ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে আসছে নগরীর সিনেমা বিনোদনের অধ্যায়

বগুড়ায় নির্মিত হচ্ছে আধুনিক সিনেপ্লেক্স ও মাল্টিপ্লেক্স

প্রকাশিত: ২০:২৪, ১৭ অক্টোবর ২০২০

বগুড়ায় নির্মিত হচ্ছে আধুনিক সিনেপ্লেক্স ও মাল্টিপ্লেক্স

সমুদ্র হক ॥ অতীতে পরিবারের সঙ্গে সিনেমা দেখা ছিল নগর জীবনে বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ। ওই সময়ের তারুণ্যে চুপি চুপি সিনেমা দেখাও ছিল আনন্দের। প্রিয় তারকার ছবি কে যে কতবার দেখেছিল...। একদা শহর ও নগর জীবন ছিল বিনোদনের সিনেমাকেন্দ্রিক। কোন ছবি কবে কোন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে তাও ছিল জানার আগ্রহ। ঢাকা চট্টগ্রাম খুলনার পরে সিনেমা হলে ছবি মুক্তি পাওয়ার তালিকায় বগুড়া ছিল এগিয়ে। বগুড়ার দর্শকরা ছিল সিনেমা পাগল। ভাল ছবির পাগল এখনও আছে। সেই বগুড়া শহরে সিনেমা হল ভেঙ্গে একে একে গড়ে উঠেছে আধুনিক অভিজাত মার্কেট। সিনেমার দর্শক যাও ছিল ভাল ছবি ও হলের ভেতরে পরিবেশের অভাবে তারা ছিটকে পড়ল টিভির অনুষ্ঠানের দিকে। নিকট অতীতে রাতে টিভি সেটের সামনে পরিবারের সদস্যরা এক সঙ্গে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করত। বিদেশী টিভির সিরিয়াল ও হৈ-হুল্লোড়ের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান গ্রাস করল সেই পারিবারিক আবহ। তারপর ট্যাব স্মার্ট ফোনে টিভির অনুষ্ঠান ঘরের ভেতরে একান্ত আপনে প্রবেশ করল। সিনেমা দেখার সেই দিনগুলো এভাবেই হারিয়ে যেতে বসেছে। এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাল্টিপ্লেক্স এবং সিনেপ্লেক্স নির্মিত হলে দর্শকরা ভাল ছবি দেখার প্লাটফর্ম খুঁজে পায়। যদিও একদল বলছে, এই সিনপ্লেক্স টিকবে না ওভার দ্য টপের (ওটিপি) থাবায়। ওটিপি হলো বিশ্বের মানুষের বিনোদনের এক ধরনের প্লাটফর্ম। যা যে কোন সময় হাতের মুঠোয় স্মার্ট ফোন বা ট্যাবে প্রিয় অনুষ্ঠান দেখা যায়। তারপরও সামনের দিনে সিনেপ্লেক্সের ভবিষ্যত অনেক ভাল। সিনেমা দর্শকগণ হলে বসে ছবি দেখে যে আমেজ পেত তেমনই আমেজ পাবেন সিনেপ্লেক্সে। হয়ত সিনেমা হলের মতো বড় পরিসরে বড় পর্দা থাকবে না। তবে যা থাকবে সেই পর্দাও সিনেমা হলের মতো। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর বগুড়ায় নির্মিত হয়েছে এবং আরও হচ্ছে সিনেপ্লেক্স। কর্তৃপক্ষ বলেছেন, সিনেমা হলে ছবি প্রদর্শনের অনুমতি দেয়ার সঙ্গেই বগুড়ার অন্তত দুটি সিনেপ্লেক্সে ছবি প্রদর্শন শুরু হবে। এর মধ্যে অন্যতম মাল্টিপ্লেক্স সংযুক্ত সিনেপ্লেক্স মধুবন। বগুড়ার অন্যতম মধুবন সিনেমা হলই রূপান্তরিত হয়েছে মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হলে। প্রতিষ্ঠানের অন্যতম পরিচালক রুবেল জানালেন, উত্তরবঙ্গে বগুড়ায় এই প্রথম সিনেপ্লেক্সকে ঘিরে মাল্টিপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে। বগুড়ার প্রাচীন সিনেমা হল উত্তরা ও মেরিনা ভেঙ্গে শপিংমল গড়ে উঠেছে। মাধু ও মেট্রো সিনেমা হল ভেঙ্গেও গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন। সেখানে ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি