ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

তৎপর গাড়ি ছিনতাইকারী সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ২০:২৫, ১৭ অক্টোবর ২০২০

তৎপর গাড়ি ছিনতাইকারী সিন্ডিকেট

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তৎপর গাড়ি ছিনতাইকারী সিন্ডিকেট। গাড়ি ছিনতাইয়ে ব্যবহার করছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার। গাড়ি ছিনতাকারী চক্রের সদস্যরা নগরীর সিটিগেট থেকে মীরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট পর্যন্ত কমপক্ষে ১০/১২টি স্পটে এ ধরনের ছিনতাইকারীরা ওঁৎপেতে থাকে। এসব স্ট্যান্ড থেকে যাত্রীবেশে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা গাড়ি ভাড়া নিয়ে আবার ওই গাড়িই ছিনতাই করে। বিকাশে ও এসএ পরিবহনে অর্থ আদায় করে চক্রের সদস্যরা। হাইওয়ে ও জেলা পুলিশের টিম দিনের বেলায় রাস্তায় থাকলেও রাতে আর দেখা যায় না। অভিযোগ রয়েছে, এ ধরনের সিন্ডিকেট সদস্যরা গাড়ি চালককে মারধর করাসহ অজ্ঞান এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। তবে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বহীনতার কারণে আতঙ্কে গাড়িচালক, মারিক ও শেয়ারে যাত্রীরা। সম্প্রতি ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এর এক অভিযানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অনিরাপদ ও গাড়ি ছিনতাই চক্রের ওঁৎপেতে থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। এ ছাড়াও নগরীর কর্নেল হাট ও সিটিগেট এলাকা থেকে কুমিরাঘাট পর্যন্ত সন্দ্বীপের যাত্রীরাও আতঙ্কে আছে এ ধরনের চক্র ওঁৎপেতে থাকায়। কারণ কুমিরা ঘাটে যাওয়ার জন্য অনেকে শেযারে যাতায়াত করে। আরও অভিযোগ রয়েছে, নগরীর কর্নেল হাট, নিউ মনসুরাবাদ, সিটি গেট,ফফকিরহাট, ফৌজদারহাট, ভাটিয়ারী, ছোট কুমিরা, বড় কুমিরা. ছোট কমলদহ, বাড়বকুন্ড বাজার, সীতাকুন্ড বাসস্ট্যান্ড, মীরসরাই, বারৈয়ারহাট, লালপোল ও মহিপাল। এসব স্পটে কার নিয়ে যাত্রী পরিবহনের উদ্দেশ্যে বসে থাকে চালক ও মালিক। এসব গাড়ির যাত্রী টিক করে দিতে রয়েছে দালাল চক্র। মাত্র ১শ’ টাকায় দালাল চক্রের সদস্যরা গাড়ি যাত্রীতে লোড করে দেয়। তবে ছিনতাইকারী চক্র কৌশলে বেশি টাকায় দালাল চক্রকে ম্যানেজ করে গাড়ি ভাড়া নিয়ে নেয়। এ ধরনের ঘটনায় ঘটে যায় বিপত্তি। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনার মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই গাড়ি ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ছিনতাইকৃত গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। আরেকটি গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আসামি মহিউদ্দিন ৮/৯ জেলে খেটে জামিনে বেরিয়ে আবরও একই ঘটনা ঘটিয়েছে। মাত্র ১৫ কিলোমিটারের জন্য আটশত টাকায় ভাড়া করেছিল ছিনতাইকারী চক্র। তবে এ ধরনের ঘটনা গভীর রাতে ও চালকের লোভের কারণে হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম অদালত সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে যাত্রীবেশে গাড়ি ছিনতাইয়ের অপরাধে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। উদ্ধার করা হয়েছে ছিনতাইকৃত টয়োটা স্প্রিন্টার গাড়িটি। ছিনতাইয়ের সময় গাড়িতে থাকা ৪ আগামী রবিবার চট্টগ্রাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি ছিনতাই কাজে যুক্ত থাকা চক্রের তথ্য উদ্ধারের জন্য নিজাম উদ্দিন নামের এক আসামিকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সিআইডি দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ১১টায় সীতাকুন্ড থানাধীন কদম রসুল বাজার থেকে নগরীর সিটিগেট সংলগ্ন পাক্কার মাথা এলাকায় আসার জন্য ৪ যাত্রী গাড়িটি ভাড়া করে। ৮শ টাকায় ভাড়াকৃত গাড়িটি নিয়ে নগরীর ফৌজদারহাট এলাকায় পৌঁছালে গাড়ির চালক মোঃ শাহীনকে গলায় ধারালো অস্ত্র ধরে ও পিঠে পিস্তল ঠেকায়। এ সময় চালককে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক সড়কে নিতে বাধ্য করে। লিংক সড়কের কিছুদূর যাওয়ার পর চালককে মারধর করে সঙ্গে থাকা মোবাইলসহ গাড়িটি (চট্টমেট্টো-গ-১১-৫৪৬২) ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সীতাকুন্ড থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় ২৭ সেপ্টেম্বর। সীতাকুন্ড থানাধীন ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সফিকুল ইসলামকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে ৩০ সেপ্টেম্বর সিআইডি মামলাটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ করা হয় এসআই চৌধুরী প্রমোজকে। গত ১ অক্টোবর মামলার বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ছিনতাইকৃত মোবাইল থেকে গাড়ির মালিক সৈকত দাশ ও তার বাবা সুবাস কুমারের কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করে ছিনতাই চক্র। দাবিকৃত অর্থের কিছু অংশ বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধও করা হয়েছে। বিকাশের সূত্র ধরে সিআইডি এ ঘটনার মূল আসামি মোঃ মহিউদ্দিন, নিজাম উদ্দিন, সোহেল, জাবেদ, রফিকুল আলমকে গ্রেফতার করে শনিবার পর্যন্ত। কর্ণফুলী থানাধীন শিকলবাহাস্থ আহসানিয়া পাড়া হতে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। ঝিনাইদহস্থ শাহিন রেজার বাড়িতে মামলার আসামি মোঃ মহিউদ্দিনকে আশ্রয় দেয়ার অপরাধে শাহিনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে মহিউদ্দিন এ ধরনের ঘটনায় এর আগেও জেলখেটে জামিনে বেরিয়েছে।
×