ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ধর্ষণের শিকার ঢাবি ছাত্রী

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ১১ অক্টোবর ২০২০

অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ধর্ষণের শিকার ঢাবি ছাত্রী

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ টানা তিনদিন ধরে অনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সাবেক ভিপি নূরসহ তার সহযোগীদের ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সেই ছাত্রী। এদিকে রাতে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে তিনদিন ধরে বিশ^বিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশন করছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী, যিনি নূর ও তার সহযোগীদের সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদেরও কর্মী। আসামিরা ছাত্রীর নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনও চালিয়ে যাচ্ছে অপপ্রচার। এদিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামি নূরসহ সকল আসামিকে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। টানা ২৭ ঘণ্টা অনশনের পর ভুক্তভোগী ছাত্রী শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় অনশনস্থলেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ডাঃ শেখ মোঃ আল আমিনের নেতৃত্বে একটি চিকিৎসক টিম রাতে ওই ছাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সাবেক এজিএস ফাল্গুনী দাস তন্বী। তিনি বলেন, আমরা তাকে খাবার গ্রহণের জন্য অনেক অনুরোধ করেছি। কিন্তু তিনি আসামিদের না ধরা পর্যন্ত আমরণ অনশনে করতে সংকল্পবদ্ধ। টানা না খেয়ে থাকার ফলে রাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসক টিম এসে তাকে স্যালাইন দিয়েছে। শনিবার ওই ছাত্রীর পাশে সংহতি জানিয়েছেন সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক জেসমিন আক্তার রিপা। তিনি বলেন, একটানা না খাওয়ার কারণে রাতে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। তিনি বেশ কয়েকবার বমি করেছেন। আমরা আপাতত স্যালাইন চালিয়ে নিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী বলেছেন, আমাদের প্রক্টরিয়াল টিম ওই ছাত্রীর সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ করছেন। আমাদের সহকারী প্রক্টর তাকে দেখে এসেছেন। ওই শিক্ষার্থীর পাশে আমরা আছি। তার জন্য বিশ্ববিদ্যালযের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার, তা করা হচ্ছে। ধর্ষণের মামলা দায়েরের ২১ দিন পার হলেও আসামিদের কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে অনশনে বসেন ওই ছাত্রী। তিনি বলছিলেন, ধর্ষকরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। মামলা তদন্তের স্বার্থে আমি একাধিকবার থানায় যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছেন, আসামি ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তির বলে আসামিরা গ্রেফতার হচ্ছে না। এদিকে ছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি নূরসহ ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে শনিবার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে শাহবাগ অবরোধ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল মামুনের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্যসহ প্রমুখ। বিক্ষোভ সমাবেশে মোঃ আল মামুন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের নিয়ে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে গড়ে ওঠা সংগঠন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের যেকোন অনিয়ম ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় শাহবাগে বামাতি-জামাতি মৌলবাদী অপশক্তি কর্তৃক বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার আসামি নূর গংসহ সম্প্রতি সংঘটিত সকল ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত সকল ধর্ষককে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সোচ্চার। তিনি বলেন, ধর্ষক নুরুল হক নূর গংরা বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ধর্ষিত মেয়েটির চরিত্র হনন করে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ লেখালেখি করে যাচ্ছে যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আসামিদের এরকম ঘৃণ্য কর্মকান্ডের কারণে মেয়েটি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়ে ইতিমধ্যে সে সংবাদ সম্মেলন করে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে এবং ধর্ষণের বিচার পাওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বসে অনশন কর্মসূচী পালন করছে যা রাষ্ট্রের জন্য খারাপ বার্তা বয়ে আনছে। বিক্ষোভ সমাবেশে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবির মধ্যে আছে- আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি নুরুল হক নূর গংদের গ্রেফতার করতে হবে। ঢাবির ছাত্রী ধর্ষণ, নোয়াখালীতে নারী ধর্ষণ, সিলেটের এমসি কলেজে গণধর্ষণ, পাহাড়ে আদিবাসী তরুণী ধর্ষণ, ছাত্রফ্রন্টের নেতা কর্তৃক নিজ তরুণী ধর্ষণ ও সিপিবির নেতা কর্তৃক সিপিবির নেত্রী জলি তালুকদারকে যৌন নিপীড়ন ইত্যাদি ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
×