ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না আলু

প্রকাশিত: ১৮:৪৬, ১৫ অক্টোবর ২০২০

সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না আলু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে না। এ কারণে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ থাকার পরেও সহজলভ্য তরকারি হিসেবে খ্যাত আলুর দাম চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি গোল আলু ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কোন কোন পাড়া মহল্লার দোকানে আলু বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়। তবে আলুর দাম কমাতে দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত মনিটরিং টিম এবং জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর বাজারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। হিমাগার মালিক ও আলুর পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরকারের বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে। আলুর দাম বাড়ার পেছনে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থা। তবে আগামী দু’একদিনের মধ্যে আলুর দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত টাস্কফোর্স। সরকার নির্ধারিত দামেই আলু বিক্রি করা হবে। এদিকে, গত কয়েক বছর ধরে খুচরা পর্যায়ে ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আলুর দাম এখন রাজধানীতে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ যাবতকালের রেডর্ক দাম এখন আলু বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। আর এ কারণে প্রথম বারের মতো কৃষি বিপণন অধিদফতর আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয়। এতে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি আলুর দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া হিমাগার পর্যায়ে থেকে প্রতিকেজি আলুর মূল্য ২৩ টাকা, পাইকারি/আড়তে এর মূল্য ২৫ টাকা হওয়া উচিত বলে জেলা প্রশাসকদেরকে কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১৫-২০ টাকা বেশি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আলু। আলুর দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজার থেকে গোল আলু কিনছিলেন বনগ্রামের বাসিন্দা রিকশা চালক ফজর আলী। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, গরিবের খাওন আলুর দাম ডাবল (দ্বিগুন) হয়ে গেছে। খাওন কমানো ছাড়া আর উপায় নেই। ওই বাজারের আলু- পেঁয়াজ বিক্রেতা মমিন জানান, আলুর দাম একদিনে বাড়েনি। বেশকিছু দিন ধরেই আলু ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। ওই সময় কেউ কোন কথা বলেনি। এর মধ্যে এক সপ্তায় দাম আরও বেড়ে এখন ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে করে মানুষের কষ্ট বেড়েছে। তিনি বলেন, অন্য কোন সবজি ৮০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ভরসা ছিল গোল আলু। কিন্তু এখন আলুর গাঁয়েও হাত দেয়া যাচ্ছে না। জানা গেছে, পেঁয়াজের পর সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজিতে বেড়েছে আলুর দাম। দাম বৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে দেশের সাড়ে তিনশ হিমাগার মালিক এবং আলুর পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজি। এখন কৃষকরাও হিমাগারে সংরক্ষিত আলু বেশি দামের আশায় ছাড়তে চাচ্ছে না। অথচ চাহিদার তুলনায় এখন বেশি পরিমাণে আলু মজুদ আছে। আলুর দাম বাড়ায় ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে খাবারের দাম বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া আলুপুড়ি, সিঙ্গারামতো পণ্যেও দাম বেড়ে যেতে পারে। আলু দিয়ে দেশে বহু রকমের খাবার তৈরি হচ্ছে। কিন্তু দাম দ্বিগুন হয়ে যাওয়া ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় আলুর দাম কমানোর উপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্যাবসহ ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করে এ রকম বেশ কয়েকটি সংগঠন থেকে বলা হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বাড়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারছে না অনেকেই। আর এ কারণে নিত্যপণ্যসহ খাদ্যদ্রব্যের দাম কমাতে হবে। এদিকে, আলুর দাম বাড়ার পেছনে কারা জড়িত তাদেও খুঁজে বের করার জন্য গোয়েন্দা সংস্থা কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলে তৎপর হয়ে উঠে সরকারী এজেন্সীগুলো। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীগুলোকেও সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়। এরপরই ব্যাপক অভিযানের পর মজুদকৃত দেশী পেঁয়াজ আসতে থাকে বাজারে। মজুতকৃত আলুও হিমাগার থেকে বের করে আনার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের বৈঠকে দেশের আইনশৃঙ্খা বাহিনীর সদস্যদের ডাকা হয়। ওই সময় গোয়েন্দাসংস্থাসহ সরকারী বিভিন্ন এজেহ্নীর লোকজন উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছিলেন, শুধু পেঁয়াজ নয়, যেকোন পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে সরকার। পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেশন বা কারসাজির আশ্রয় নেয়া হলে দেশের প্রচলিত আইনে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবে সরকার। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি’র তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাজধানীতে প্রতিকেজি আলু ৪৪-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ সরকারী বেধে দেয়া দামের চেয়ে ভোক্তাদের ১৪-২০ টাকা বেশি দিয়ে আলু কিনতে হয়েছে।
×