ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীরা অনিশ্চয়তায়

প্রকাশিত: ২০:২৩, ১৭ অক্টোবর ২০২০

ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীরা অনিশ্চয়তায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের লাইন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ঢাকার দক্ষিণের বাসিন্দারা। ডিএনসিসি মাটির নিচ দিয়ে ইন্টারনেট লাইন টানার নির্দেশ দেয়ার পর রাস্তাঘাটে অবস্থিত বিভিন্ন বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে তার অপসারণ করা হয়। তবে নতুন লাইন নিশ্চিত না করেই তার অপসারণ করায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সমস্যায় ভুগছেন। থাকছে না ইন্টারনেট। একেক দিন একেক এলাকায় তার অপসারণের ফলে কোথাও ইন্টারনেট থাকছে না। ফলে যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী তারা অনলাইনে লেখাপড়ার সুযোগ হারাচ্ছেন। চলতি বছরের আগস্ট থেকে মাথার উপরে ঝুলে থাকা এসব তার সরিয়ে নিতে অভিযান পরিচালনা করছে ডিএনসিসি। ডিএনসিসির বক্তব্য, দক্ষিণ সিটি এলাকায় ব্যবসা করতে হলে কর্পোরেশনের লিখিত অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু কেউ কর্পোরেশন থেকে অনুমতি নেয়নি। এ ছাড়া মাটির নিচ দিয়ে এসব সংযোগ থাকার কথা থাকলেও যত্রতত্র মাথার ওপর দিয়ে ক্যাবল টানা হচ্ছে। এতে নগরীর সৌন্দর্য্য বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জনজীবনে ঝুঁকি বাড়ছে। তবে করোনা মহামারীর এই সময়ে অনলাইনে পরীক্ষা, ভার্চুয়াল সভা, কেনাকাটাসহ নানা কাজ থমকে গেছে এই ইন্টারনেট লাইন কেটে দেয়ার কারণে। আগে থেকে কোন ঘোষণা না দেয়ায় হঠাৎ ইন্টারনেট লাইন না পেয়ে নিত্য ভোগান্তিতে পড়ছেন নাগরিকরা। জিগাতলা এলাকার বাসিন্দা নবম শ্রেণীর ছাত্রী সায়েমা বিনতে জসীম বলেন, ইন্টারনেটেই এখন পড়ালেখার সব কাজ সারতে হচ্ছে। আমাদের বাসায় বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) থেকে তিন দিন ধরে ইন্টারনেট নেই। করোনার এই সময়ে অনলাইনেই আমাকে পড়ালেখা করতে হয়। শুনলাম তার নাকি কেটে দিয়েছে। কোন কথা না বলে কীভাবে তার কেটে দেয়? আর মোবাইল ইন্টারনেটেও ব্রডব্যান্ডের মতো কাজ চালানো সম্ভব নয়। সেই খরচটাই বা কে দেবে? একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যকলার শিক্ষার্থী আসিফ আলতাফ জামান ভুবন বলেন, মোবাইল ইন্টারনেট দিয়ে তো আর পোষায় না, আমার এ্যাসাইনমেন্ট চলছিল। তবে সেই কাজে ভাটা পড়ল ইন্টারনেট চলে যাওয়ায়। বন্ধুদের সঙ্গে আমাকে গ্রুপ স্টাডিতে বসতে হয়। তবে গত তিন দিনে আমি পিছিয়ে পড়ছি। ধানম-ি, বেইলি রোড, শান্তিনগর, হাতিরপুল, সেগুনবাগিচা, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, নয়াপল্টন, কাকরাইলসহ ৪৮টি এলাকায় অভিযান চালিয়েছে ডিএনসিসি। এসব এলাকায় ২৮৫টি বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে তার অপসারণ করা হয়েছে। বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা মাহ্শীদ নূর বলেন, আমি বাচ্চাদের অনলাইনে ক্লাস নেই। গত কয়েক দিন ধরে আমাদের বাসায় ব্রডব্যান্ড সংযোগটি বিচ্ছিন্ন। বিনোদনের কথা না হয় বাদ দিলাম, বাচ্চাদেরকে পড়া শেখাতে আমাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। লাইন মাটির নিচ দিয়ে নেবে নাকি মাথার উপরে থাকবে সেসব বিষয়ে আরও আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করা উচিত ছিল। তাহলে হয়তো এমন ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। ধানম-ি শংকর এলাকার বাসিন্দা আলোকচিত্রী যুবাইদ কাদির বলেন, মাঝে মাঝে মনে হয় কোন কাজেই এই শহরে একটু শান্তি নেই। ইন্টারনেটের এই সমস্যার কারণে সারাদিন শেষে রাতে বাসায় এসে যে ছবিগুলো কোথাও পোস্ট করব সেটার সুযোগ নেই। আশা করছি এর একটা সমাধান আসবে। মাটির নিচ দিয়ে সংযোগ তার সঞ্চালন করে সেটা গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর দুটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপটি ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক বা এনটিটিএন অপারেটরদের। এরা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) লাইসেন্সপ্রাপ্ত। তারা মাটির নিচ দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবারের সংযোগ সঞ্চালন করে এবং প্রতিটি ভবনে বিতরণ কেন্দ্র বা ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট স্থাপন করে। দ্বিতীয় ধাপে ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এনটিটিএন অপারেটরদের বিতরণ কেন্দ্র থেকে সংযোগ নিয়ে সেটি গ্রাহকদের ঘরে ঘরে পৌঁছায়। এই বিষয়ে ডিএসসিসির মুখপাত্র মোঃ আবু নাছের একটি জাতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, মাথার ওপর ঝুঁকিপূর্ণভাবে কোন ক্যাবল থাকবে না, অবৈধ সংযোগ থাকবে না, এটাই সিদ্ধান্ত। মাটির নিচে সংযোগ সঞ্চালনের বিদ্যমান যে অবকাঠামো আছে, সেটি এখন পর্যন্ত কোন আইএসপিএবি ব্যবহার করছে না। তারা যদি সেগুলো ব্যবহার করত, তাহলে হয়তো বলা যেত যে ক্যাবলের জঞ্জালকে শৃঙ্খলায় আনতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছা আছে।
×