ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গুরুত্বপূর্ণ ৫ ধরনের সেবা মিলছে ১৫ অক্টোবর থেকে অনলাইনে গাড়ির ফিটনেস আবেদন

কমবে ভোগান্তি ॥ ডিজিটাল সেবায় বিআরটিএ

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১১ অক্টোবর ২০২০

কমবে ভোগান্তি ॥ ডিজিটাল সেবায় বিআরটিএ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ গ্রাহকের ভোগান্তি এড়াতে অনলাইন সেবা চালু করছে রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিআরটিএ)। আস্তে আস্তে গ্রাহক পর্যায়ে সব ধরনের সেবা ডিজিটাল করা হবে। প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, এতে বিআরটিএতে আসা গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার যেমন কম হবেন, তেমনি কমবে দুর্নীতি। তাছাড়া গ্রাহকরা নিজের সুবিধামতো সময়ে সেবা পাবেন। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে সব ধরনের গাড়ি ও যানবাহনের ফিটনেসের জন্য অনলাইনে আবেদন বাধ্যতামূলক কার্যকর হচ্ছে। এছাড়া ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন করে পাওয়া যাচ্ছে বিআরটিএ মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের শিক্ষানবিস (লার্নার) ড্রাইভিং লাইসেন্সের সনদ। বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন অনলাইনে পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স, স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স, পুরনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন, ডুপ্লিকেট ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি সেবার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আস্তে আস্তে তা দেশের সকল জেলায় বাড়ানো হচ্ছে। জানা গেছে, প্রতি বছর লার্নার সনদের জন্য ৫ থেকে সাত লাখ আবেদন জমা হয়। চলতি বছর অনলাইনে সমপরিমাণ আবেদন গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে টার্গেটের কাছাকাছি আবেদন জমা পড়েছে। এর পরিমাণ ছয় লাখের কিছু বেশি হতে পারে। নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদনকারীরা সনদ প্রিন্ট করে নিচ্ছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অনলাইনে বিআরটিএ’র নির্ধারিত ফরম পূরণ করে বিকাশে টাকা পরিশোধ করে ৬ মাস মেয়াদী এ সনদ পাচ্ছেন আবেদনকারী। বিআরটিএ হিসাব অনুযায়ী রাজধানীতে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহনের সংখ্যা ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৯৪৯টি। আগস্ট পর্যন্ত এই পরিমাণ যানবাহন নিবন্ধন হয়েছে। আর করোনার সময়ে অর্থাৎ চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ঢাকায় রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে সাত হাজার ৩২টি গাড়ি। মোট প্রায় ১৬ লাখ যানের মধ্যে সাত লাখ ৬২ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল। এছাড়াও চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত সারাদেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৪৫ লাখ ২৩ হাজার ৬০০। এসব গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা, ড্রাইভিং লাইসেন্স (বিভিন্ন ধাপে), চালক প্রশিক্ষণ, রেজিস্ট্রেশনসহ সকল কাজের জন্য বিআরটিএতে ভিড় করেন গ্রাহকরা। