ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্ধতিগত পরিবর্তনই অব্যাহত রাখবে উন্নয়নের ধারা

প্রকাশিত: ২০:২১, ১২ অক্টোবর ২০২০

পদ্ধতিগত পরিবর্তনই অব্যাহত রাখবে উন্নয়নের ধারা

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর এ বছরটি বাঙালী জাতির জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এ উদযাপন শুধু বাহ্যিকভাবে করলেই চলবে না। আমাদের মননে এর প্রস্ফুটন ঘটাতে হবে। ভাষার জন্য লড়াই থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত তাঁর আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তিনি নিজ স্বার্থ বলিদান দিয়ে শুধু মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। আমরা জাতি হিসেবে ভাগ্যবান যে বঙ্গবন্ধু এ ভূখন্ডে জন্মেছিলেন। আমাদের অনুপ্রেরণা কিংবা উদাহরণ হিসেবে দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে আমরা জাতি হিসেবে এতটাই দুর্ভাগা যে পঁচাত্তরের পনেরো আগস্টের মতো ইতিহাসের জঘন্যতম নির্মম হত্যাকান্ড বাংলার মাটিতে দেখতে হয়েছে। ’৭৫ পরবর্তী সময়কালে বঙ্গবন্ধু কন্যাদ্বয়কে শরণার্থীর মতো বিদেশে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। সামরিক জান্তার যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হয়েছে এ জাতিকে। দিশেহারা হয়ে পড়েছিল সার্বভৌমত্ব। গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল গোটা জাতি। ইতিহাসে এসেছিল চরম বিকৃতি। পাকিস্তানী প্রেতাত্মারা নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস না পৌঁছানোর সকল কায়দা কানুন অতি সুকৌশলে করেছে। এ ইতিহাস আজ সকলের জানা। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর জাতি আবার আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। এ যে বঙ্গবন্ধুরই রক্ত। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আজ পৃথিবীর মানচিত্রে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সুনাম অর্জন করেছি। সবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর নিরলস পরিশ্রমের ফলে। তাঁর শূন্যতা এ জাতি কল্পনাও করতে পারে না। অমাবস্যার রাতে লাখো ওয়াটের জ্বলন্ত আলো হঠাৎ নিভে গেলে যে অন্ধকারের সৃষ্টি হয় তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশ ঠিক তেমনই। চারদিকে শুধুই অন্ধকার আর অন্ধকার। আমরা দেশের বাইরে থেকে এমনটাই দেখি। ১৯৭৮ সালে তৎকালীন সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে প্রথম ইউরোপিয়ান কনফারেন্স আয়োজন করে সুইডেন আওয়ামী লীগ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ রেহানা। পরের বছরই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে স্টকহোমে প্রথম গণসংবর্ধনা দেয়ার আয়োজন করি। তখন আমি সেখানকার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলাম। তখন তরুণ বয়সে আমরাও ছিলাম দিশেহারা। হাল ছাড়িনি। দেশে থেকে যা করা যায় না বিদেশে থেকে কিছু কিছু সময় তা করা যায়। সমস্ত ইউরোপজুড়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করি। আজ বিদেশে থেকে যখন দেখি বাংলাদেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে, ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হচ্ছে, তখন গর্বিত বোধ করি। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য সন্তান এবং তথ্য ও যোগাযোগ উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনায় আজ বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আমি সুইডেন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই । দেশের সকল ইতিবাচক সাফল্যে বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। অন্যদিকে হাতেগোনা কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় দেশের প্রতি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ম্লান হয়ে যায় সকল অর্জন। এ কাজটি খুব সূক্ষ্ম এবং পরিকল্পিতভাবে করে একটি