ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তিতে নোবেল ডব্লিউএফপির

প্রকাশিত: ২০:১৫, ১২ অক্টোবর ২০২০

শান্তিতে নোবেল ডব্লিউএফপির

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়ে এবার বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী বা ডব্লিউএফপি। ইতোপূর্বে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসা ও সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অবদানের জন্য ২০১৯ সালের নোবেল পুরস্কার ঘোষিত হলেও তা তেমন বিস্ময় বা চমক সৃষ্টি করেনি। যদিও নিজ নিজ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মেধা ও গবেষণারই অনন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন তারা। তাদের অবদানকে বিন্দুমাত্র খাটো না করেও বলা যায়, এবার সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন। ইতোপূর্বে বহু বিতর্কিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শান্তিতে নোবেল দেয়া হয়েছে এবং তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তবে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর এই অর্জন নিয়ে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই। কেননা, সুনিশ্চিতভাবে বলা চলে যে, বিশ্বায়নের প্রভূত উন্নয়ন ও অগ্রগতি সত্ত্বেও অদ্যাবধি মানুষের অন্যতম প্রধান শত্রু ক্ষুধা, এমনকি যুদ্ধের চেয়েও। বলা বাহুল্য, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য হাত ধরাধরি করে চলে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশে তা আরও প্রবল ও প্রকট। এমনকি ক্ষুধাকে কোথাও অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্ষুধার বিরুদ্ধে মানুষের নিরন্তর সংগ্রামে সর্বশেষ করোনাভাইরাস মহামারী বা কোভিড-১৯ যোগ করেছে ভয়ঙ্কর মাত্রা। দীর্ঘ লকডাউনসহ বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ, যা সচল হয়নি এখন পর্যন্ত, অগণিত মানুষের জীবন-জীবিকা রয়েছে ভয়াবহ হুমকির মুখে। বিশ্বব্যাপী কর্মচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। ফলে অনিবার্য দারিদ্র্য ও ক্ষুধার্ত লোকের সংখ্যা বাড়ছে দেশে দেশে। এই সমস্যার আপাত সমাধানে নিরন্তর কাজ করে চলেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী বা ডব্লিউএফপি। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সহায়তা সংস্থা। ২০১৫ সালে জাতিসংঘ তার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে ক্ষুধা দূরীকরণকে। জাতিসংঘের এই লক্ষ্য পূরণে অন্যতম সহায়ক শক্তি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী। ২০১৯ সালে সংস্থাটি ৮৮টি দেশে গুরুতর খাদ্য অনিরাপত্তার শিকার ক্ষুধার্ত ১০ কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে ১৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ভুগেছে মারাত্মক খাদ্যাভাবে। ক্ষুধার্ত মানুষের এই সংখ্যা বেড়েছে মূলত যুদ্ধবিগ্রহ, সংঘাত-সংঘর্ষ-গৃহযুদ্ধ, সর্বোপরি করোনার কারণে। যেমন- ইয়েমেন, ইরাক, সিরিয়া, কঙ্গো, নাইজিরিয়া, দক্ষিণ সুদান, বুরকিনা ফাসো, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থী। এসব দেশেই সংস্থাটি সমূহ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্ব ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর (ডব্লিউএফপি) বলছে, অন্তত ৩৬টি দেশ, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকা, দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা, যদি সময়োচিত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তীব্র খাদ্য সঙ্কটে থাকা মানুষের সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ হতে পারে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বে সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ তীব্র খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে। করোনার কারণে তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে সাড়ে ২৬ কোটিতে। খাদ্য সঙ্কটের পেছনে করোনার বাইরেও রয়েছে সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো। এই সমূহ হুমকি মোকাবেলায় জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছে ডব্লিউএফপি। সংস্থাটি বলেছে, চলতি বছর বৈশ্বিক সাহায্য কর্মসূচীগুলো অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন ১০-১২ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। দেশে দেশে ক্ষুধা দূরীকরণে কর্মরত বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর শান্তিতে নোবেল অর্জন এই কাজেরই একটি অনন্য স্বীকৃতি।
×