ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালের ৪ শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা স্থগিত

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ১২ অক্টোবর ২০২০

বরিশালের ৪ শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশালের বাকেরগঞ্জে ৪ শিশুর বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই ৪ শিশু এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে ২২ নবেম্বর। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আদালত নিয়ে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেয়ায় আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন সুপ্রীমাকোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। বরিশালের বাকেরগঞ্জে ৪ শিশুর বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার এ আদেশ দেয়। শুনানির এক পর্যায়ে আদালত তলবকৃত ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ এনায়েত উল্লাহকে প্রশ্ন করে বলে, আপনি কি জুডিসিয়াল অফিসার নাকি সিল মারা অফিসার। চার শিশুর বিষয়ে আদালতের এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে নির্দেশনা দেয়ার ঘটনা নিয়ে শুনানির সময় বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহর কাছে এমন প্রশ্ন করে আদালত। এ সময় তিনি (সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ) নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন কত সালের এবং ধারা কয়টি তা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জানতে চায়। আদালত আরও জানতে চায় আপনি মামলার অভিযোগ (এফআইআর) পড়ে সিল মেরে দিলেন দেখলাম। এটা কোন্ ধরনের ম্যাজিস্ট্রেটের কাজ। এটা কি আপনি জুডিসিয়াল অফিসার হিসেবে ঠিক করেছেন। এ সময় হাইকোর্ট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহকে প্রশ্ন করে, আপনি কি সিল মারা অফিসার নাকি জুডিসিয়াল অফিসার? এর আগে ওই চার শিশুকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় তলবে হাইকোর্টে উপস্থিত হন বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহ, ওসি মোঃ আকবর আলী ও চার শিশুর অভিভাবক। সবার শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। এ বিষয়ে আদেশ দিতে ২২ নবেম্বর পরবর্তী দিন ঠিক করা হয়। এ ছাড়া ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বাকেরগঞ্জ থানায় করা মামলার কার্যক্রম ২২ নবেম্বর পর্যন্ত স্থগিত থাকবে বলেও জানায় আদালত। একই সঙ্গে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের নিরাপদে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আদালতে এ সময় কারো পক্ষে কোন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। শুধু সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে শিশুদের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৮ অক্টোবর ৪ শিশু নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ৪ শিশুকে তাদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে ১১ অক্টোবর বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে হাইকোর্টে হাজির এবং ওই ৪ শিশুকে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে হাইকোর্টে আসতে বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এই আদেশ অনুসারে বৃহস্পতিবার রাতেই তাদের জামিন দিয়ে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে তাদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দিতে পদক্ষেপ নেন সংশ্লিষ্টরা। পরদিন শুক্রবার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে ওই ৪ শিশুকে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হয়। রবিবার ওসি শিশুসহ তাদের অভিভাবকদের নিয়ে হাইকোর্টে উপস্থিত হন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটও হাইকোর্টে হাজির হন। শুনানি শেষে আদালত শিশুদের মামলার কার্যক্রম স্থগিত, শিশু ও শিশুদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং বিচারককে হাইকোর্টে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়। গত ৬ অক্টোবর বাকেরগঞ্জ থানায় ছয় বছর বয়সের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে তার বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, মামলার আসামিরা ওই শিশুটির খেলারসঙ্গী। ৪ অক্টোবর বিকেলে বাগানের মধ্যে খেলার সময় তাকে তিন আসামির সহযোগিতায় এক আসামি ধর্ষণ করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। মামলার আসামিদের একজনের বয়স ১১ ও বাকি তিন জনের বয়স ১০ বছর দেখানো হয়েছে। পরে বুধবার ৭ অক্টোবর বিকেলে তাদের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাকেরগঞ্জ আমলী আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। আদালতের বিচারক মোঃ এনায়েতুল্লাহ এক আদেশে আসামি চার শিশুকে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর পাঠানোর নির্দেশ দেন।
×