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তিক্ত অভিজ্ঞতাই বেশি। এরমধ্যে প্রায় দেড় বছর নানা জটিলতায় আটকে আছে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য কার্ড সেবা কার্যক্রম। কয়েক দফা টেন্ডারের পরও কার্ড জটিলতার অবসান করতে পারেনি বিআরটিএ। ফলে দফায় দফায় ঘুরতে হচ্ছে গ্রাহকদের। কার্ড প্রিন্ট কার্যক্রম এক প্রকার স্থবির বলা চলে। তাই সব রকমের ভোগান্তি কমাতে অনলাইন সেবার দিকে ঝুঁকছে বিআরটিএ। ১৫ অক্টোবর থেকে ঢাকা মেট্রোতে তিনটি ও ঢাকা জেলা বিআরটিএ কার্যালয়ে সব ধরনের গাড়ি ও যানবাহনের ফিটনেসের জন্য অনলাইনে আবেদন করার কথা জানিয়ে বিআরটিএ’র পরিচালক (অপারেশন ও রেজিস্ট্রেশন) শিতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ‘বিআরটিএ’র সব কার্যক্রম এখন শতভাগ ডিজিটাল করা হয়েছে। আগে লোকজনকে বিআরটিএ অফিসে আসতে হতো। এতে তাদের অনেক সময় অপচয় এবং বাড়তি টাকা খরচ হতো। ভোগান্তিও ছিল, তবে এখন ভোগান্তির অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, গ্রাহকসেবায় আমরা এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে চাই। বিআরটিএ সেবা নিতে এসে মানুষ অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। নানা অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বিআরটিএ। এসব কিছু থেকে বেরিয়ে আমরা নতুন কিছু করার চিন্তা করছি। ধাপে ধাপে অনলাইন সেবা সারাদেশে চালু হবে। ইতোমধ্যে বেশকিছু অনলাইন সেবা সারাদেশে চালু হয়েছে। আরও কিছু চালুর অপেক্ষায়। এজন্য সকল প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রতি বছর লার্নার সনদের জন্য পাঁচ থেকে সাত লাখ আবেদন জমা হয়। এ বছর ছয় লাখের কিছু বেশি আবেদন জমা হয়েছে মনে হয়। অনলাইনে লার্নার সনদ আবেদনের বিষয়ে শিতাংশু শেখর বলেন, অনলাইনে লার্নার আবেদনে ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিআরটিএ’র আগের চিত্র এখন আর নেই। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনলাইনে পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স, স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স, পুরনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন, ডুপ্লিকেট ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি সেবার কার্যক্রম চলছে। ফিটনেস সনদের আবেদন বাধ্যতামূলক হচ্ছে ॥ জানা গেছে, আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে সব ধরনের গাড়ি ও যানবাহনের ফিটনেসের জন্য অনলাইনে আবেদন বাধ্যতামূলক কার্যকর হচ্ছে। আবেদনকারীকে অনলাইনেই জানিয়ে দেয়া হবে কবে, কখন এবং কোথায় গাড়ির ফিটনেসের জন্য আসতে হবে। বিআরটিএ’র রেকর্ডে প্রায় ৪৫ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন আছে। এরমধ্যে লাইসেন্স আছে প্রায় ৩৭ লাখের। ‘মূল্যবান সময় বাঁচান, এ্যাপয়েনমেন্ট নিয়ে ফিটনেস করুন’ এই সেøাগানে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রাথমিকভাবে ঢাকার তিনটি মেট্রো সার্কেল, মিরপুর, ইকুরিয়া, দিয়াবাড়িসহ ঢাকা জেলা কার্যালয় থেকে এ সনদ নেয়া যাবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সারাদেশের বিআরটিএর কার্যালয়ে এ পদ্ধতিতে ফিটনেস সনদ নবায়ন কার্যক্রম চালু করা হবে। বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, বর্তমানে যানবাহন নিয়ে বিআরটিএ অফিসে গিয়ে বসে থাকতে হয়, অনলাইন পদ্ধতিতে মানুষের ভোগান্তির অবসান ঘটবে। সময় বাঁচবে। তাছাড়া মানুষ এখন দ্রুত সময়ে কাজ শেষ করতে চান। আমরা গ্রাহকদের কথা বিবেচনায় নিয়ে অনলাইন সেবা চালুর ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে মোটরযান মালিকের সুবিধামতো সময়ে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন। আমরা চারটা স্পট করে দিয়েছি। ওই সময়ে আমাদের কর্মীরা ফিজিক্যালি দেখে কয়টা গাড়ির ফিটনেস দিতে পারবে তা ঠিক করে নেবেন। নির্ধারিত স্পটে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে এসেছে এমন যানবাহনের ফিটনেস সনদ নবায়নের কাজ করা হবে। এ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া কোন গাড়ি দেখা হবে না। এতে দালালের দৌরাত্ম্য কমবে বলেও মনে করেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান। ঢাকায় যানবাহন বেশি তাই সার্কেল অফিসগুলোয় চাপও বেশি একথা উল্লেখ করে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, এ কারণে শুরুতে আমরা ঢাকায় এই সেবা দিচ্ছি। তবে আমরা সারাদেশেই করব। এজন্য বিআরটিএর সার্ভিস পোর্টাল নংঢ়.