ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থেকে বহু দূরে মিয়ানমার

রোহিঙ্গা ইস্যুর জটিল রূপ

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১১ অক্টোবর ২০২০

রোহিঙ্গা ইস্যুর জটিল রূপ

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ আঞ্চলিক থেকে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হওয়ার পরও আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতির রূপ কেবলই জটিল হচ্ছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা এসব ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা একদিকে দিন দিন যেমন বেড়েই চলেছে, অপরদিকে মিয়ানমারের পক্ষে এদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার পরিবেশ সৃষ্টির প্রক্রিয়াটিতে ক্রমশ ভাটা পড়ছে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সকল আবেদন নিবেদন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে আছে। দীর্ঘ তিন বছরেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে আশার কোন আলো দেখা যাচ্ছে না। এদিকে, বিভিন্ন পরিসংখ্যানে এদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। উখিয়া টেকনাফের ৩৪ আশ্রয় শিবির ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করা রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে বছরে গড়ে প্রায় ৩০ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। ইতোমধ্যে গত তিন বছরে প্রায় ৯০ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে। দিন গড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমার এদের প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে এখন আলোচনা থেকেও যোজন যোজন দূরে সরে রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য একটি বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরগুলো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীসহ জঙ্গী তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে। বিভিন্ন সূত্র মতে, এ ধরনের তৎপরতায় কিছু এনজিওসহ বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার নেপথ্য ইন্ধন ও বিপুল অঙ্কের অর্থ জোগানের অভিযোগ রয়েছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে আশ্রিত এ জনগোষ্ঠী এদেশের জন্য মারাত্মক বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া আশ্রিতদের একটি অংশ প্রতিনিয়ত জঙ্গীপনায়ও উদ্বুদ্ধ হওয়ার জোরালো অভিযোগ রয়েছে, যা এদেশের জন্য ভয়াবহ মাথাব্যথার কারণ হয়ে যেতে পারে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাতের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী দমনের নামে সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার ঢল নামে। জ¦ালাও পোড়াও, নির্যাতন, ধর্ষণসহ অত্যাচার বর্বরতা থেকে রক্ষা পেতে রোহিঙ্গাদের যে ঢল নামে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান যাই হোক না কেন, তা ১২ লক্ষাধিক ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে এ সংখ্যার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন শিশুর দল। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইট ওয়াচ ইতোমধ্যে প্রকাশিত তাদের বিবৃতিতে বলেছে, রাখাইন রাজ্যে বর্তমানে প্রায় দেড়লাখ রোহিঙ্গাকে দীর্ঘ সময়জুড়ে ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। যাদের জীবনমান অত্যন্ত মানবেতর। সুযোগ পেলে এরাও বাংলাদেশমুখী হবে বলে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তে সর্বোচ্চ এলার্ট জারি থাকায় বর্তমান সময়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসতে পারছে না। তবে তাদের চেষ্টার কমতি নেই। এপার ও ওপারের রোহিঙ্গারা একইসূত্রে গাঁথা। আত্মীয়তার বন্ধন থেকে শুরু করে অপরাপর সব ক্ষেত্রে এরা একে অপরের পরিপূরক। সঙ্গত কারণে এরা সরাসরি না হলেও ভিন্ন দেশ ঘুরে এদেশে চলে আসার স্বপ্নে বিভোর। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমন সেই ষাটের দশক থেকে হলেও সবচেয়ে বেশি আগমন ঘটেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের গভীর রাতে। ওই সময়ে সে দেশে স্বাধীনতাকামী নামের বিভিন্ন বিদ্রোহী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশও চলে এসেছে। সঙ্গে এনেছে বিভিন্ন জাতের অস্ত্রও। এদেশে আশ্রয় লাভের তিনটি বছর পেরিয়েছে। মিয়ানমার সরকারের পক্ষে এদের প্রত্যাবাসনের জন্য যেমন কোন পদক্ষেপ নেই, তেমনি আশ্রিত এসব রোহিঙ্গাদেরও ফিরে যাওয়ার তেমন আগ্রহ নেই। শুধু তাই নয়, এদের কক্সবাজারের উখিয়া- টেকনাফ এলাকা থেকে অন্যত্র সরানোও কঠিন একটি বিষয় হয়ে আছে। ৩৪ আশ্রয় শিবিরজুড়ে বর্তমানে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গেল সপ্তাহজুড়ে টানা গোলাগুলি, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকা-ের যে ঘটনা ঘটেছে তার নেপথ্যে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের কথা প্রচারে এলেও একথা নিশ্চিত যে, এদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র। অন্য দেশ থেকে এসে আশ্রয় নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় একে অপরের ওপর হামলে পড়া, এলাকাবাসীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়া ছাড়াও মাদক ও মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত