ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কয়েক জঙ্গী গ্রেফতার

করোনায় জঙ্গীদের অনলাইন সম্মেলনের চেষ্টা

প্রকাশিত: ২১:৫২, ১৭ অক্টোবর ২০২০

করোনায় জঙ্গীদের অনলাইন সম্মেলনের চেষ্টা

গাফফার খান চৌধুরী ॥ করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে জঙ্গীরা। তারা অনলাইন সম্মেলন করার চেষ্টা করছে। খোদ রাজধানী থেকেই অনলাইন সম্মেলন করার প্রচারপত্র বিলির সময় সাত জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। যার মধ্যে ছয় জনই নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সদস্য। দীর্ঘ সময় পর নিষিদ্ধ এই জঙ্গী সংগঠনটি আবারও আলোচনার এসেছে। জঙ্গীরা করোনার কারণে ঘরে থাকা মানুষদের নানাভাবে জঙ্গীবাদে টানার চেষ্টা করছে। কারণ ঘরে থাকা অধিকাংশ মানুষই ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। সে সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। শুক্রবার ঢাকার রাজধানীর নর্দ্দা, ভাটারা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালায় জঙ্গীবাদ নিয়ে কাজ করা পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট। এন্টি টেররিজম ইউনিটের মিডিয়া উইংয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান জানান, জঙ্গীরা দেশে খিলাফত বা ইসলামী আইন কার্যকর করতে চায়। এজন্য তারা নানাভাবে মানুষকে জঙ্গীবাদের দিকে টানার চেষ্টা করছে। করোনার কারণে অধিকাংশ মানুষ ঘরে থাকছেন। তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। সেই সুযোগটিকেই পুরোপুরি কাজে লাগানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে জঙ্গীরা। পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে জানান, জঙ্গীদের করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নেয়ার বিষয়টি তারা অবগত। এজন্য তারা সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। অভিযানের ধারবাহিকতায় একের পর এক জঙ্গী গ্রেফতার হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযুবত তাহরীর, আল্লাহর দল, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবি, নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের সদস্য। সম্প্রতি নিষিদ্ধ পুরনো জঙ্গী সংগঠন হুজি বা হরকাতুল জিহাদে যোগদান করা কিছু যুবকও গ্রেফতার হয়েছে। হুজিও নতুন করে দল গোছানোর চেষ্টা করছে। গত ১৫ অক্টোবর মধ্যরাতে অনলাইনে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অপপ্রচার এবং উগ্রবাদ প্রচারের দায়ে ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে মোঃ সোহেল রানা ওরফে সাইদুল ইসলাম সোহেল (২৬) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একজন সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করে। তার কাছে জঙ্গীবাদের আলামতসহ একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল সেট, একটি বাটন মোবাইল সেট, ছয়টি বিভিন্ন অপারেটরের সিম কার্ড, একটি পেনড্রাইভ ও পিডিএফ আকারে বিভিন্ন উগ্রবাদী ও উস্কানিমূলক কনটেন্ট পাওয়া গেছে। সে গাজওয়াতুল হিন্দ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে অনলাইন প্রচারসহ রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করে আসছিল। তারা দেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের উদ্দেশে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। একই দিন রাতে রাজধানীর নর্দ্দা, ভাটারা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালানো হয়। গ্রেফতার হয় ছয় জঙ্গী। তারা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরিরের সক্রিয় সদস্য। তারা হচ্ছে, সোহেল (২৯), নুর মোহাম্মদ ওরফে অরুণ ওরফে নুর (৩০), ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ (২১), অর্ণব হাসান (২১), সাইফুর রহমান বাবর (৩০) ও নূর মোহাম্মদ শাকিল (২৬)। তাদের কাছে অনলাইন সম্মেলনের ২৬টি পোস্টার পাওয়া গেছে। এরাও দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। তিনি আরও জানান, উগ্রবাদী কার্যক্রমে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে তারা ফেসবুকে গোপনে গ্রুপ খুলে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। তারা দেশের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করার পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পরিকল্পনা করছে। জঙ্গীরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। জঙ্গীবাদ নিয়ে কাজ করা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মোতাবেক, শতকরা সত্তর শতাংশ জঙ্গী দল পরিবর্তন করেছে। তবে তারা আদর্শ থেকে সরে যায়নি। তাদের একটাই লক্ষ্য দেশে ইসলামী হুকুমত বা শাসন কায়েম করা। দল পরিবর্তন করার পর তারা নিজেদের নামও পরিবর্তন করে ফেলে। গ্রেফতার এড়াতেই তারা এমন কৌশল নিয়েছে। অধিকাংশ জঙ্গী