ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আয়ান আব্রাজ

আপন আলোয় উজ্জ্বল সুইয়াটেক

প্রকাশিত: ০১:১০, ১৪ অক্টোবর ২০২০

আপন আলোয় উজ্জ্বল সুইয়াটেক

নতুন রানী পেল ফ্রেঞ্চ ওপেন। মহিলা এককে এবার রোঁলা গ্যারোঁর শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন ইগা সুইয়াটেক। শনিবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে পোল্যান্ডের এই তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় সরাসরি সেটে ৬-৪ এবং ৬-১ ব্যবধানে পরাজিত করেন আমেরিকান তারকা সোফিয়া কেনিনকে। সেইসঙ্গে নতুন এক ইতিহাস গড়েন তিনি। প্রতিযোগিতায় এই প্রথম কোনও পোলিশ খেলোয়াড়ের মাথায় উঠল সেরার শিরোপা। মনিকা সেলেসের পর গত ২৮ বছরে সুইয়াটেক দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে প্যারিসে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুগন্ধ ছড়ালেন। গত ১৪টি গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টে নবম খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম কোনও মেজর শিরোপা জিতলেন তিনি। ১৯ বছর বয়সী সুইয়াটেক এবার প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন। বড় চমকটা দেন তিনি শীর্ষ বাছাই সিমোনা হ্যালেপকে পরাজিত করে। চতুর্থ বাছাই ২১ বছর বয়সী কেনিনকে ফাইনালের আগে বিশ্ব টেনিসের ফেভারিট ধরেছিল। কারণ এই বছর তিনি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। ফরাসী ওপেনের আগে সুইয়াটেকের র‌্যাঙ্কিং ছিল ৫৪। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ডব্লিউটিএ র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৪ নম্বরে উঠে এলেন তিনি। এদিন জয়ের রোমাঞ্চিত মহিলা টেনিসের এই বিস্ময়। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। গ্র্যান্ডস্লামে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তৃপ্তি কী হতে পারে, তা এবার উপলব্ধি করছি! দু’বছর আগে জুনিয়র ফরাসী ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। সেই মঞ্চেই সিনিয়র বিভাগে সেরা হতে পেরে ভাল লাগছে। এদিন জয়ের সাক্ষী হতে পেরেছে আমার পরিবার। এটাও আমার কাছে দারুণ খুশির মুহূর্ত।’ পুরো আসরে কোন সেটই হারেননি সুইয়াটেক। এটিও একটি বড় অর্জন তার। চতুর্থ তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে কোনও সেট না হেরে গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের মাইলফলক ছুঁলেন তিনি। ১৯৯২ সালে মনিকা সেলেসের পর সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ফরাসী ওপেন জিতলেন সুইয়াটেক। ১৯৭৫ সালে টেনিসের র‌্যাঙ্কিং চালু হবার পর এত পেছন থেকে কেউই ফাইনাল খেলেননি। সেখানে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৫৪ নম্বর স্থানে থেকে ফাইনালে তো খেললেনই, শিরোপাটাও ছিনিয়ে নিলেন তিনি। অথচ, গেল বছরই প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম খেলতে নামেন সুইয়াটেক। সপ্তম গ্র্যান্ডস্লাম খেলতে নেমেই শিরোপায় চুমু, এখনও তা বিশ্বাস হচ্ছে না তার। তিনি বলেন, ‘ঠিক জানি না, কি হচ্ছে। আমি খুব খুশি। আমি উচ্ছ্বসিত, আনন্দিত।’ গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের পেছনে তার বাবার অবদান সবচেয়ে বেশি বলে জানান সুইয়াটেক। এ ব্যাপারে তার অভিমত, ‘পরিবারের সামনে এই জয় আমাকে আরও আনন্দ দিয়েছে। এই জয়ের পেছনে বাবার অবদান অপরিসীম। বাবার কারণেই আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে।’ ফাইনাল হারের পর সুইয়াটেককে অভিনন্দন জানিয়েছেন কেনিন। তিনি বলেন, ‘এই ম্যাচটি জেতার যোগ্যতা রাখে সুইয়াটেক। অসাধারণ খেলেছে সে। নিজের পরিকল্পনা-কৌশলগুলো দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে সে।’ ম্যাচ হারের জন্য নিজের বড় দায়ও দেখছেন কেনিন। আমেরিকান টেনিসের এই প্রতিভাবান তারকার মতে, ‘এভাবে হারের জন্য কোন অজুহাত দেবো না। খেলার সময় অস্বস্তিবোধ করছিলাম। নিজের মত করে কোন কিছুই হচ্ছিল না। আমার পায়ে সমস্যাবোধ করছিলাম। তাই প্রথম সেটের পর আমি ট্রেনারকে আমার সমস্যার কথা বলি। কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় হলো না।’ মহিলা এককে নতুন রানী পেলেও রোঁলা গ্যারোঁর পুরুষ এককের গল্পটা সেই পুরনো। এবারও দাপট দেখালেন ক্লে কোর্টের স¤্রাট রাফায়েল নাদাল। ফরাসী ওপেনের স¤্রাট মোট ১৩ বার এই খেতাব জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়লেন। সেইসঙ্গে ২০টি গ্র্যান্ডস্লাম জিতে স্পর্শ করলেন আরেক কিংবদন্তি রজার ফেদেরারকে। রবিবার ফাইনালে রাফায়েল নাদাল সরাসরি সেটে হারিয়েছেন নোভাক জোকোভিচকে। ফাইনালে নাদালের পক্ষে ম্যাচের ফল ৬-০, ৬-২, ৭-৫। ফিলিপ শঁতিয়ে কোর্টে রাফা যে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেললেন, তা তার ক্যারিশমার কথাই যেন মনে করিয়ে দেয়। সারা টেনিস দুনিয়াকে তিনি দেখালেন বয়স কোনও বিষয় নয়, ফিটনেস বজায় রাখলে, নিজের লক্ষ্য থেকে না সরলে তিনিই শাসন করবেন টেনিস বিশ্বকে। তিন সেটের ম্যাচে দুটি আনফোর্সড এরর বাদ দিলে নাদালের সামনে আজ কার্যত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন নোভাক। তৃতীয় সেটে তা-ও একটু লড়াইয়ে ফিরেছিলেন সার্বিয়ান তারকা। কিন্তু ওই পর্যন্তই। স্প্যানিশ আর্মাদার একতরফা আক্রমণের মুখে ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি তিনি। জয়ের পরে নোভাক জোকোভিচের প্রশংসা করেছেন নাদাল। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘নোভাক দারুণ লড়েছে। কিন্তু কিছু করার নেই, দিনটা ছিল আমারই। গত বছর অস্ট্রেলিয়া ওপেনের ফাইনালে জোকোভিচই আমাকে শেষ করে দিয়েছিল। আমরা অনেক ম্যাচ খেলেছি। কোনও দিন জয় আসে, কোনও দিন আবার হারকে মেনে নিতে হয়। আশা করি, পরে আবারও আমাদের দেখা হবে।’ রজার ফেদেরারের ২০ গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের কীর্তি স্পর্শ করেও নিজেকে সংযত রেখেছেন নাদাল। তিনি বলেন, ‘রজারের কীর্তি স্পর্শ করার ব্যাপারটা নিয়ে আমি ভাবছিই না। রোঁলা গ্যারোঁয় জয়ের বিশেষ একটা তৃপ্তি রয়েছে। সেটা আমার কাছে অনেক বেশি মূল্যবান। এটাই আমার কাছে সবকিছু। এই শহর আর এই কোর্টটা আমার খুব প্রিয়।’ প্যারিসে ট্রফি জয়ের পরেই টুইটারে নাদালকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ফেড এক্সপ্রেস। এ প্রসঙ্গে তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘একজন চ্যাম্পিয়ন এবং বন্ধু হিসেবে আমি রাফাকে বরাবর খুবই সমীহ করে এসেছি। কোর্টে ও আমার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। কিন্তু কোথাও গিয়ে মনে হয়েছে আমরা একে অপরকে উজ্জীবিত করেছি আরও ভালমানের টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে। ফলে রাফার ২০ নম্বর গ্র্যান্ডস্লাম জয়টা আমার কাছেও দারণ একটা সম্মান।’ ফেদেরার মনে করিয়ে দিয়েছেন কোনও এক আসরে মোট ১৩ বার খেতাব পাওয়াও সহজ কথা নয়। টেনিস দুনিয়া মনে করে রোঁলা গ্যারোর স¤্রাট রাফাই। সেটি আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে। নাদালের এমন অবিস্মরণীয় কীর্তিতে ভারতীয় ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্টুলকরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। টুইটারে তিনি নাদালকে লিখেছেন, ‘তুমিই চ্যাম্পিয়ন, আবার প্রমাণ করলে।’ ২০০৩ সালে উইম্বলডনে প্রথম শিরোপা জিতে রজার ফেদেরারের সূচনা। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ক্যারিয়ারের ২০তম গ্র্যান্ডস্লাম জেতেন এই কিংবদন্তি। অন্যদিকে নাদাল তার আগমনী বার্তা জানান দেন ২০০৫ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে। ১৫ বছর পর সেই প্যারিসেই জিতলেন তার ক্যারিয়ারের ২০তম মেজর শিরোপা। ২০টি শিরোপার মধ্যে ১৩টিই প্যারিসে! রোঁলা গ্যারোঁয় অপ্রতিরোধ্য নাদাল। এছাড়া চারটি ইউএস ওপেন, দুটি উইম্বলডন আর একটি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মুকুট তার পালকে।
×