ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে আলু

প্রকাশিত: ১৯:৪২, ১৩ অক্টোবর ২০২০

রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে আলু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মাংস থেকে সবজি যেকোন তরকারির সঙ্গে চলে গোল আলুর ব্যবহার। চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও সেই আলু এখন রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। ৫০ টাকার নিচে কোন আলু পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দাম কমাতে দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত মনিটরিং টিম শীঘ্রই বাজারে অভিযান পরিচালনা করতে করতে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রচলিত আইন-অনুযায়ী জেলজরিমানা করবে মনিটরিং টিম। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর থেকেও পৃথক অভিযান পরিচালনা করা হবে। এদিকে, মঙ্গলবার রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হয়েছে জাত ও মানভেদে ৫০-৫৫ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় ১৫-২০ টাকা। আলুর দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে। গত কয়েক মাস ধরে সবজির দাম চড়া। গড়ে ৮০ টাকার নিচে বাজারে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের ভরসা ছিল আলুতে। সেই আলুর দামও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পেঁয়াজ, চাল ও কাঁচা মরিচের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় বাজার অস্থির হযে উঠছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি পেঁয়াজ, ডাল, চিনি ও আটাসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের ট্রাকসেল কার্যক্রম চালু রয়েছে। এছাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকার চাল বিক্রি হচ্ছে সারাদেশে। এ অবস্থায় আলুর দাম বাড়ার ফলে নতুন সমস্যায় পড়েছে সাধারণ ভোক্তারা। জানা গেছে, এবার রেকর্ড পরিমাণ আলু আলু উৎপাদন হয়েছে। সারাবছর দেশে প্রায় ১ কোটি লাখ টন আলুর চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টন। অর্র্থাৎ চাহিদার তুলনায় দেশে বেশি আলু উৎপাদন ও মজুদ রয়েছে। তবে এবার করোনাকালে ত্রান হিসেবে চালের সঙ্গে আলু বিতরণ করা হয়। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও আলু ত্রান হিসেবে যাচ্ছে। তবে এ বছর করোনার কারণে আলু রফতানি করা যায়নি। দেশেই ব্যবহার বেড়েছে। তবে সঙ্কট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন আলুর দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। আর এ কারণেই বাড়ছে আলুর দাম। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আলুর দাম বাড়ার পেছনে কারসাজি রয়েছে। কোল্ডস্টোরেজ মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের যৌথ সিন্ডিকেটে আলুর দাম বাড়তে পারে। এ কারণে দেশের প্রতিটি কোল্ডস্টোরেজে অভিযান পরিচালনা করা হবে। দ্রুত যাতে আলু ছাড়া হয় সে উদ্যোগ নিবে মনিটরিং টিম। এদিকে, আলুর উৎপাদন, বিপণন, সংরক্ষণ ও সাম্প্রতিক মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে সার্বিক বিষয়ে একটি প্রতিবেদনটি তৈরি করছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। ওই প্রতিবেদনে আলুর দাম বৃদ্ধির জন্য বন্যা, অতিবৃষ্টি, করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারি ত্রাণ হিসেবে আলু বিতরণ এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) কর্তৃক আলু কিনে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণের কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে। একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার বাজাওে যে আলুটি বিক্রি হচ্ছে কৃষক পর্যায়ে তার উৎপাদন খরচ ছিল কেজিপ্রতি ৮ টাকা ৩২ পয়সা। গত আগস্টে তারা আলুর উৎপাদন এলাকা, হিমাগার এবং পাইকারি ও খুচরা বাজারে অনুসন্ধান কওে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এদিকে, বন্যা ও সবজিখেত নষ্ট হওয়ার কারণে এবার কৃষকরা আগে-ভাগে শীতের সবজির চাষাবাদ শুরু করেছেন। জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে বাজারে নতুন আলু আসবে। এ কারণে এখন কোস্টস্টোরেজের আলু ছাড়া না হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে , সারা দেশে ৩৬৯টি হিমাগার চালু আছে, যেখানে ৩০ লাখ মেট্রিক টন আলু মজুদ আছে। সারা মাসে আলুর চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ টনের মতো। ওই হিসেবে এখনও চাহিদার তুলনায় বেশি আলু মজুদ আছে। কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, হিমাগার গেটে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে। ফলে প্রতি কেজি আলুতে হিমাগার ব্যবসায়ীরা মুনাফা করছেন ২০ থেকে ২২ টাকা, যা অস্বাভাবিক। তবে হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন বলেন, দাম কমাতে হিমাগার মালিকদের চিঠি দিয়ে আলু ছাড়ার জন্য বলা হয়েছে। শীঘ্রই ভোক্তা পর্যায়ে সবজিটির দাম কমে আসবে। তিনি আরও গত মৌসুমে আলুর উৎপাদন কিছু কম হয়েছে। এ কারণে তারা আলু কম ছাড়ছে। আর এই বাড়তি মূল্য কৃষক এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটেই ঢুকছে বলে জানান তিনি।
×