্রকার লার্ভা জন্ম নিতে পারবে না ফলে ব্যাপক পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে। একইসঙ্গে নাগরিকগণও মশাবাহিত নানা রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। বর্তমানে সারা বছরব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। নতুন ওষুধের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পর পর ওষুধ ছিটালেও কাজ হবে ফলে মশক নিধনের জন্য বর্তমানের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম সময় কমে আসবে। এর মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ অন্যান্য নাগরিক সেবা অধিক পরিমাণে প্রদান করতে সময় ব্যয় করতে পারবে ও মশকমুক্ত রাজধানী গড়া সম্ভব হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট কর্নেল গোলাম মোস্তফা সারোয়ার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা নাগরিকদের মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে চলতি বছর এর আগেও ৪ দফা বিশেষ অভিযানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছি। তবে পুরনো পদ্ধতিতে ও পুরনো ওষুধ ছিটানো বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা চাই নগরবাসী মশার কামড় থেকে শতভাগ মুক্ত রাখতে একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব মশার ওষুধের প্রয়োগ করতে। তাই নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আজ শনিবার থেকেই আমরা চিহ্নিত ৬২৯টি স্পটে একযোগে অভিযান পরিচালনা করব। কিউলেক্সসহ সকল প্রকার মশক নিধনে ৪র্থ জেনারেশনের (৪ জি) স্বাস্থ্যসম্মত শক্তিশালী নোভালুরন নামের লার্ভিসাইড ওষুধ এনেছি। ইংল্যান্ড থেকে আনা অত্যন্ত কার্যকরী এই ওষুধে মরবে সকল প্রকার মশা। কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে পরিবেশের সুরক্ষাও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। প্রতি ১০ লিটার পানিতে মাত্র ২ গ্রাম এই নতুন এ ওষুধ (লার্ভিসাইড) মিশিয়ে একবার ওষুধ ছিটালে তা কার্যকর থাকবে কমপক্ষে ২-৩ মাস। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যলয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ ও ডিএনসিসির মহাখালীর নির্মিত কাচাবাজারের নীচতলায় এ নতুন ওষুধ ছিটিয়ে তার কার্যকরিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। ২ মাসে ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষায় সফলতাও মিলেছে।
×