ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভাড়াটে খুনী দিয়ে সেলিনাকে খুন করে সৎ ছেলে

প্রকাশিত: ২৩:০০, ১১ অক্টোবর ২০২০

ভাড়াটে খুনী দিয়ে সেলিনাকে খুন করে সৎ ছেলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুই লাখ টাকার চুক্তিতে ভাড়াটে খুনী দিয়ে সেলিনা বেগমকে (৩৫) খুন করেছে তারই জার্মান প্রবাসী সৎ ছেলে। শুক্রবার রাতে নড়াইলের নড়াগাতি থানা এলাকা থেকে ভাড়াটে খুনী জান্নাতুল ফেরদৌস নাঈমকে গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে ডিবি পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত নাঈম এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। শনিবার ডিবি পুলিশ গ্রেফতারকৃত নাঈমকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে। পুলিশ জানায়, গত ২ অক্টোবর রাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে হুজুরপাড়া নূরজাহান স্কুলের কাছে নিজ বাড়িতে সেলিনা বেগম (৩৫) খুন হন। পুলিশ জানায়, সম্প্রতি সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ওবাইদুল্লাহর স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি তার নিঃসন্তান শ্যালিকা সেলিনা খানমকে বিয়ে করেন। এতে সবার সম্মতি থাকলেও ওবাইদুল্লাহর জার্মান প্রবাসী ছেলে বিপ্লব তা মেনে নেয়নি। এরই জের ধরে পেশাদার কোন খুনী এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশের ধারণা ছিল। নিহতের স্বামী ওবাইদুল্লাহর করা হত্যা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তে ডিবি পুলিশ ঘটনার মূল রহস্যে উদ্ঘাটনে মাঠে নামে। ডিবি পুলিশ জানায়, ছয় মাস আগে মায়ের মৃত্যুর পর বাবা ওবায়দুল্লাহ পুনরায় বিয়ে করার পর জার্মান প্রবাসী ছেলে মাজহারুল ইসলাম বিপ্লব ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে বাগবিত-া হয়। এরপরই মায়ের জানাজায় অংশগ্রহণ শেষে বিপ্লব জার্মান চলে যান। এরপর সেখান থেকে সৎ মা সেলিনাকে হত্যার ছক আঁকেন। পরে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ভাড়াটে খুনী নাঈমকে দুই লাখ টাকা চুক্তিতে ঠিক করেন। সেই অনুযায়ী কামরাঙ্গীরচরে ওবাইদুল্লাহর বাড়িতে রুম ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন নাঈম। সুযোগ বুঝে গত ২ অক্টোবর পরিকল্পিতভাবে সেলিনাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন নাঈম। শনিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শামসুল আরেফীন জানান, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে আসামির নাঈমের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরই সূত্র ধরে শুক্রবার নড়াইল জেলার নড়াগাতি থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি রাজধানীর ভাসানটেক এলাকার নাঈমের মামার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। এডিসি শামসুল আরেফীন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাঈম জানান, সেলিনাকে হত্যার জন্য বিপ্লব তাকে ৫০ হাজার টাকা ও একটি ছুরি নড়াইলের একজন ব্যক্তি তার কাছে সরবরাহ করেন। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী কামরাঙ্গীরচরে ওবাইদুল্লাহর বাসায় রুম ভাড়া নেন নাঈম। সুযোগ বুঝে সেলিনাকে ওই ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে নাঈম। সেলিনাকে খুনের পরের দিন গত ৩ অক্টোবর তার সৎ ছেলে বিপ্লব বিকাশের মাধ্যমে তাকে (নাঈমকে) আরও ৬০ হাজার টাকা পাঠান। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত নাঈমকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ওবাইদুল্লাহর ছেলে বিপ্লব হোসেন। তবে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ওবায়দুল্লাহর সৌদি প্রবাসী ভাই মিজানের যোগসাজশ পাওয়া গেছে। তারা দু’জনই নাঈমের সঙ্গে যোগযোগ করেছেন। এডিসি শামসুল আরেফীন জানান, শনিবার দুপুরে গ্রেফতারকৃত নাঈমকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। নিহতের পরিবার অভিযোগ করেন, অসুস্থতার কারণে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ওবায়দুল্লাহর প্রথম স্ত্রী ৯ মাস আগে মারা যায়। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তার শ্যালিকা সেলিনা বেগমকে বিয়ে করেন। মাস দেড়েক আগে তাদের বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হয়। জার্মান প্রবাসী ছেলে মাজহারুল ইসলাম বিপ্লব গত জানুয়ারি মাসে মায়ের মৃত্যুর পর এসে আনুষ্ঠানিকতা সেরে চলে যান। ওয়াবদুল্লাহ গত মার্চ মাসে বিয়ে করলেও তা গোপন থাকে। দেড় মাস আগে জানাজানি হওয়ার পর প্রথমে কেউ মেনে নিচ্ছিল না। পরে তার তিন মেয়ে মেনে নিলেও তার জার্মান প্রবাসী একমাত্র ছেলের সঙ্গে বাবার দূরত্ব বাড়ে। বাবা-ছেলের মধ্যে প্রতিনিয়ত ফোনে ঝগড়া হতো। ছেলে মেরে ফেলবে বলে নানাভাবে হুমকি দিত। বাবাও ধমক দিয়ে দেশে এসে ছেলেকে তার সঙ্গে মোকাবেলা করার জন্য বলত। সেলিনার মেজো ভাই মনিরুজ্জামান জানান, বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর তার মৃত বড় বোনের ছেলে বিপ্লব জার্মানিতে বসে তার বোনকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এই হুমকির বিষয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় তার বোন ভাগ্নের বিরুদ্ধে একটি জিডিও করেছিলেন। আমার বোনকে দুনিয়াতে থাকতে দেবে না এ ধরনের হুমকির বিষয়টি পরিবারের সবাই জানে। এরই মধ্যে এই হত্যার ঘটনা ঘটল।
×