ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডেথ রেফারেন্স মামলা আছে সাত শতাধিক

ঝুলে থাকা চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো শুনানির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ১১ অক্টোবর ২০২০

ঝুলে থাকা চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো শুনানির উদ্যোগ

বিকাশ দত্ত ॥ সুুপ্রীমকোর্টের আপীল ও হাইকোর্টে ঝুলে থাকা চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর শুনানির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে আপীল ও হাইকোর্ট বিভাগে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা শুনানির অপেক্ষায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দণ্ডের বিরুদ্ধে ৩০টি আপীলসহ সাত শতাধিক ডেথ রেফারেন্স মামলা রয়েছে। নতুন এ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন নিয়োগ পাবার পর পরই বলেছেন, বিডিআর হত্যা মামলাসহ চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে। বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা মামলাটি দুই ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। এখন সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে আপীল করার অপেক্ষায় রয়েছে। আসামি পক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেছেন, নকল পাবার পর আমরা আপীল করব। সেকশনে কাজ চলছে। রবিবার আমরা জানতে পারব, কবে আমরা নকল পাব। নতুন এ্যাটর্নি জেনারেল বিডিআর হত্যা মামলাসহ চাঞ্চল্যকর মামলা শুনানির উদ্যোগ নেবেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি এ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনিনি। এটা একটা ভাল উদ্যোগ। তবে আমি এ্যাটর্নি জেনারেলকে বলব, অনেক আসামি আপীল করতে চায়। রেগুলার আপীল করার মতো সার্ম্থ্য নেই। জেলখানায় একটি রায়ের কপি গেলে তারা জেল আপীল করতে পারবে। হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদ-সহ মোট ৫৫২ জনকে বিভিন্ন ধরনের দ- প্রদান করা হয়। দেশের ইতিহাসে এটি সর্ববৃহৎ রায়। গত ৮ জানুয়ারি তিন বিচারপতির স্বাক্ষরের পর পূর্ণাঙ্গভাবে রায়টি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। মোট ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার রায়। ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নবেম্বর দুদিন ধরে এ রায় প্রদান করা হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে বিচারপতি মোঃ শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ (বৃহত্তর) বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানি শুরু হয়ে ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল ৩৭০ কার্যদিবসে শেষ হয়। বেঞ্চের অন্য দুই জন বিচারপতি হলেনÑ বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার। রায় ঘোষণার ৭৭৪ দিনের মাথায় বিডিআর হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। বিডিআর হত্যা মামলা ছাড়াও উচ্চ আদালতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ পিটিশনের শুনানি, হলি আর্টিজান মামলার জেল আপীল, ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদ-াদেশ অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপীল এবং জেল আপীল, মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী ও কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার ও এটিএম আজাহারুল ইসলামের দ-ের বিরুদ্ধে রিভ্উি শুনানি। এ ছাড়া রমনার বটমূলে বোমা বিস্ফোরণ মামলা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, নারায়ণগঞ্জ সাত খুনের মামলা, চট্টগ্রামে ১০ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলা, হরতালের সময় বিশ্বজিৎ হত্যা মামলা, টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলা, রাজন হত্যা মামলা, রাকিব হত্যা মামলা, কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখার মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বেশ কয়েকটি মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদ- অনুমোদন) ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির আপীল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। সুুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সিনিয়র এ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন নতুন এ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পাবার পর পরই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ্যাটর্নি অফিস ও বারের দুর্নীতিকে কোন রকম প্রশ্রয় দেয়া হবে না। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা আরও বলেন, বিডিআর বিদ্রোহসহ যে সমস্ত চাঞ্চল্যকর মামলা রয়েছে সেগুলো দ্রুত শুনানির বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে। সুপ্রীমকোর্টের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেছেন, উচ্চ আদালতে জমে থাকা মামলাগুলোর শুনানির ্উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, এটা ভাল উদ্যোগ। চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হলে দেশবাসী ও জনগণের মনে আস্থার সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে বিচার প্রার্থী জনগণ এর সুফল পেতে শুরু করেছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ॥ বহুল আলোচিত বর্বরোচিত ভয়াবহ একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আপীল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য ২২ হাজারের বেশি পেপারবুক যাচাই -বাছাই চলছে। সুপ্রীমকোর্টে যাচাই-বাছাই শেষে তা প্রধান বিচারপতির নিকট উপস্থাপন করা হবে। তারপর শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ গঠন করবেন। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন মামলা দু’টিতে রায় ঘোষণা করেন। সে হিসেবে রায় ঘোষণার ৪৮ দিন পর নথি হাইকোর্টে পাঠানো হলো। ১০ অক্টোবর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদ-ের আদেশ প্রদান করে। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের আদেশ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১১ আসামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- হয়। রমনা বটমূলে বোমা হামলা ॥ দীর্ঘ ১৮ বছরেও রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলা ( হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন) নিষ্পত্তি হয়নি। দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলাটির রায় নিম্ন আদালত থেকে ঘোষণা করা হলেও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদ- নিশ্চিতকরণ) এবং আসামিদের আপীলের শুনানি হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হয়নি। মামলাটি শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। ২০১৪ সালের বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণার পরে মামলাটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে আসে। একই সঙ্গে জেল আপীল হয়। পরে পেপারবুক প্রস্তত করে মামলাটি একটি বেঞ্চে ছিল। ওই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ায় উল্লেখিত বেঞ্চে কার্যতালিকায় আসে মামলাটি। মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকার টপের দিকে (শীর্ষে) ছিল। আইনজীবীগণের আশাবাদ, শীঘ্রই এটি কার্যতালিকায় আসতে পারে। শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলিবর্ষণ ও হামলা ॥ ২১ জুলাই শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনায় মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপীল আবেদন করা হয়েছে। আপীলে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিসহ সব আসামির খালাস চাওয়া হয়েছে। ঐ দিন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করা হয় । ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে বোমা হামলা ও গুলির মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ৮ জনসহ মোট ৪৩ জন খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপীল করেছে। আপীলকারীদের মধ্যে ৮ জন মৃত্যুদ-প্রাপ্ত, ২২ জন যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত এবং ১৩ জন ১০ বছর করে দ-প্রাপ্ত। গত ৩ জুলাই এ মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে ৪৭ জনকে সাজা দেয় আদালত। পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোস্তম আলী ৯ জনের ফাঁসির আদেশ দেন। এছাড়া রায়ে ২৫ জনের যাবজ্জীবন, ১৩ জনের ১০ বছর করে সশ্রম কারাদ-ের রায় হয়। পাশাপাশি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের ৩ লাখ টাকা এবং ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্তদের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা ৩২ জন আদালতে হাজির ছিলেন। পরে ১৪ জুলাই যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত আরও ৭ জন আত্মসমর্পণ করেন। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলা ॥ চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানির জন্য হাইকোর্টে এসেছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আশা করছেন, শীঘ্রই শুনানির জন্য মামলাটি কার্যতালিকায় আসবে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান আটক করা হয়। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদ- দেয় আদালত। এই মামলার মৃত্যুদ- পাওয়া অন্যতম আসামি মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়। পরে এই মামলার মৃত্যুদ- পাওয়া আসামিদের আপীল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। এরপর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও শুনানিই শুরু হয়নি। এটিএম আজাহারুল ॥ ১০ জুলাই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আলবদর কমান্ডার এটিএম আজাহারুল ইসলামের মৃত্যুদ- বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। আসামি পক্ষ এর বিরুদ্ধে রিভিউ করেছে। ১৯ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আলবদর কমান্ডার এ টি এম আজাহারুল ইসলামের দ-ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন করা হয়েছে। এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির জনকণ্ঠকে বলেন, ২৩ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ১৪টি যুক্তি দেখানো হয়েছে। গত বছরের ৩১ অক্টোবর আজাহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রাখে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর পর গত ১৫ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজাহারুল ইসলামের মৃত্যুদ- বহালের রায় প্রকাশ করে আপীল বিভাগ। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দ- দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে ৫ বছর কারাদ- দেয়া হয়। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আজাহারকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়ে আপীল করেন তার আইনজীবীরা।
×