ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নে দোষীদের বিচার দাবিতে শাপলা চত্বরে সড়ক অবরোধ

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১২ অক্টোবর ২০২০

ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নে দোষীদের বিচার দাবিতে শাপলা চত্বরে সড়ক অবরোধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে আজীবন কারাদন্ডের দাবি জানিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। দেশের বিভিন্ন স্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ ও নিপীড়নের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভের কারণে রবিবার বেলা দেড়টা থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে সব দিকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে মতিঝিল আইডিয়াল কলেজ, মতিঝিল বয়েজের একদল শিক্ষার্থী সড়কে নামে। পরে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। ‘ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন’ ব্যানার নিয়ে কয়েক শ’ শিক্ষার্থী এই বিক্ষোভে যোগ দেন। শাপলা চত্বরের অবস্থান থেকে তারা স্লোগান দেন ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘ধর্ষকদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে একসাথে-প্রীতিলতার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’। উল্লেখ্য, নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, সিলেটের এমসি কলেজে তুলে নিয়ে ধর্ষণসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে গত কয়েকদিন ধরে। আন্দোলনকারী বিভিন্ন ছাত্র ও অধিকার সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার ইতোমধ্যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করার উদ্যোগ নিয়েছে। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইন সংশোধনের ওই প্রস্তাব তোলা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এদিকে মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে আমৃত্যু কারাদণ্ড চান শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানিবিরোধী আন্দোলনকে ফলপ্রসূ করতে এবং ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে সাত দফা দাবি দিয়েছেন তারা। রবিবার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান কিছু শিক্ষার্থী। তারা রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংবাদ সম্মেলনে তারা নিজেদের সাধারণ শিক্ষার্থী বলে দাবি করেন। এতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের চৌধুরী নদী ও তাসফিয়া তারান্নাম রিদিতা, গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি কলেজের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহিন আহমেদ এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাদিয়া আরাফাত সুচিতাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিতভাবে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানহা তানজিন। দাবিগুলো হলো- ধর্ষণ আইন পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে ধর্ষকের এবং সীমাভেদে সকল প্রকার যৌন হয়রানির সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে এবং ভিকটিমের প্রাণ বিপন্ন করা রুখতে পরিবর্তনযোগ্য লঘু শাস্তির উল্লেখ থাকতে হবে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৭৫ ধারা অনুসারে উল্লেখিত ধর্ষণের ‘সম্মতির সংজ্ঞা’ সংশোধন করতে হবে, যাতে ধর্ষণের শিকার হওয়া ছেলে, শিশু, পুরুষ, যৌনকর্মী, লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় মানুষ ও হিজরারাও আইনের শরণাপন্ন হতে পারেন। পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সকল প্রকার যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও সামাজিক নিপীড়নের অভিযোগে নিরপেক্ষ বিচার করতে হবে। বৈবাহিক ধর্ষণকে ধর্ষণের আওতায় এনে বিচারকার্য করতে হবে। ধর্ষণজনিত ঘটনা বা অপরাধের জন্য আলাদা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা, যাতে ৩০-৬০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা যায়, পূর্ববর্তী সব ধর্ষণ মামলার রায় আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারার বিলোপ অর্থাৎ জেরা করার সময় যাতে ধর্ষণের শিকার নারীকে পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারক চরিত্র, পেশা, পোশাক ইত্যাদি নিয়ে হেনস্থা না করে। হেনস্থাকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীদের মামলা পরিচালনাকালে লিঙ্গীয় সংবেদনশীল আচরণ করতে পুলিশ, আইনজীবী, বিচারক ও সমাজকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্যাতিতার পরিবারের ওপর কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির চাপ প্রয়োগ বা ধর্ষককে আশ্রয় প্রদানকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের প্রতিটি মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌনশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাঠ্যপুস্তক ও মিডিয়া এবং সাহিত্য নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন, নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে। সাইবার মাধ্যমে নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রতিটি উপজেলায় মেডিক্যাল টিম গঠন করতে হবে, যারা স্থানীয় প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে অবকাঠামোর কাছে জবাবদিহি করবে। দেশের সব প্রান্তে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে।
×