ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ

বোলারদের রাজত্বে উজ্জ্বল মেহেদীর ব্যাট

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ১৬ অক্টোবর ২০২০

বোলারদের রাজত্বে উজ্জ্বল মেহেদীর ব্যাট

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রান করাটা সাধারণত কঠিনই হয়। আর এবার ৭ মাসেরও বেশি সময় পর ব্যাটসম্যানদের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরা, সঙ্গে বৃষ্টির কারণে উইকেটের আর্দ্রতায় আগের দুই ম্যাচে বোলারদের দাপট দেখা গেছে। এমনকি বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে আগের দুই ম্যাচের মতো বৃহস্পতিবার নাজমুল একাদশের দাপুটে বোলিংয়ের সামনে কোণঠাসা হয়ে পড়ে তামিম একাদশ। অভিজ্ঞ, পরীক্ষিত টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হলেন, কিন্তু উল্টো বোলারদের ওপরেই টর্নেডো বইয়ে দিলেন অফস্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান। ৯ নম্বরে নেমে রীতিমতো তা-ব চালিয়েছেন তিনি, মাত্র ৫৭ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৮২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন মেহেদী। মিরপুরের এই উইকেটে এখনও ব্যাটিং করা যায় সেই প্রমাণও দিয়েছেন অন্য ব্যাটসম্যানদের। চলতি ওয়ানডে সিরিজে এখন পর্যন্ত এটিই কোন ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত সেরা ইনিংস। তাই দলীয় ইনিংসটাও হয়েছে সবচেয়ে বড়। তামিম একাদশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে তুলেছে ৯ উইকেটে ২২১ রান। আগের দুই ম্যাচেই বোলারদের দাপট দেখা গেছে। ব্যাটসম্যানরা তাদের সামনে একেবারে অসহায় ছিলেন, নাজেহাল হয়ে দ্রুতই ফিরে গেছেন সাজঘরে। শেরেবাংলার কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা করোনা প্রকোপের কারণে শ্রীলঙ্কা থেকে ছুটি কাটিয়ে ফেরেননি। তাই চট্টগ্রাম থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কিউরেটর প্রাভীন হিঙ্গানিকারকে আনা হয় মঙ্গলবার রাতে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার ম্যাচের আগ পর্যন্ত তিনি কাজও করেন মিরপুরের উইকেট নিয়ে। কারণ ব্যাটসম্যানদের জন্য সুবিধাজনক উইকেট প্রস্তুত করা। কিন্তু টস হেরে তামিম একাদশ ব্যাটিংয়ে নামার পর কোন লক্ষণ দেখা যায়নি ব্যাটসম্যানদের উন্নতির। এদিনও পেসারদের কাছে নাকাল হতে থাকেন ব্যাটসম্যানরা। দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম (৮), এনামুল হক বিজয় (১২) ও মোহাম্মদ মিঠুন (৪)। এদিন পেসার আল-আমিন হোসেনের পাশাপাশি অফস্পিনার নাঈম হাসান ও লেগস্পিনার রিশাদ হোসেনও জ্বলে ওঠেন। তবে তামিম ইকবাল দারুণ খেলছিলেন। তিনিও ৪৫ বলে ৪ চারে ৩৩ করে নাঈমের শিকার হওয়ার পর বিপর্যয়ে পড়ে তামিম একাদশ। মোসাদ্দেক হোসেন ১২, আকবর আলী ২ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৩ রানে সাজঘরে ফেরেন। দারুণ খেলতে থাকা শাহাদাত হোসেন দীপুও ৫২ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ৩১ রানে আউট হয়ে যান। ১২৫ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর তামিম একাদশের সংগ্রহ আহামরি কিছু হবে এমন আশা করেননি কেউ। কিন্তু ৯ নম্বরে নেমে মেহেদী তা-ব শুরু করেন। তাইজুল ইসলামের সঙ্গে জুটি বেঁধে নবম উইকেটে তিনি ৯৫ রান তোলেন। তারা মাত্র ৮৯ বল মোকাবেলা করেছেন। তাইজুল ধীরস্থির থেকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন মেহেদীকে। গত বছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন ঢাকা প্লাটুনের হয়ে খেলা এই তারকা। ওপরের দিকে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩টি ঝড়ো ফিফটিতে ২৫৩ রান করেন ১৩৬.০২ স্ট্রাইকরেটে। সেই ঝাঁঝ এদিনও তার ব্যাটিংয়ে দেখা গেল। কিন্তু তাকে ব্যাটিং অর্ডারে নামানো হয়েছে ৯ নম্বরে। সেখানে নেমেই নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছেন এদিন। টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে ঝলমলে ইনিংস খেলেছেন ৯ চার, ৩ ছক্কায় ৫৭ বলে ৮২ রানের। চলতি আসরে এটিই ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেরা ইনিংস। যেখানে ব্যাটসম্যানরা রান করতে হিমশিম খেয়েছেন, রীতিমতো ধুঁকেছেন সেখানে মেহেদী তা-ব চালিয়ে ৪৪ বলেই ফিফটি স্পর্শ করে লজ্জা দিয়েছেন বাকিদের। আর এতেই কিউরেটর হিঙ্গানিকারক যে কাজ করেছেন তার সার্থকতাও মিলেছে। এদিন মেহেদীর কারণেই চলমান আসরে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পেয়েছে আগের ম্যাচের ১০৩ রানেই গুটিয়ে যাওয়া তামিম একাদশ। ৯ উইকেটে ২২১ রানে শেষ করেছে তারা নির্ধারিত ৫০ ওভারে। যদিও পেসার আল-আমিন দাপট দেখিয়ে ১০ ওভারে ৪৩ রানে ৩টি, দুর্দান্ত বোলিং করে অফস্পিনার নাঈম ১০ ওভারে ৪ মেডেনে মাত্র ২৮ রান দিয়ে ২টি, রিশাদ ৫ ওভারে ২১ রানে ২টি উইকেট নেন। তাসকিন আহমেদও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। এদিন ১টি উইকেট নিলেও ১০ ওভারে মাত্র ৪১ রান দিয়েছেন। তবে সবাইকে ছাপিয়ে নায়ক হয়েছেন ২৫ বছর বয়সী মেহেদী।
×