ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাঠাও মানছে না কোন আইন

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ১৭ অক্টোবর ২০২০

পাঠাও মানছে না কোন আইন

মহামারী করোনার সময়ে জাতি যখন বিপর্যস্ত, সরকারের সুদূরপ্রসারী চিন্তার অভাবের কারণে যাতায়াতে জনদুর্ভোগ সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সরকার কিছুটা হলেও দায়ী জনসাধারণের এই যাতায়াত দুর্ভোগের জন্য। মাঝখানে ফায়দা লুটছে চিটিং সার্ভিস, নিরাপত্তাহীন বিরক্তিকর সাস্থ্যঝুঁকিতে পড়া যানবাহন। কেউ নেই দেখার। যারা আছেন তারা যেন টিনের চশমা পরে বসে আছেন। দেশের একজন মন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন। ফল হচ্ছে কিছু? জাতি ভাল বলতে পারবে। তেমনি কোন এক সময়ে তিনি এ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার শুভ সূচনা করলেন একটি লাল বাইকে চড়ে। তার দুষ্টমিষ্ট হাসিতে জাতি ভুলে গিয়ে ব্যবহার শুরু করল। সুফল যে এলো না তা কিন্তু নয়। কিন্তু ওই যে সুফল মিললেও রয়ে গেল শুভঙ্করের ফাঁকি। পাঠাও এ্যাপ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের উপকার যেমন হয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষ পরিচিত হলো নেশাখোর বাইক চালকদের উদাসীন বাইক রাইডের। ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি’ এমন অবস্থা। লোকেশন অনুযায়ী ভাড়া বেশি। সীমাহীন দুর্ব্যবহার সহ্য করেও মানুষগুলো রাস্তায় চলাচল করছে। কারণ একটাই নেতার পর নেতা এসেছে, মন্ত্রীর পর মন্ত্রী আমজনতার পায়নি সুফল, সব হয়ে গেছে কুফল। তেমনি এই পাঠাও এ্যাপ বাইক চালকরা। করোনার সময় সরকার তার প্রচার যন্ত্রে বার বার স্বাস্থবিধি নিয়ম মানতে বলে দিয়েছেন। মেনেছে কেউ? সে এক জানা-অজানা প্রশ্ন-উত্তর। বিশেষ নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও চালকরা না পরছেন পিপিই, না রাখছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আর নিরাপত্তা ওটা তো চিচিংফাক। কে দেখবে। মন্ত্রী মহোদয় তার এত ব্যস্ত সময়ে জনগণের দিকে নজর দেবেন কি করে। এই দেশে তো সবই করতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। তার জন্য সত্যি মায়া হয়। যাই হোক জনকণ্ঠের চোখে পাঠাওয়ের এই উদাসীনতা চোখে পড়ার পর কারণ খুঁজতে গিয়ে পাঠাওয়ের ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করার জন্য মেইল সেন্ড করার পর যখন কোন উত্তর আসে না। তখন মনে হয় জনগণের কাছ থেকে টাকা হাতানোটাই আসল উদ্দেশ্য, তাতে জনগণ মরুক আর বাঁচুক, তো যাকে তেল দেয়ার দরকার তার মাথায় তেল দিলেই হলো। এর পর এই প্রতিবেদন লিখতে গিয়ে আরও এক মজার বিষয় লক্ষ্য করা গেলো। বিআরটিএ ওয়েব সাইটে ঢু মারতে গিয়ে সে এক আচানক অবস্থা। ওপেন হয় তো হয় না। কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর অনুসন্ধান করার জন্য ক্লিক করতে বের হলো ব্যাড গেটওয়ে। তাহলে আর আমরা ডিজিটাল হলাম কিভাবে? তাই সময় থাকা সত্ত্বেও বড় কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হলো না। এরপর আসা যাক সেই পাঠাও এ্যাপে। অনুসন্ধানের শেষের দিকে মাঠে জনকণ্ঠ টিম। কি দেখলাম? দেখলাম পাঠাও চালকরা বুক ফুলিয়ে চিত করে বাইক নিয়ে ভো ভো করে চালাচ্ছেন। যাত্রী সেই আম কাঁঠালের বস্তা। কি করবে? গণপরিবহন তো আর নিজের মর্জি দিয়ে চলে না, চলে লালবাতি দেয়া গাড়ির ব্যক্তির জন্য। যেখানে একটু পর পর বিকট হুইসেলে (হুডার) জ্যামের মধ্যেও সার্কাসের জোকারের মতো লোক দেখানোর জন্য বিকট শব্দে নিজেকে ভিআইপি প্রমাণের চেষ্টা। যাত্রীকে প্রশ্ন করলাম, ভাই আপনাকে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় পাঠাও চালক কোন রকম চেষ্টা বা প্রচেষ্টা করেছেন? যাত্রী মুখ বাঁকিয়ে বললেন, না। তাড়া ছিল তাই চলে গেলেন। তাহলে এখন সহজভাবেই বলা যায় এত উদাসীনতা কেন পাঠাও কোম্পানির। