ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাকিব মাহমুদ

অপরাধীর আশ্রয়দাতা

প্রকাশিত: ২১:০৬, ১৫ অক্টোবর ২০২০

অপরাধীর আশ্রয়দাতা

যে দেশের এখন পুরোদমে অগ্রগতির সময়, সে দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি সেই অগ্রগতির প্রবাহকে থামিয়ে দেয়। প্রতিবছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এর ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই)’ প্রকাশ হলে আমরা দেখতে পাই দুর্নীতি আমাদের মতো দেশের জন্য কত বড় ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পারি, ‘ব্যক্তিগত সুবিধা বা ফায়দার জন্য নৈতিক বিচ্যুতি বা অসাধুতা বা ব্যক্তির উপরে ন্যস্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করাকে দুর্নীতি বলে।’ খোলা চোখে দেখলে মনে হয় দুর্নীতির প্রভাব শুধু দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং তার মাধ্যমে লাভবান হওয়া ব্যক্তির উপরেই পড়ে। কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে দুর্নীতির চক্রের মধ্যে একটি দেশের সবাই ভুক্তভোগী হয়। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক বলেছিলেন, ‘দুর্নীতি এমন এক ক্যান্সার যেটা গরিবের থেকে চুরি করে, শাসনকার্য ও নৈতিক মূল্যবোধকে গ্রাস করে এবং বিশ্বাস ভঙ্গ করে।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যখন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে ওঠে তখন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তাঁর কাছ থেকে কোন সহায়তা বা সমাধান পান না। উপরন্তু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে হতে হয় নির্যাতিত। অসংখ্য অপরাধী এই দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যের মাধ্যমে পার পেয়ে যায়। একজন অসৎ অসাধু ব্যক্তি যখন রাজনৈতিক ক্ষমতায় বলীয়ান হন কিংবা কোনভাবে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে যুক্ত হন তখন তিনি আইনের তোয়াক্কা করেন না। দুর্নীতির মাধ্যমে যদি সে নিজের অবস্থান শক্ত করতে পারে তখন তার আশ্রয়ে থাকা কর্মী দ্বারা নিপীড়িত হতে থাকে সমাজের অসহায়, অসচ্ছল, দরিদ্র মানুষগুলো। সম্প্রতি হওয়া কিছু ধর্ষণের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে আমরা এটা দেখতে পারি। একজন দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তি বা সাধারণ ব্যক্তি সকলেই দেশের জন্য ক্ষতিকর। এরা যে দুর্নীতির চক্র গড়ে তুলে একে অপরকে সাহায্য করে সে চক্র দেশের আইন ব্যবস্থাকে কার্যত অচল করে দেয়। প্রায় প্রত্যেকটা বেআইনী কাজ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে অন্যায়কারী কোন একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির আশ্রয়ে ছিলেন অথবা সে নিজেই ক্ষমতার অপব্যবহারকারী। দুর্নীতি রুখতে পারলে দেশে অপরাধীর আশ্রয়দাতাদের সংখ্যা কমে যাবে। প্রত্যেক দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি আরও অসংখ্য অপরাধীর আশ্রয়দাতা। একজন অপরাধী অপরাধ করেও দুর্নীতিবাজের ছায়ায় সমাজে বুক ফুলিয়ে চলতে পারে। এই আশ্রয়দাতা না থাকলে মানুষ নির্ভয়ে অপরাধে লিপ্ত হতে পারবে না। এই চক্র ভাঙতে হবে। সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে নৈতিকতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের দলের ভেতরে মনিটরিং করতে হবে। অসাধু ব্যক্তিদের দল ছাড়তে বাধ্য করতে হবে। দুর্নীতি যে একটি ব্যাধি, চরম ঘৃণ্য অপরাধ এই শিক্ষা আমাদের পারিবারিক এবং সামাজিক পর্যায়ে ব্যবহার করতে হবে। অপরাধীদের আশ্রয়দাতা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নির্মূল করতে পারলে দেশে অপরাধের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যাবে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×