ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে ঐতিহাসিক নিদর্শন ভাঙ্গার অভিযোগ

প্রকাশিত: ১৫:৪৫, ১৬ অক্টোবর ২০২০

বরিশালে ঐতিহাসিক নিদর্শন ভাঙ্গার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ২৫ বার কারাবরণকারী ব্রিটিশ ও পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বিপ্লবী কুমুদ বিহারী গুহ ঠাকুরতার (কুমুদা) স্মৃতি স্তম্ভ ও সমাধিস্থল ভঙ্গার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সড়ক প্রশস্তের নামে গত ১৩ অক্টোবর দুপুরে জেলার বানারীপাড়া উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ বলেন, সড়ক সংস্কার করতে গিয়ে শ্রমিকরা ভুলবশত একটি অংশের দেয়াল ভেঙ্গেছে। আমরা বিষয়টি দেখে শ্রমিকদের সতর্ক করে দিয়েছি। পাশাপাশি ভাঙ্গা অংশটুকু সংস্কার ও গোটা স্থানটিকে আধুনিকায়ন করা হবে। একইসাথে ওইখানে একটি ছাউনী নির্মাণ করে দেওয়া হবে। বাস্তবে কতটুকু হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। বানারীপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সভাপতি বেনি লাল দাস জানান, কয়েকদিন আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বাউন্ডারি ভেঙ্গে ফেলা হয়। এরপর বিপ্লবী কুমুদ বিহারী গুহ ঠাকুরতার স্মৃতি স্থাপনা ও সমাধির একাংশ ভেঙ্গে ফেলা কোন শুভ লক্ষণ নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুক্তিযোদ্ধারা জানান, রাষ্ট্র যেখানে ঐতিহাসিক মানুষদের স্মৃতি সংরক্ষণে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে, তখন অভিযান বা সড়ক প্রশস্তকরণের নামে বিপ্লবী কুমুদ বিহারী গুহ ঠাকুরতার স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা দূরভীসন্ধির অংশ। একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির মদদে সম্পূর্ণরুপে প্রতিহিংসার বর্শবর্তী হয়ে বির্তকিত এ অভিযান চালানো হয়েছে। আর এ কাজে যারা মদদ দিয়েছে মুখে তারা যাহাই বলুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে অন্তরে তারা স্বাধীনতাবিরোধী লোক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলা হয়। এরপর বিপ্লবী কুমুদ বিহারী গুহ ঠাকুরতার স্মৃতি স্থাপনা ও সমাধির অংশ ভাঙ্গা হয়। স্থানীয়রা জানান, সড়ক সংস্কারের নামে ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ের দেয়াল ভেঙ্গে ফেলার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পুনর্র্নিমাণের এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯০৪ সালের ৮ ডিসেম্বর বানারীপাড়ায় নিজ পিত্রালয়ে তমাল তলায় জন্মগ্রহণ করেন বিপ্লবী কুমুদ বিহারী গুহ ঠাকুরতা। তার পিতা ছিলেন শরৎ গুহ ঠাকুরতা ও মাতা ছিলেন ভুবন মহীনি দেবী। তাদের চার পুত্র ও এক কন্যার মধ্যে কুমুদা ছিলেন সবার ছোট। তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। আন্দোলন করতে গিয়ে তার বিয়ে করা হয়নি। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত দেশ (অর্থাৎ বর্তমান ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ) স্বাধীন না হবে ততোদিনে তিনি বিয়ে করবেন না। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তার পরিবার পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে যান। কিন্তু তিনি দেশ মাতৃকার টানে পূর্ব পাকিস্তানে থেকে যান। দেশে থেকে যাওয়ার সুবাদে পাকিস্তানের অত্যাচার শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা সরব থাকতেন। তিনি পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন করায় তাকে আটবার এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ১৭ বারসহ মোট ২৫ বার কারাগারে পাঠানো হয়। দুটো স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিল্পবী কুমুদ বিহারী গুহ ঠাকুরতা বানারীপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। তার কোন বংশধর না থাকায় জন্মভিটাই কুমুদ বিহারী গুহ ঠাকুরতার স্মৃতিচিহ্ন।
×