স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ ফতুল্লার ইসদাইরের বুড়ির দোকান এলাকায় শুক্রবার রাতে কিশোর গ্যাংয়ের দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাকিল হোসেন নাঈম (২১) নামে একজন নিহত এবং লিমনসহ (২২) আরও চারজন আহত হয়েছে। আহত লিমনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের পর পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত সাকিল হোসেন নাঈম ইসদাইর এলাকার খলিল মিয়ার ছেলে। সে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিল।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, সাকিল হোসেন নাঈম, লিমন, হাবিব ও হৃদয় মিয়াসহ একদল কিশোর বুড়ির দোকান এলাকায় একই সঙ্গে অবস্থান করছিল। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় নাঈম ও লিমনকে ছুরিকাঘাত করে তারা পালিয়ে যায়। এ সময় গুরুতর আহত নাঈম ও লিমনকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার নাঈমকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত লিমনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মোঃ আসলাম হোসেন জানান, দুটি কিশোর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে নাঈম নামে এক কিশোর নিহত ও লিমন নামে একজন আহত হয়েছে। আহত লিমনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায নিহত নাঈমের মা নাজমা বেগম বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় হাবিব (২৫) ও হৃদয় মিয়া (২২) নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এদিকে ফতুল্লার চাঁনমারী মাউরাপট্টি সেকশনমাঠ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এলাকায় ত্রাস ও জনমনে ভীতি সৃষ্টিকারী কিশোর গ্যাংয়ের ১১ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১’র সদস্যরা। শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। শনিবার বিকেল পৌনে তিনটায় র্যাব-১১’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ সুমিনুর রহমানের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো-মোঃ রাসেল মিয়া ওরফে রাসেল (১৮), মোঃ জালাল (১৮), মোঃ আমিনুল ইসলাম (২৩), মোঃ জনি ওরেফ শফিকুল ইসলাম (১৮), মোঃ জাকির হোসেন ওরফে জাকির (১৮), মোঃ আনোয়ার (১৮), মোঃ জুয়েল রানা (২২), মোঃ আবু নাঈম (১৮), মোঃ ফেরদৌস ইসলাম (১৮), মোঃ আব্দুল্লাহ ওরফে শুভ (২৪) ও মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে শান্ত (১৮)।
র্যাব জানায়, বৃহস্পতিবার কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা অপর এক কিশোরকে অপহরণ করে চাঁনমারী মাউরাপট্টি সেকশনমাঠ এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ভবনে আটকে রাখে এবং মারধর করে তার কাছে থেকে ৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ওই কিশোরের মায়ের কাছে ফোন করে ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ওই কিশোরের মা ১০ হাজার টাকা দিবে বলে জানায়। পরে অপহৃত কিশোরের মায়ের অভিযোগে ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
সাভারে গ্রেফতার ৩ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, সাভারে অপহৃত এক যুবককে উদ্ধার করেছে র্যাব-৪ এর একটি দল। এ ঘটনায় অপহরণকারী কিশোর গ্যাংয়ের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, মোঃ মুসা কাজী (১৯), মোঃ জাহিদ হাসান (১৮) ও মোঃ আশিক হোসেন (১৮)। অপহৃত ওই যুবকের নাম হৃদয় (১৮)। সে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার বাল্লা গ্রামের মোঃ হোছেনের ছেলে। শনিবার দুপুরে প্রেস বিজপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জমিরউদ্দীন আহমেদ।
র্যাব জানায়, শুক্রবার দুপুরে ব্যক্তিগত কাজের জন্য সাভারে যায় হৃদয়। পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে হৃদয়ের মোবাইল থেকে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণের টাকা চেয়ে তার পরিবারের কাছে ফোন করে। পরবর্তীতে অপহৃতের পরিবার রাত ৮টার দিকে র্যাব ক্যাম্পে যোগাযোগ করে সহযোগিতা চাইলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাভারের আনন্দপুর সিটিলেন এলাকা থেকে হৃদয়কে উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে তিন অপহরণকারীকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-৪ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জমির উদ্দীন আহমেদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার পাশাপাশি মানুষকে অপহরণ ও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের কথা স্বীকার করে এবং তারা কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানায়।
নোয়াখালীতে গ্রেফতার ৩ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও বসতঘর ভাঙচুরের অভিযোগে স্থানীয় কিশোর গ্যাং সাদ্দাম বাহিনীর তিন সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলো গোপালপুর ইউনিয়নের কোটরা মহব্বতপুর গ্রামের দুলা মিয়া সারেং বাড়ির মামুন মিয়ার দুই ছেলে ফরহাদ হোসেন (২০), ডিজে পারভেজ (২৫), নবী মিয়ার ছেলে নেছার উদ্দিন দুঃখ (২৮)।
জানা যায়, সাদ্দাম বাহিনীর প্রধান ইয়াবা সাদ্দাম (২৮) এর নেতৃত্বে গত কিছুদিন যাবত চাঁদকাশিমপুর দিলার বাড়ির প্রবাসী হুরন মিয়ার স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকিসহ বিভিন্ন ভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রীর বসতবাড়ির দরজা-জানালা ভেঙ্গে তার ঘরে ঢুকার চেষ্টা করে এবং তাকে ধর্ষণের হুমকি প্রদান করে। এ সময় ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রীর সহযোগিতায় কেউ এগিয়ে না আসায় তিনি জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ কল করলে দ্রুত পুলিশ সেখানে হাজির হয় এবং সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়।