ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মৎস্যসম্পদ লুট বন্ধে-

প্রকাশিত: ২০:০৭, ১৭ অক্টোবর ২০২০

মৎস্যসম্পদ লুট বন্ধে-

সরকার সমুদ্র অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জোরালো ভূমিকা নিয়েছে, এর সঙ্গে প্রয়োজন সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ। নতুন অর্জিত সমুদ্রসীমায় দেশীয় ফিশিং বোটের মাঝি ও ট্রলারের নাবিকরা এখনও মৎস্য আহরণ শুরু করতে পারেনি আধুনিক বিভিন্ন উপকরণ না থাকার কারণে। ফলে ওই এলাকায় অনাহরিত রয়ে গেছে বিপুল পরিমাণ মৎস্যসম্পদ, যা বিভিন্ন সময় লুট হয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই বাংলাদেশকে এই লুট বন্ধ করতে হবে। ইলিশের প্রজনন সুবিধার্থে বুধবার থেকে পরবর্তী ২২ দিন বিভিন্ন জেলার নদ-নদী ও মোহনায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক না ভাবার কারণ নেই। এ সময় প্রতিবেশী দুই দেশের ফিশিং বোট ও ট্রলার যাতে বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে ঢুকে মৎস্যসম্পদ লুট করতে না পারে সে বিষয়ে আরও কঠোর ভূমিকা পালনের আহ্বান অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, এক দেশের সমুদ্রসীমানা থেকে অন্য দেশের মৎস্য আহরণকারীদের গোপনে মাছ নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে চুরি বা লুট যে অভিধাই দেয়া হোক না কেন তা অবৈধ। চুরিকর্মে নিয়োজিতদের নিজ দেশের জন্য অবশ্যই অসম্মানজনক। তাই এদিকটিতে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারেরও নজর দেয়া দরকার। বৈধ, অপ্রতিবেদিত এবং অনিয়ন্ত্রিত (আইইউইউ) মৎস্য আহরণ সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি প্রাণঘাতী হুমকিতে পরিণত হয়ে আসছে বহুকাল যাবত। দেশী ও বিদেশী মাছ ধরার জলযানগুলো প্রায়শই বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকার মৎস্যসম্পদ অবৈধভাবে কুক্ষিগত করে নিচ্ছে। মোট ১১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার আঞ্চলিক সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল (এনএম) একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইইজেড) এবং ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল (এনএম) পর্যন্ত মহীসোপান ঢালের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলের অভ্যন্তরে, সাগর জুড়ে রয়েছে বিপুল পরিমাণে মূল্যবান মৎস্যসম্পদ। বঙ্গোপসাগরের সর্বমোট ৮০ লাখ টন মাছের মধ্য হতে বাংলাদেশ প্রতি বছর আনুমানিক মাত্র ৭ লাখ টন মাছ আহরণ করে থাকে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে (এফওয়াই) বাংলাদেশের সর্বমোট মৎস্য উৎপাদনে সামুদ্রিক খাতের অবদান ছিল প্রায় ৬.৫৫ লাখ মেট্রিক টন (১৫.১৩%)। তাই সামুদ্রিক মৎস্য খাতটিকে সমৃদ্ধিশালী করে তুলতে এবং বঙ্গোপসাগরের আইইউইউ মৎস্য আহরণ মোকাবেলার জন্য আমাদের সম্ভাবনাগুলোকে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশ সরকার সুনীল অর্থনীতি ধারণার সমর্থনে ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগর এলাকায় আইইউইউ মৎস্য শিকারের বিরুদ্ধে লড়তে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সামুদ্রিক কূটনীতি অত্যাবশ্যক। আইইউইউ মৎস্য শিকার মোকাবেলায় উন্নত দেশসমূহ কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারে। আইইউইউ মৎস্য শিকার মোকাবেলায় বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর গৃহীত পদক্ষেপ থেকে শিক্ষা নিতে পারে এবং তাদের কাছ থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারে। বঙ্গোপসাগর এলাকায় আমাদের আইইউইউ মৎস্য শিকার সম্পর্কিত ব্যাপক গবেষণা কার্যক্রম এবং সচেতনতা গড়ে তোলা ও প্রাসঙ্গিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা প্রয়োজন, যাতে করে আমরা আইইউইউ মৎস্য শিকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে স্থায়ী প্রতিবন্ধকতাসমূহের নিরিখে প্রয়োজনভিত্তিক সমাধানগুলো চিহ্নিত ও আবিষ্কার করতে পারি। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সরকারের সহযোগিতায় সমুদ্র নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ একত্রে কাজ করতে পারে। পাশাপাশি আইইউইউ মৎস্য শিকার নিয়ন্ত্রণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারসহ নীতিনির্ধারক, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মতো সমুদ্রনিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সামুদ্রিক মৎস্য খাতের সকল অংশীদার, জাতীয়/আন্তর্জাতিক গবেষকদের একত্রে কাজ করা এবং এই লক্ষ্যে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তোলা বর্তমান সময়ের দাবি।
×