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে এই এ্যাপ বানিয়ে যদি ব্যবসা করার উদ্দেশ্য থাকে? তাহলে এত ঘটা করে আবার প্রচার কেন। কেউ দেখার নেই। সামনে আরও ভয়াবহ সময় আসছে। সরকার প্রধান নিজেই এই সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য জাতিকে সাবধান করে দিয়েছেন। আর পাঠাও নিজেকে এত পাওয়ারফুল ভাবে যে, সরকারের স্বাস্থবিধি অনুসরণ না করে চুটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ ( ২০১৮ সনের ৬১ নং আইন ) আইনে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। জনকন্ঠের পাঠকদের সামনে এই আইনটির বিশেষ কিছু রিলেভেন্ট ধারা, উপধারা উল্লেখ করা হলো: -এই আইনটির সংক্রামক রোগের: উপধারা (ভ) উল্লেখ করা আছে যে, সরকার কর্তৃক, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ঘোষিত কোনো নবোদ্ভূত বা পুনরুদ্ভূত (Emerging or Reemerging) রোগসমূহ। - অধিদপ্তরের দায়িত্ব ও কার্যাবলি: উপধারা (ত) সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে উড়োজাহাজ, জাহাজ, জলযান, বাস, ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহন দেশে আগমন, নির্গমন বা দেশের অভ্যন্তরে এক স্থান হইতে অন্য স্থানে চলাচল নিষিদ্ধকরণ; -সংক্রমিত এলাকা ঘোষণা, প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, ইত্যাদি: উপধারা (খ) সংক্রমনের বিস্তার নির্মূল বা সীমিত করার জন্য সংক্রমিত ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, গৃহ, আঙ্গিনা, বাসস্থান বা যানবাহন। -যানবাহন জীবাণুমুক্ত করণের আদেশ প্রদানের ক্ষমতা: ধারা ১৮ তে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর নিকট যদি এইরূপ বিশ্বাস করিবার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে যে, কোনো যানবাহন সংক্রামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হইয়াছে বা উহাতে সংক্রামক জীবাণুর উপস্থিতি রহিয়াছে, তাহা হইলে তিনি উক্ত যানবাহন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, জীবাণুমুক্তকরণের জন্য উক্ত গাড়ীর মালিক বা স্বত্বাধিকারি বা তত্ত্ববাবধায়ককে নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন। -জীবাণুযুক্ত যানবাহন, দ্রব্যাদি জব্দ, ইত্যাদি: ধারা ১৯ এর উপধারা (১) কোনো যানবাহন, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি বা পশুপাখি সংক্রামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হইলে বা আক্রান্ত হইয়াছে বলিয়া যুক্তিসঙ্গতভাবে ধারণা হইলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী উহা জব্দ করিতে পারিবেন। (২) ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারী উপ-ধারা (১) এর অধীন জব্দকৃত যানবাহন, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি বা পশুপাখি জীবাণুমুক্তকরণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। - দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান ও নির্দেশপালনে অসম্মতি জ্ঞাপনের অপরাধ ও দণ্ড: ধারা ২৫ এর উপধারা (২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। -মিথ্যা বা ভুলতথ্য প্রদানের অপরাধ ও দণ্ড: ধারা ২৬ এর উপধারা ২৬ এর (১) যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য প্রদান করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ। (২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ২ (দুই) মাস কারাদণ্ডে, বা অনূর্ধ্ব ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অতিদ্রুত সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ্যাপভিত্তিক যানবাহনকে মনিটরিং করতে হবে। সেখানে পাঠাওকে কোনভাবেই ছাড় দেয়া ঠিক হবে না। অন্যথায় পরিবার, সমাজ ও দেশ বিপদে পড়বে। লেখকের ই-মেইল : [email protected]
×