ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নওগাঁয় বাফার গুদামের স্থান নির্ধারণ নিয়ে রশি টানাটানি

প্রকাশিত: ২০:২৭, ১৭ অক্টোবর ২০২০

নওগাঁয় বাফার গুদামের স্থান নির্ধারণ নিয়ে রশি টানাটানি

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ১৬ অক্টোবর ॥ নওগাঁয় বাফার গুদাম নির্মাণে গোড়ায় গলদ দেখা দিয়েছে। ‘সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার্থে’ গুদাম নির্মাণ করতে চায় সরকার, অথচ সেদিকে খেয়াল না রেখেই স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থান পরিবর্তনে জেলা প্রশাসন ও বিএফএ দফায় দফায় আবেদন করলেও আমলে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের মতামত উপেক্ষা করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তারা। ফলে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে ব্যবসায়ী মহলে। জানা গেছে, সার সরবরাহ ও কৃষকের মাঝে বিতরণ সহজ করতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৪টি গুদাম নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)। সেই প্রকল্পের অধীনে নওগাঁ জেলায় ২৫ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার একটি গুদাম নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালে। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। সেই মোতাবেক প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা প্রথমে স্থান নির্ধারণ করতে আসেন। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মোট তিনটি স্থান প্রস্তাবনায় আনা হয়। স্থানগুলোর মধ্যে প্রথমটি ছিল নওগাঁ সদর উপজেলার কুরিয়া, দ্বিতীয়টি মহাদেবপুর উপজেলার হাঁপানিয়া ও তৃতীয়টি ছিল সদর উপজেলার খাট্টা সাহাপুর। স্থানগুলোর প্রত্যেকটিই সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রথমটি অর্থাৎ কুমুরিয়া নামক স্থানেই গুদাম নির্মাণ করার পক্ষে মত দেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিএফএ নেতৃবৃন্দ। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের মতামত উপেক্ষা করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা প্রস্তাবনার তৃতীয়টি অর্থাৎ খাট্টা সাহাপুর মৌজার জায়গাটি গুদাম নির্মাণের জন্য চূড়ান্ত করেন। এই খবর জানতে পেয়ে বিসিআইসির ডিলাররা লিখিতভাবে স্থান পরিবর্তনের আবেদন করেন। স্থান পরিবর্তন করে কুমুরিয়ায় গুদাম নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসনও লিখিত দেয় ওপর মহলে। কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে সংশ্লিষ্টরা খাট্টা সাজাপুরে গুদাম নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণে টাকা বরাদ্দ দেয়। বিএফএ নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি রেজাউল করিম জানান, গুদাম নির্মাণের জায়গা নির্ধারণে কর্তৃপক্ষ ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। খাট্টা সাহাপুর একটি আবাসিক এলাকা। সেখানে গুদাম নির্মাণ করতে গেলে একদিকে জমি অধিগ্রহণে বেশি অর্থব্যয় হবে অন্যদিকে সুফল থেকে বঞ্চিত হবে নওগাঁবাসী। গুদাম নির্মাণের উদ্দেশ্য সফল হবে না। তাছাড়া খাট্টা সাহাপুর বগুড়া জেলার সান্তাহার সংলগ্ন। তার নিকটেই বিসিআইসির একটি বাফার গুদাম আছে। সেখানে সার নিতে গিয়ে চরম বিড়ম্বনা পোহাতে হয় নওগাঁর ডিলারদের। কৃষকদের মাঝে সময় মতো সার সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়ে। এই বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেতে স্থান পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। তিনি আরও বলেন, কুমুরিয়ায় অধিক পরিত্যক্ত জমি আছে। ভবিষ্যতে প্রয়োজন মতো আরও জমি অধিগ্রহণের সুযোগও রয়েছে। এদিকে স্থানীয়দের মতামত উপেক্ষা করে স্থান নির্ধারণ করায় ব্যবসায়ী ও কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জোর করে খাট্টা সাহাপুরে গুদাম নির্মাণ করা হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। এসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি নওগাঁর জেলা প্রশাসক হারুন অর রশিদ। তবে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে গুদামের স্থান পরিবর্তনের জন্য জেলা প্রশাসন দুই দফায় আবেদন করেছে। ২০২০ সালের মার্চ ও সেপ্টেম্বর মাসে আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত কোন জবাব আসেনি। উপরন্তু খাট্টা সাহাপুর মৌজায় জমি অধিগ্রহণের জন্য সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের কাছে ৩০ কোটি ৭৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকার একটি চেক পাঠিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম জানান, স্থানীয় প্রশাসনের মতামতের ভিত্তিতেই স্থান নির্ধারণ হয়েছে। স্থান পরিবর্তন করা, না করা এখন ওপর মহলের বিষয়। এরচেয়ে বেশি কিছু বলার সুযোগ নেই। স্থানীয়দের মতামতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।
×