ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভূ-উপরিস্থ পানির ওপর গুরুত্বারোপ করছে সরকার ॥ কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ১২ অক্টোবর ২০২০

ভূ-উপরিস্থ পানির ওপর গুরুত্বারোপ করছে সরকার ॥ কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। তিনি আরও বলেন, ভূ-উপরিস্থ পানি ধরে রেখে কিভাবে সেচ কাজে বা ফসল আবাদে ব্যবহার করা যায় সে লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। সেজন্য পাইলটভিত্তিতে দেশের প্রথম এই হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। বোরো ধান চাষসহ সেচ কাজে ব্যবহারের ফলে দেশে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। সেজন্য ভূ-উপরিস্থ পানি ধরে রেখে সেচ কাজে ব্যবহার জন্য সারাদেশে এ রকম আরও হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করা হবে। রবিবার সকালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে অনলাইনের মাধ্যমে দেশের প্রথম হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ভরাশঙ্কে হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম স্থাপন করা হয়েছে। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং কৃষি সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে এক সময় ধান উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি খরচ হতো পানি বা সেচ কাজে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কৃষিবান্ধব সরকারের উদ্যোগ, সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও সেচে ভর্তুকি দেয়ায় সেচের খরচ কমেছে। এখন সবচেয়ে বেশি খরচ হয় কৃষি শ্রমিকের পেছনে। ফলে, ধান উৎপাদনে খরচ বাড়ে, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকার সেজন্য কৃষি যান্ত্রিকীকরণে কাজ করছে। কৃষি যন্ত্রপাতিতে ৫০-৭০ ভাগ ভর্তুকি দিচ্ছে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ, কৃষির কোন বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৫ বছর পূর্বেই কৃষক বাঁচাও আন্দোলন করেছিলেন। তার নেতৃত্বেই কৃষিবিপ্লব ঘটিয়ে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধির হার অনেক ভাল এবং এই ভাল প্রবৃদ্ধির হারে সবচেয়ে বেশি অবদান কৃষির। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর তত্ত্বাবধানে ‘কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের জন্য রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প’ এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলায় বরুমচড়া ইউনিয়নের ভরাশঙ্খ খালে হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করা হয়। প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্ণকি পদ্ধতিতে ড্যামের নির্মাণ কাজ করে চীনের সরকারী প্রতিষ্ঠান বেইজিং আইডব্লিউএইচআর কর্পোরেশন। নির্মিত ড্যামটি ৩৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এবং এতে ৫টি হাইড্রোলিক জ্যাক সংযুক্ত প্যানেল রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, ড্যামটি নির্মাণের ফলে আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া, বারখাইন, হাইলদর, বটতলী, চাতুরী ও আনোয়ারা ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ হয়েছে যেখানে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ মে.টন এবং এর বাজার মূল্য প্রায় ২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তাছাড়া শুকনো মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে মে মাসে) জোয়ারের সঙ্গে আগত লোনা পানির প্রভাব থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকার ফসল ও গাছপালা রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং উপজেলায় কৃষি উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হবে। হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম চীনের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এক্ষেত্রে স্টিল প্যানেল দ্বারা ড্যাম নির্মিত হয় এবং প্যানেলসমূহ হাইড্রোলিক শক্তির সাহায্যে উঠানামা করানো হয়। ড্যামের প্যানেলসমূহ উঠিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ/বন্যা নিয়ন্ত্রণ/লবণ পানির অনুপ্রবেশ রোধ করা যায়। হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম প্রকৃতপক্ষে একটি নমনীয় ড্যাম যার মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ী প্যানেল উঠিয়ে/নামিয়ে ৫-৬ মিনিটের মধ্যে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাছাড়া বর্ষাকালে ড্যামের প্যানেলসমূহ নদী/খালের তলদেশে শুইয়ে দেয়া হয়, ফলে পানির প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয় না। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আরও জানা গেছে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৬৭টি রাবার ড্যাম নির্মিত হয়েছে। রাবার ড্যামের তুলনায় হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি সহজ। এতে অতি অল্প সময়ে পানি আটকানো এবং ছেড়ে দেয়া যায়। প্রয়োজনে আংশিকভাবে পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব। ইতোপূর্বে নির্মিত রাবার ড্যামসমূহ সাধারণত সেচ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে আধুনিক প্রযুক্তির এই প্রথম হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম দ্বারা উজান থেকে (শিকলবাহা খাল হতে) আগত মিঠা পানি সংরক্ষণ ও ভাটিতে সাগর থেকে (শঙ্খ নদী হয়ে) আগত লোনাপানির অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবে। বিএডিসির চেয়ারম্যান মোঃ সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিএডিসির সদস্য পরিচালক (ক্ষুদ্র সেচ) মোঃ আরিফ, রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌ. ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিএডিসির প্রধান প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালকসহ বিএডিসির অন্যান্য কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিগণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×