গোষ্ঠী। এরা নিজের আখের গোছাতে রাতারাতি ভোল পাল্টিয়ে কিছু অসাধু লোকজনের যোগসাজশে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও কিছু অর্থলিপ্সু দুষ্কৃতকারী পদ্ধতিগত দুর্বলতার কারণে পার পেয়ে যাচ্ছে। সরকারী দফতরগুলোকে শতভাগ ডিজিটাইজেশনের আওতায় আনতে হবে। বাইরে থেকে এক্সপার্ট কনসালট্যান্ট এনে সিস্টেম ডেভেলপ করলে ভাল হবে। দেশের ভেতরের লোক দিয়ে এটি শতভাগ হচ্ছে না। অসাধু ব্যক্তিবর্গ পদ্ধতির ভেতর গলদ রেখে দুর্নীতির রাস্তাগুলোকে খুব যত্ন করে সৃষ্টি করে রাখে। সুইডেন আওয়ামী লীগের সভাপতির বাইরে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় সুইডেনে আমি একজন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করছি। আমরা রাফ একটা স্টাডি করে দেখেছি শুধুমাত্র সিস্টেম ডেভেলপ করে মিলিয়ন বলব না বিলিয়ন ডলারের দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব। এদেশের মানুষের জন্য যে মানুষটা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন শুধুমাত্র কিছু দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি সব নস্যাৎ করে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে নেত্রীকে খুব অসহায় মনে হয়। তাঁর পরিশ্রমের মর্যাদাটাও আমরা দিচ্ছি না। পক্ষান্তরে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলমান। বিদেশে প্রচুর দেশপ্রেমিক ছেলেমেয়েরা রয়েছে, যারা প্রযুক্তির দিক থেকে খুবই মেধাবী। তাদেরকেও আমরা কাজে লাগাতে পারি। রাষ্ট্রের এককালীন কিছু পয়সা খরচ হলেও এর সুফল হাজারগুণ বেশি হবে। আমি যদি শুধুমাত্র ভ্যাট নিয়ে বলি, ভ্যাট যে নিয়মে ডিজিটালাইজ করা হয়েছে এটি একটি ভুল সিস্টেম। এতে অনেক ফাঁক রয়েছে যার মাধ্যমে দুর্নীতি করা যায়। এগুলোকে বন্ধ করতে হবে সঠিক প্রযুক্তির মাধ্যমে। যেন রাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে লাভবান হয়। প্রধানমন্ত্রীকে এ ধরনের সঠিক তথ্য-পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। তিনি একা সবদিক সামলাচ্ছেন। আজ ষোলো কোটি মানুষের আস্থার জায়গা একটি। আমরা দেশকে ভালবাসি, দলকে ভালবাসি। দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি। নেত্রীকে ভালবাসি। তাঁর কাঁধে যখন দেশের দায়িত্ব তখন দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন ঘটনা সহ্য করতে পারি না। মনে হয় তাঁর এত পরিশ্রমের দৃষ্টান্তও আমাদের ভেতর সততার উদ্রেক করতে পারে না। মানুষের পরিবর্তনের চেয়ে পদ্ধতিগত পরিবর্তন বেশি কার্যকর হবে। সিস্টেমের মধ্য দিয়ে চলতে চলতে যদি এ পরিবর্তন হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘রাষ্ট্রনীতিকে বড় করিয়া দেখিবার শক্তি অতি অল্প লোকের আছে। বিশেষত, লোভ যখন বেশি হয়, তখন দেখিবার শক্তি আরও কমিয়া যায়।’ এ ধরনের লোভী মানুষ অতীতেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই সিস্টেমের পরিবর্তনের বিকল্প নেই। ইচ্ছে করলেও দুর্নীতি করা সম্ভব হবে না। আরেকটি বিষয় আমি খুব গুরুত্বের সঙ্গে বলতে চাই, তা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এখানেও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। কেননা ঘাতকেরা সবসময় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। তাই এর প্রতিরোধেও চাই আধুনিক প্রযুক্তি। সবশেষে বলতে চাই সকলে নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশকে ভালবাসি, সবাই সোচ্চার হই দুর্নীতির বিরুদ্ধে, তবেই মানবতার জননী শেখ হাসিনা আমাদের একটা উন্নত রাষ্ট্র উপহার দিতে পারবেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,‘ সকল কালের সকল দেশের সকল মানুষ আসি/এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শুন এক মিলনের বাঁশি।’ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা শেখ হাসিনার হাত ধরেই এগিয়ে যাবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। লেখক : সভাপতি, সুইডেন আওয়ামী লীগ
×