বসেছে। অন্যান্য সিনেমা হল ভেঙ্গে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। মধুবন সিনেমা গত শতকের ৭০-এর দশকের প্রথম দিকে বগুড়ার চেলোপাড়া এলাকায় গড়ে তোলা হয়। ওই সময় ওয়েজ আর্নার স্কিমে আনা ভারতীয় ছবির পাশাপাশি হলিউডের পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি প্রদর্শিত হতো। এতদিন মধুবন সিনেমা হল বন্ধ হয়নি। কোনভাবে চলছিল। প্রতিষ্ঠানের অন্যতম পরিচালক বলেন, দর্শক যে এখনও ভাল ছবি দেখে তার প্রমাণ পেয়েছেন ‘আয়নাবাজী’ ছবি প্রদর্শনের সময়। দর্শকদের ভিড় সেই সময়ের সিনেমা হলের কথা মনে কিরিয়ে দেয়। তখন পরিচালক হলের জীর্ণদশা দেখে লজ্জা পেয়েছিলেন। এই দর্শকদের তিনি কোথায় বসতে দিচ্ছেন। কোন পর্দায় ছবি দেখাচ্ছেন। তখনই বুঝে ফেলেন ভাল ছবির দর্শক এখনও আছে। সিদ্ধান্ত নেন দর্শকদের ফের হলে টেনে আনবেন সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করে। পরিচালক শায়েখুজ্জামান বলেন, সরকার সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি দেয়ার সঙ্গেই দেশের ও বিদেশের ভাল ছবিগুলো প্রদর্শিত হবে তার সিনেপ্লক্সে। সিনেপ্লেক্সের আসন সংখ্যা ৩৪০। আসন বিন্যাসের গ্যালারি আধুনিক। মুম্বাই থেকে পর্দা ও উন্নত সাউন্ড সিস্টেম এনে বিশ্বমানের উপযোগী করা হয়েছে। বলেন তিনি দেশের ভাল ছবি প্রদর্শন করতে চান। এজন্য এফডিসি থেকে উন্নতমানের ছবি নির্মাণ করা দরকার। বর্তমানের দর্শকরা অনেক সচেতন। ছবি ভাল না হলে তারা সিনেপ্লেক্সেও আসবে না। আর ভাল ছবি প্রদর্শিত হলে দর্শক অবশ্যই আসবে। এর প্রমাণ দিয়েছে বাংলাদেশেরই কিছু ভাল ছবি। একই কথা বলেন বগুড়া টিএমএসএসের পরিচালনায় পাঁচ তারকা হোটেল মম ইন সংযুক্ত সিনেপ্লেক্সের পরিচালক। তিনি বলেন, বগুড়া শহর থেকে কিছুটা দূরে তাদের সিনেপ্লেক্সেও ভাল ছবির দর্শক ছিল। করোনার কারণে সিনেপ্লেক্সও বন্ধ আছে। ছবি প্রদর্শনের অনুমতির সঙ্গেই সিনেপ্লেক্স চালু হবে। বগুড়া শহরের বহুতল শপিং কমপ্লেক্স রানার প্লাজাতেও সিনেপ্লেক্স স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। নবাববাড়ি সড়কের ধারে দুটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনে সিনেপ্লেক্স নির্মাণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সকলের কথা বগুড়ার মানুষ বিনোদনপিয়াসী। উন্নতমানের সিনেপ্লেক্সে ভাল ছবি প্রদর্শিত হলে দর্শক ছবি দেখতে যাবে। এতদিন সিনেমা হলের পরিবেশে ও অব্যবস্থাপনার কারণে দর্শক দলমুখী হয়নি। সিনেপ্লেক্স দর্শকদের সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ছবি প্রদর্শিত হয় সিনেপ্লেক্সে। বগুড়ার মধ্যবয়সী কয়েকজন সিনেমা দর্শক বলেন, একদা সুপরিসর সিনেমা হলের বেশি আসন ও বড় পর্দায় ছবি দেখার দিন হয়ত ফুরিয়ে এসেছে। তবে দর্শক যে ভাল ছবি দেখে তার প্রমাণ দিয়েছে ঢাকার সিনেপ্লক্সগুলো। বগুড়াতেও সেই ঢেউ এসে ভাল সিনেমার দর্শক তৈরি হবে। পরিবার বন্ধুবান্ধব স্বজন প্রিয়জনদের নিয়ে ফের দর্শকরা সিনেমা হলের বিকল্প ধারার সিনেপ্লেক্সে যাবে। বগুড়ার এই সিনেপ্লেক্সও হবে নগরীর বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ।
×