নৎঃধ.মড়া.নফ ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রথমে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য গ্রাহকের নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, মোবাইল নম্বর দিতে হবে। নিবন্ধনের পর পোর্টালের ‘ফিটনেস এ্যাপয়েন্টমেন্ট সময়সূচী’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। এখানে ‘মোটরযান সংযুক্ত করুন অপশনে গিয়ে যানবাহনের বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।’ এরপর সময়সূচী অপশনে গিয়ে কাক্সিক্ষত তারিখ এবং কোন সার্কেল থেকে ফিটনেস নবায়ন করবেন, তা সিলেক্ট করতে হবে। সিরিয়ালের জন্য দৈনিক চারটি ধাপ ভাগ করা আছে। সকাল ৯টা থেকে ১১টা, ১১টা থেকে ১টা, দুপুর ২টা থেকে ৪টা এবং ৪টা থেকে ৫টা। এ সময় থেকে পছন্দমতো সময় নেয়া যাবে। সব তথ্য পূরণ করে সাবমিট করলে গ্রাহকের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে তারিখ ও সময় জানিয়ে দেয়া হবে। যানবাহনের ফিটনেস নবায়নের তারিখের আগেই এ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া যাবে। বিআরটিএতে যাওয়ার আগে আয়করসহ যানবাহনের অন্যান্য ফি পরিশোধ করে মানি রিসিট সংগ্রহ করতে হবে। তবে অনলাইনে সিরিয়ালের জন্য কোন টাকা লাগবে না। নির্ধারিত তারিখে না গেলে সিরিয়াল বাতিল হবে এবং নতুন করে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। ছয় মাসের লার্নার সনদ ॥ মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের শিক্ষানবিস (লার্নার) ড্রাইভিং লাইসেন্সের সনদের জন্য ৩৪৫ টাকার সঙ্গে চার্জ শতকরা দেড় টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করে ৬ মাস মেয়াদী লার্নার সনদ পাচ্ছেন আবেদনকারী। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের ক্ষেত্রে একত্রে লার্নার সনদের জন্য ৫১৮ টাকার সঙ্গে শতকরা দেড় টাকা অতিরিক্ত চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিআরটিএর ওয়েবসাইটে দেয়া বিআরটিএর মনোগ্রামসহ লার্নারের সনদের পারমিট রয়েছে। ফলে নির্ধারিত ফি বিকাশে পরিশোধের পর নিজেরাই কম্পিউটার থেকে লার্নারের সনদ প্রিন্ট বের করে নিচ্ছেন আবেদনকারী। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ এবং লার্নারের সনদ প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। তবে ওই সময় বিআরটিএর সব কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে চালু করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিআরটিএর যাবতীয় কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে চালু করা হয়েছে। বিআরটিএ’তে বর্তমানে সব ধরনের আবেদন অনলাইনে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের ৬৪টি জেলাতেই ৬ মাস মেয়াদী লার্নার সনদ পাচ্ছেন আবেদনকারীরা। বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টালে বিকাশ পদ্ধতি ॥ যে কোন ফি পেমেন্ট করার জন্য আবেদনকারীকে বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টালে এ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক। যাদের এ্যাকাউন্ট নেই তারা যঃঃঢ়ং:/িি.িরঢ়ধুনৎঃধ.পহংনফ.পড়স/রহফবী/ষড়মরহ এই ওয়েবসাইট ভিজিট করে এ্যাকাউন্ট করে নিতে পারবেন। এ্যাকাউন্ট তৈরির পর বিভিন্ন সেবার জন্য অনলাইনে আবেদন এবং ফি পেমেন্ট করা যাবে। আবেদনের জন্য প্রথমে নিচের যে কোন লিঙ্কে গিয়ে ইমেইল/মোবাইল নম্বর এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করতে হবে।
×