ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে থাকা সন্ত্রাসীদের তালিকা হচ্ছে

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ১২ অক্টোবর ২০২০

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে থাকা সন্ত্রাসীদের তালিকা হচ্ছে

আজাদ সুলায়মান ॥ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিñিদ্র্র নিরাপত্তায় এক গুচ্ছ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তা ও নজরদারি করতে ক্যাম্পের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়ার আওতায় আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেড়া তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। পাশাপাশি ক্যাম্পের ভেতরে পুলিশ-র‌্যাব ও বিজিবির যৌথ ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া ক্যাম্পের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনাখুনিসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিতে এ সব উদ্যোগ নেয়া হয়। পুলিশের মতে- গত তিন বছরে বিভিন্ন ঘটনায় ৮০ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এমনকি এখনও মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে। এমন পরিস্থিতি উন্নতিকল্পে ক্যাম্পের নিরাপত্তায় এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রোহিঙ্গাদের নিয়ে গত বৃহস্পতিবারও মন্ত্রণালয়ে একটি জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া পুলিশ ও র‌্যাব সদর দফতরেও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের নামে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্রয় দিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচিত হন। বিশ্ব নেতারা সরকার প্রধানের প্রশংসা করে বিবৃতি দেন। রোহিঙ্গাদের দেখতে বিশ্ব নেতারা বাংলাদেশ সফর করেন। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার শিবিরগুলোতে এখন দিন কাটছে তাদের। এমনকি তাদের ভাল পরিবেশে রাখতে নোয়াখালীর ভাষানচরে একটি আবাসন পল্লীও গড়ে তোলে সরকার। তারপরও রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত নিতে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক মহল চাপ দিচ্ছে মিয়ানমারকে। কিন্তু মিয়ানমার কথা দিয়েও কথা রাখছে না। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে টালবাহানা করছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত নিতে জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করেও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারছে না। কিন্তু রোহিঙ্গারা আশ্রয় পেয়ে ক্যাম্পের ভেতরে ব্যবসা-বাণিজ্য চালাচ্ছে। এমনকি রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকে মাদক কারবারসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তারা এলাকার আধিপত্য ও মাদক কারবার নিয়ে খুনাখুনিতে লিপ্ত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে এ গ্রুপ আরেক গ্রুপের আট জনকে হত্যা করেছে। তাছাড়া গত তিন বছরে বিভিন্ন ঘটনায় ৮০ রোহিঙ্গা মারা গেছেন। এই প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জনকণ্ঠকে বলেছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা হতে দেয়া হবে না। সম্প্রতি ক্যাম্পের ভেতরে যেকটি হত্যাকা-সহ অন্যান্য ঘটনা ঘটেছে তার তদন্ত করা হচ্ছে। ওইসব ঘটনায় যারাই জড়িত আছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা বাড়াতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যারা অপরাধ করবে তাদের গ্রেফতার করে প্রচলিত আইনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। রোহিঙ্গা অপরাধীদের কেউ আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা জানান, এখনও রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। তবে তাদের প্রতিরোধ করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সক্রিয় আছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে অনেক রোহিঙ্গা অপরাধীদের আনাগোনা রয়েছে। নানা অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত রোহিঙ্গা অপরাধীদের তালিকা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তালিকার কাজ শুরু হয়েছে। ওই দুই কর্মকর্তা আরও বলেন, সম্প্রতি ক্যাম্পের ভেতরে হত্যাকা-সহ বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। এই নিয়ে মন্ত্রণালয়সহ আমরা একাধিক বৈঠক করেছি। ওইসব বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা অপরাধীদের ধরতে ক্যাম্পের ভেতর ও বাইরে চিরুনি অভিযান চালানো হচ্ছে। রোহিঙ্গারা এলাকার পরিবেশ নষ্ট করবে তা হতে দেয়া হবে না।
×