হয়ে এদের আইনশৃঙ্খলার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘিœত করা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ফলে উখিয়া টেকনাফ অঞ্চলের মানুষও দিন দিন ফুঁসে উঠছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কারণে এদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে বিঘিœত হয়ে আছে। সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, উখিয়া-টেকনাফে ৩৪ আশ্রয় শিবিরে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আশ্রয় নেয়া সন্ত্রাসীদের বেআইনী কর্মকা- ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনসহ সচেতন মহলকে। গেল সপ্তাহের দিনগুলোতে টানা গোলাগুলি, হত্যা, অগ্নিসংযোগ-ভাংচুর ও অপহরণ ঘটনা সাধারণ রোহিঙ্গাসহ স্থানীয়দের ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন করে রেখেছে। সূত্র জানিয়ছে, আশ্রয় ক্যাম্পে অন্তত তিন হাজার সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা রয়েছে। তারা বেআইনী কার্যক্রমে সক্রিয়। কারিগর ভাড়ায় এনে অস্ত্র তৈরির মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে রোহিঙ্গা উগ্রপন্থীরা। তারা মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপের কাছ থেকে ক্রয় ও ভাড়ায় এনে আশ্রয় শিবিরে অস্ত্র মজুদ করছে বলে জানা গেছে। ক্যাম্প লাগোয়া পাহাড়ের ভেতর কারিগর প্রস্তুত রেখে বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। গোপনে খবর পেয়ে র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তিনটি অস্ত্র, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ দুই কারিগরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। প্রত্যাবাসনবিরোধী কিছু সংখ্যক এনজিওর এবং পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের মদদে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। সূত্র জানায়, রাখাইনের স্বাধীনতার দাবিতে সৃষ্ট উগ্রবাদী একাধিক সংগঠনের ক্যাডাররা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের স্রোতে কিছুসংখ্যক সন্ত্রাসী সঙ্গে করে ভারি অস্ত্র নিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা এ দেশে এসে আশ্রয় শিবিরে সংঘবদ্ধ হয়ে গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গভীর রাতে ক্যাম্প অভ্যন্তরে গোপনে ট্রেনিংও নিচ্ছে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা। মাস্টার মুন্না গ্রুপ ও মৌলবি আনাস গ্রুপ ক্যাম্পে জঙ্গী সংগঠন সৃষ্টি করেছে। উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া মরগেজ পাহাড়ে তাদের অবস্থান। কয়েকদিন পরপর কথিত বন্দুকযুদ্ধ, হতাহত, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে অস্ত্রের ঝনঝনানি, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ নানা অজানা আতঙ্কে সাধারণ রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের মধ্যেও ভীতিকর অবস্থায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্প্রতি পাঁচ দিনে স্থানীয় এক গাড়িচালকসহ ৯ রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপের ক্যাডারদের কারণে রোহিঙ্গা সঙ্কট জটিল আকার ধারণ করছে। কৌশলে বিলম্বিত করা হচ্ছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের ক্যাম্প কমিটির চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল আহমদ জানিয়েছেন, দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘটিত ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে ২ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু ক্যাম্প ছেড়ে বিভিন্ন স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছিল, তারা বর্তমানে আস্তে আস্তে স্ব স্ব ঝুপড়িতে আসছে। ক্যাম্পে হাজারো দোকান থেকে মাসিক চাঁদা আদায় ও ইয়াবা কারবারকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তারে দীর্ঘদিন ধরে আনাস গ্রুপ ও মুন্না গ্রুপের মধ্যে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে বলে রোহিঙ্গা মাঝি মোঃ আয়ুব খান জানিয়েছেন। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা মাদক-স্বর্ণ পাচার ছাড়াও অস্ত্র ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়েছে। সূত্র জানায়, অপরাধমূলক কর্মকা- থেকে বিরত রাখতে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় নিরাপত্তা ও নজরদারি জোরদার করতে আর্মড পুলিশের (এপিবিএন) একটি ব্যাটালিয়ন সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। আর্মড পুলিশের পাশাপাশি অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে নিরাপত্তায় কাজ করছে। এই আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে এক হাজার ৬শ’ পুলিশ সদস্য কাজ করছে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে। উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা এসবের তোয়াক্কা করছেনা। স্থানীয়দের মতে, প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়াটাই যেন কাল হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। কিছুসংখ্যক এনজিওর ইন্ধন ও পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের সহযোগিতায় এদের একটি অংশ অস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং নিচ্ছে। গেল সপ্তাহে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন কুতুপালং গহীন পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পায় র‌্যাব। অস্ত্র বানানোর দুই কারিগরসহ তিনটি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র‌্যাব। বিশ্লেষকগণ বলেন, উদ্বাস্তু হয়েও হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে রোহিঙ্গারা যেভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, ভবিষ্যতে তাদের আয়ত্তে রাখা কষ্টকর হতে পারে। