ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষ সুবিধায় ১৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ আদায়

প্রকাশিত: ২০:৫০, ১৫ অক্টোবর ২০২০

বিশেষ সুবিধায় ১৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ আদায়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ খেলাপী ঋণের লাগাম টানতে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে সরকার। মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ঋণ পুনঃতফসিলের (রিসিডিউলিং) সুবিধা নেয় খেলাপীরা। এ সুবিধা নিয়ে ১৩ হাজার ৩০৭ ঋণ খেলাপী তাদের ১৯ হাজার ৬০৪ কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত করেছে। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের সমালোচনা সত্ত্বেও সরকারের চাপে বিশেষ সুবিধার সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থমন্ত্রীর সুপারিশে গতবছর ১৬ মে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্দমানে খেলাপী ঋণ মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের বিপরীতে ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিলের সুবিধা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহারের সীমা ঠিক করে দেয়া হয় ৯ শতাংশ। পুনঃতফসিলের আগে গ্রাহককে সুদ মওকুফ সুবিধাও দেয়া যাবে। সার্কুলার জারির তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এ সুবিধার জন্য আবেদন করতে বলা হয়। সার্কুলারের ওপর উচ্চ আদালতের দু’দফা স্থগিতাদেশের কারণে আবেদন কার্যক্রম অনেকদিন বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপীলের প্রেক্ষিতে এ সুবিধা নিতে আবেদনের সময় কয়েক দফা বাড়িয়ে দেয়া হয়। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ পান ঋণ খেলাপী গ্রাহকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট নীতিমালার আওতায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপী গ্রাহকরা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ২০ হাজার ৭০৩টি আবেদন করেন। এর মধ্যে ঋণ পুনঃতফসিল সংক্রান্ত আবেদন পড়েছিল ১১ হাজার ২৬৪টি। আর এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত আবেদনের সংখ্যা ৯ হাজার ৪৩৯। এসব আবেদনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৩০৭টি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১৯ হাজার ৬০৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সাত হাজার ৩২৮ গ্রাহক ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধায় ১৮ হাজার ২০২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার ঋণ নিয়মিত করেছে। পাঁচ হাজার ৯৭৯ খেলাপী গ্রাহক এককালীন এক্সিট সুবিধার আওতায় এক হাজার ৪০১ কোটি ৯২ লাখ টাকা নিয়মিত করেছে। আর ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ সুবিধা দিয়ে ব্যাংকগুলোর আদায় করা ডাউন পেমেন্টের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৪৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এদিকে বিশেষ এ সুবিধার কারণে চলতি বছরের মার্চে খেলাপী ঋণ কমে দাঁড়ায় ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকায়। তবে নানা সুবিধার পরও জুন প্রান্তিকে আবারও বেড়েছে খেলাপী ঋণ। খেলাপী ঋণের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপীর পরিমাণ ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। সরকারের নির্দেশনায় চলতি বছরের ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করে। এতে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সরলসুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ টানা ১০ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়। যা নিয়ে বিভিন্ন মহল নিন্দা ও প্রতিক্রিয়া জানায়। এর পর ওই সার্কুলারের স্থগিতাদেশ চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আদালতে রিট করা হয়। এদিকে বিশেষ এ সুবিধা গ্রহণকারীরা ব্যাংক থেকে আবার নতুন করে ঋণ নিতে পারবেন। প্রচলিত নিয়ম মেনে সতর্কতার সঙ্গে ঋণ দিতে বলা হয়েছে। নতুন ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে পুনঃতফসিল সুবিধা বাতিল হবে। সুবিধা গ্রহণের পর নিয়মিত অর্থ পরিশোধ না করলেও তাদের খেলাপী করা যাবে না। এখানে ছাড় দেয়া হয়েছে। ৯টি মাসিক কিস্তির ৩টি এবং ত্রৈমাসিক ৩ কিস্তির ১টি পরিশোধ না করলেও নিয়মিত থাকা যাবে। তবে মাসিক কিস্তির মধ্যে ৬টি ও ত্রৈমাসিক কিস্তির ২টি পরিশোধ না করলে পুনঃতফসিল সুবিধা বাতিল করা হবে। স্বাধীনতার পর থেকে যারা ঋণ খেলাপী তাদের এককালীন এক্সিট সুবিধা দেয়া হবে। এক্ষেত্রে তাদের খেলাপী ঋণের হিসাব হবে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের এককালীন হিসাবায়ন ভিত্তিতে। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের পর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যত খেলাপী ঋণ আছে তার হিসাব করা হবে। কোন ঋণখেলাপী যদি মনে করে এককালীন ঋণ পরিশোধ করে খেলাপীর তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবেন, তাহলে সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে সার্কুলারে। এতে বলা হয়েছে, ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্টে ঋণ খেলাপীরা ঋণ পরিশোধের জন্য এক বছর পর্যন্ত সময় পাবেন। আগের সব সুদ বাবদ পাওনা মওকুফ করা হবে। এককালীন পরিশোধের জন্য সুদহার আরও কম- ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ডের সমান। তবে এক বছরের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে সুবিধা বাতিল হবে। এই এককালীন এক্সিট সুবিধা ও পুনঃতফসিল সুবিধা কার্যকরের ৯০ দিনের মধ্যেব্যাংক ও গ্রাহকের মামলা স্থগিত করতে হবে। পরবর্তীতে গ্রাহক কোন শর্ত ভঙ্গ করলে সুবিধা বাতিল করে মামলা পুনরায় চালু হবে।
×