গ্রেফতার এড়াতে জাতীয় পরিচয়ত্র করে না। সব জঙ্গী সংগঠন দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে। তাদের সরাসরি মদদ দিচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে পরিচিত দেশের অন্যতম একটি ইসলামী দল। দলটি বিএনপির সঙ্গে বহু বছর ধরে গাঁটছড়া বেঁধে রয়েছে। জঙ্গীদের অধিকাংশই প্রযুক্তি নির্ভর। যে সংগঠন যত বেশি গোপন প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী, সেই জঙ্গী সংগঠনের দিকে অন্যান্য জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদের ঝুঁকে পড়ার ঝোঁক বেশি। জঙ্গীদের দল পরিবর্তন করার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রথম প্রকাশ পায় ২০১০ সালের ২৪ মে জেএমবি আমীর ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা কমিটির সাবেক সদস্য মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফর গ্রেফতার হওয়ার পর। এমনকি দেশীয় জঙ্গীদের আত্মঘাতী হামলা চালানোর বিষয়টিও প্রকাশ পায় ওই সময়ই। জেএমবি আমীরের দেয়া জবানবন্দীতে উঠে আসে দেশে সব ইসলামী ও জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর যোগাযোগ থাকার বিষয়টি। এমনকি পুরনো সম্পর্কের জেরধরে জামায়াতের নামানুসারি জঙ্গী সংগঠনটির নাম রাখা হয় জেএমবি বা জামায়াতুল মুজাহিদীন। যদিও এমন অভিযোগ বরাবরই জামায়াতে ইসলামী ভিত্তিহীন বলে দাবি করে আসছে। জেএমবি প্রধানের ভাষ্য মোতাবেক, তিনি ছাত্র শিবিরের মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি, জামায়াতে ইসলামীর মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা শাখার আমির ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্যও ছিলেন। ওই সময় থেকেই তার সঙ্গে জেএমবির যোগাযোগ ছিল। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালে দলের নির্দেশে সাইদুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে জেএমবির প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জেএমবির আশি ভাগ সদস্যই ছাত্র শিবিরের। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগ বলছে, জেএমবিসহ বেশ কয়েকটি জঙ্গী সংগঠন নিষিদ্ধ হলে দলের সদস্যরা বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনে যোগ দিতে থাকে। তারমধ্যে অন্যতম হিযবুত তাহরীর। দেশে আধুনিক এই জঙ্গী সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা। স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডনে পড়ার সময় তিনি সংগঠনটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। জঙ্গীবাদে জড়িত থাকার দায়ে তিনি ব্রিটিশ পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছিল। দেশে ফিরে পুরনো কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ, বেসরকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শেখ তৌফিকসহ অনেকেই। ২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদকে প্রধান সমন্বয়কারী ও মুখপাত্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলাকে সিনিয়র উপদেষ্টা ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শেখ তৌফিককে রাজনৈতিক উপদেষ্টা করে তেরো সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে হিযবুত তাহরীর। ২০০৩ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোল টেবিল বৈঠকে বাংলাদেশে দলটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দেয়া হয়। একমাস পর মার্চ মাস থেকেই হিযবুত তাহরীর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। ছাত্র শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ২৩৪ নম্বর নিউ এলিফ্যান্ট রোডের খায়রুন্নেসা ভবনের নিজস্ব ঘাঁটিতেই হিযবুত তাহরীরকে দলীয় কার্যক্রম চালানোর জন্য অফিস দেয়। পরে পুরানা পল্টনের ৫৫/এ এএইচএম সিদ্দিক ম্যানশনের পঞ্চম তলায় হিযবুত তাহরীর প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে। রাজধানীতে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ সব সরকারী বেসরকারী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম চলত। এই জঙ্গী সংগঠনটির সঙ্গে দেশীয় ইসলামী ও জঙ্গী সংগঠন ছাড়াও আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা, জৈইশ-ই-মোস্তফা, উলফা, কমতাপুর লিবারেশন ফ্রন্ট, আফিস রেজা কমান্ডো ফোর্সসহ বহু বিদেশী উগ্র ও জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কতিপয় বিএনপি ও জামায়াতের বেশ কয়েকজনের প্রত্যক্ষ মদদে হিযবুত তাহরীর নামের জঙ্গী সংগঠনটি গঠন করা হয়। মূলত দেশের সব নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গীদের একত্রিত করতেই দলটি গঠন করা হয়েছিল। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৪ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। প্রসঙ্গত, ১৯৫৩ সালে পূর্ব জেরুজালেমের সাবেক বিচারক তাকিউদ্দিন আল-নাবানী হিযবুত তাহরীর নামের সংগঠনটি গঠন করেন। পরবর্তীতে জেরুজালেমের প্রধান মুফতি শেখ হাজী আমিন আল হোসাইনীর উগ্র মতবাদ দ্বারা সংগঠনটি প্রভাবিত হয়। মুফতি হোসাইনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসীদের সহযোগী ছিলেন। পরবর্তীতে হিযবুত তাহরীর বিশ্বে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয়। ২০০২ সালে ডেনমার্কে ইহুদী দেখামাত্র হত্যার ঘোষণা দিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছিল হিযবুত তাহরীর। এছাড়া ২০০৩ সালে তেলআবিবে এক মদের দোকানে বোমা হামলা চালিয়ে ৩ জনকে হত্যা, ২০০৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর উজবেকিস্তানের মার্কিন ও ইসরায়েলি দূতাবাসে আত্মঘাতী বোমা হামলা, ২০০৪ সালে তাজিকিস্তানের তাসখন্দ এলাকায় বোমা হামলা করে ৪৭ জনকে হত্যার জন্য হিযবুত তাহরীরকে দায়ী করা হয়। এমনকি আল কায়দা, তালেবান ও বৈশ্বিক জিহাদের জন্য কর্মী সংগ্রহের কাজের সঙ্গে হিযবুত তাহরীর জড়িত বলে আন্তর্জাতিকভাবে অভিযোগ রয়েছে। ২০০৮ সালে পাকিস্তানে হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দেশে সংগঠনটি নিষিদ্ধ হওয়ার পর এর সদস্যরা আবার আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের দল গঠন করে। এরপর তারাই আবার আনসার আল ইসলাম গঠন করে। মূলত এরাই ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন দলের হয়ে কাজ করছে। ঘন ঘন দল পরিবর্তন করায় তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। দল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নামও পরিবর্তন করে। এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, শুধু সব জঙ্গী সংগঠন নয়, দেশের অধিকাংশ ইসলামী সংগঠনের লক্ষ্য দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। জঙ্গীবাদ দমনে নানামুখী কার্যক্রম অব্যাহত আছে। র্যা বের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জনকণ্ঠকে বলেন, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ বলতে গেলে প্রায় শতভাগের কাছাকাছি সফল। হলি আর্টিজানের পর শুধু রযাে বই জঙ্গীবাদ বিরোধী পাঁচ শতাধিক অভিযান চালিয়েছে। যার মধ্যে ১৭টিই ছিল জঙ্গী আস্তানা। অভিযানে প্রায় আড়াই হাজার জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। ধারাবাহিক অভিযানে এখনও জঙ্গী গ্রেফতার হচ্ছে। র্যা বের চালানো অভিযানকালে মারা গেছে ২৫ জঙ্গী। আত্মসর্মপণ করেছে সাত জঙ্গী। উদ্ধার হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৫ কেজি উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক, নানা ধরনের বহু অস্ত্র, আত্মঘাতী হামলা চালানোর নানা সরঞ্জামাদিসহ নানা আলামত এবং জঙ্গীবাদে অর্থায়নের জন্য মজুদ করা কয়েক কোটি টাকা। যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয়েছে। পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোঃ কামরুল আহসান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ নিয়ে গভীরভাবে কাজ করছি। ভবিষ্যতে দেশে যাতে আর কোন দিন সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, এজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও জঙ্গীরা তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। আমরাও জঙ্গীদের গ্রেফতারে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রেখেছি। পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, ১৯৯৯ সাল থেকে চলতি বছর হালানাগদ পর্যন্ত সারাদেশে জঙ্গী সংক্রান্ত এক হাজারের বেশি হামলা হয়েছে। এসব মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার হয়েছে ৫ হাজারের বেশি জঙ্গী। যাদের মধ্যে অনেকেই জামিনের পর পলাতক রয়েছে। অধিকাংশ মামলাই দায়ের হয়েছে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। কারণ তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে দেশে জঙ্গীবাদের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছিল। ওই সময় জঙ্গীদের তৎপরতাও বেশি ছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের মূল উৎপাটন করতে চাই। সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও তারা কৌশলী অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। পুলিশের সাইবার বিভাগ ও জঙ্গীবাদ নিয়ে কাজ করা সূত্রগুলো বলছে, ফেসবুকে আনসার আল ইসলাম গাজওয়াতুল হিন্দ সমর্থনকারী বিভিন্ন আইডির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। জঙ্গীরা ফেসবুক আইডি ‘মুজাহিদ ইন লোন উলফ’ ও টেলিগ্রাম আইডি ‘জিহাদী সৈনিকসহ নানা আইডি ও গ্রুপ তৈরি করে জঙ্গী তৎপরতা চালানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এসব মাধ্যমে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন গ্রুপ ও চ্যানেলে যুক্ত হয়ে নিয়মিত প্রচার প্রচার চালিয়ে আসছিল।
×