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় কক্সবাজার এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানো অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বেলায় স্বেচ্ছায় ও সম্মানের সঙ্গে হতে পারে। তবে দেশের ভেতর উদ্বাস্তু আশ্রয়ের বেলায় রোহিঙ্গাদের মতামত কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। কেননা সরকার ভিনদেশী নাগরিকদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে এই দেশে। তাই আশ্রয় দেয়ার জন্য জায়গা নির্ধারণে সরকারের যেখানে ইচ্ছা, সেখানেই যেতে হবে এসব আশ্রিতদের। সরকারই জায়গা নির্ধারণ করবে- রোহিঙ্গাদের কোথায় রাখা হবে। ভাসানচরে যাওয়া না যাওয়া বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া ঠিক হবে না বলে মত প্রকাশ করেছেন তারা। তালিকা করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানানস্তরের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পর্যায়ক্রমে সকল রোহিঙ্গাকে দেশে জনবিচ্ছিন্ন যে কোন দ্বীপে স্থানান্তর করা উচিত বলে মনে করেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা। বিভিন্ন সূত্রমতে, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও ভাসানচরে স্থানান্তর বিষয়ে বিরোধিতা করে কলকাঠি নাড়ছে কিছু এনজিও কর্মকর্তা ও পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা। সরকার ভাসানচরকে বিপুল অঙ্কের অর্থব্যয় করে বসবাস উপযোগী করেছে। সেখানে রোহিঙ্গা নেতাদের সফরে পাঠিয়ে তাদের মতামত নিতে হবে কেন? সরকারী হিসাব মতে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ রোহিঙ্গা উখিয়া টেকনাফে ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করছে। বেসরকারী হিসেবে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লক্ষাধিক। আশ্রয় প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিবছর জন্ম নিচ্ছে গড়ে প্রায় ৩০ হাজার শিশু। গত তিন বছরে নিবন্ধনের বাইরে আরও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নেয়ায় আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি। এই বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী একই জায়গায় থাকার কারণে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একদিকে আশ্রয় শিবিরের কাছাকাছি তাদের দেশ মিয়ানমার সীমান্তের গহীন জঙ্গল, অন্যদিকে গাদাগাদি করে থাকা লাখ লাখ মানুষের ভিড়। এই ভিড়ে প্রশাসনের পক্ষে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের খোঁজে বের করা মোটেও সম্ভব নয়। তাই তাদের মধ্যে সন্ত্রাসী মনোভাব, অস্ত্রের ট্রেনিং, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার, চোরাচালান, অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্যের মতো অপরাধ বেড়েই চলেছে। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, মাদক কারবার, এনজিওতে চাকরি, দোকানপাটে দিব্যি ব্যবসা বাণিজ্য করে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গারা। পাশাপাশি তারা চুরি, ছিনতাই ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। শিবির থেকে বেরিয়ে বিচরণ করার সুযোগে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, উখিয়া-টেকনাফে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টসাধ্য বিষয়। দেশী-বিদেশী দাতা সংস্থাগুলোর কারসাজিতে পরপর দু’বার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যেখানে রোহিঙ্গাদের এমন অপরাধ কর্মকা- ও সহিংস আচরণে খোদ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও ভাবিয়ে তুলেছে। উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির অশান্ত হয়ে ওঠার পেছনে কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন অভিজ্ঞ মহল। এসব বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন মনে করেছেন তারা। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমন করার কিছু দাবি উঠেছে সচেতন বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, ক্যাম্প অভ্যন্তরে দোকানপাট উচ্ছেদ, মাদক ব্যবসা বন্ধ করা, অবাধ চলাচল ও বিচরণ রোধ, মাঝি প্রথা বন্ধ করা, কোন এনজিওর সঙ্গে বিবেচনা না করে নেতৃত্বশীল পুরনো রোহিঙ্গাদের গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় আনতে হবে। এনজিওতে রোহিঙ্গাদের চাকরি নিষিদ্ধ করে ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটি বাতিল করা অতীব জরুরী বলে মনের করেন তারা। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক প্রতিটি ব্লকে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। প্রতিটি শেডে তল্লাশি চলাকালীন কোন সদস্য অনুপস্থিত থাকলে তার রেশন বিতরণ বন্ধ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করা থেকে বিরত রাখা।
×