ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন নির্বাচন ॥ ট্রাম্প করোনায় সংক্রমিত!

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ১১ অক্টোবর ২০২০

মার্কিন নির্বাচন ॥ ট্রাম্প করোনায় সংক্রমিত!

ঘনিয়ে আসছে ২০২০ এর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। সেই তারিখটি ৩ নবেম্বর। প্রস্তুতিই শুধু নয়, ডাকযোগে ভোট গ্রহণও শুরু হয়েছে। প্রথম দফা দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীÑরিপাবলিকান দলের মনোনীত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি মনোনীত প্রার্থী জো বাইডেন তাঁদের প্রথম দফা মুখোমুখি বিতর্কও শেষ করেছেন। বাকি রয়েছে আরও দুটি অনুরূপ বিতর্ক এবং যতটা সম্ভব স্টেটগুলোতে নির্বাচনী সফর ও প্রচার-সমাবেশ। কিন্তু হঠাৎ ছন্দোপতন ঘটে গেল। ১ অক্টোবরে জানা গেল- ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর পত্নী উভয়েই করোনা সংক্রমিত। আরও জানা গেল, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসেই থাকবেন, হাসপাতালে যাবেন না। পরদিন জানা গেল, ট্রাম্প সাহেব হসপিটালাইজড। বুঝতে অসুবিধে হয় না তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটেছে এবং সে কারণেই ডাক্তারদের চাপে তার হাসপাতাল গমন। এখন পর্যন্ত যত জনমত প্রকাশিত হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই জনপ্রিয়তার দৌড়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাইতে জো বাইডেন বহুল পরিমাণে এগিয়ে আছেন। ‘মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বাইডেন’ শিরোনামে বিগত ৪ অক্টোবরে দৈনিক জনকণ্ঠের সপ্তম পৃষ্ঠায় অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক পাতায় বেশ বড় হেডিংয়ে বলা হয়েছে- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের বয়স ও যোগ্যতা নিয়ে বারবার তাচ্ছিল্য করেছেন। ৭৭ বছর বয়সী বাইডেনকে কখনও বয়সের ভারে ন্যুব্জ নেতা, আবার কখনও ঘুমন্ত বাইডেন বলে কটাক্ষ করেছেন। বাইডেন মাদক নিয়ে শরীরে শক্তি বাড়াচ্ছেন। আবার কখনও বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী অতিরঞ্জিত করছেন। বাইডেনের মাস্ক পরা নিয়েও নির্বাচনী প্রচারে সমালোচনা করতে পিছপা হননি ট্রাম্প। কিন্তু এখন নির্বাচনী মাঠ একা দখলে রেখেছেন বাইডেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প যদি সহসা সুস্থ হতে না পারেন তবে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এর প্রভাব পড়তে পারে। নির্বাচনী প্রচারের শুরুর দিকে বাইডেন যখন করোনার ভয়ে কিছুদিন তার ডেলাওয়ারের বাসভবনে আইসোলেশনে ছিলেন, ট্রাম্প তখন এর বিরুদ্ধে সরব হন। গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের মুখোমুখি বিতর্কে ঐ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি ওনার চেয়ে ২০০ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে চাই।’ ট্রাম্পের পাশাপাশি বাইডেনেরও করোনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু পরীক্ষায় বাইডেনের নেগেটিভ আসে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের চাইতে বাইডেনের বয়স বেশি। তারপরও এখনও বাইডেন কর্মচঞ্চল্য, ওহাইওর ক্লিভল্যান্ডে নির্বাচনী বিতর্কে বাইডেনের পরিবার ফেস মাস্ক পরে আসেন। বিতর্ক চলাকালীন বাইডেনের পরিবার মাস্ক পরেই ছিলেন। বাইডেন এক সময় মাস্ক পরাকে দেশপ্রেমের অংশ বলে মনে করলেও ট্রাম্প বিষয়টিকে সহজভাবে নিয়েছেন। প্রথমদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাকে চীনা ভাইরাস বলে কটাক্ষ করেছেন; আজ সেই ট্রাম্পই আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। আগামী ১৫ অক্টোবর ট্রাম্প ও বাইডেনের দ্বিতীয় মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেয়ার কথা। তবে এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। জন্স হপকিন্স্ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিস্টেমস্ সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সি এস এ এসই) এ তথ্য জানায়। শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৭৩ লাখ তিন হাজার ৯১৪ জন। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৩৩৪ জন। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এখানে ৮ লাখ ২৩ হাজার ২৬৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ৪ লাখ ২৩ হাজারের বেশি লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এহেন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচন এক ভিন্ন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। করোনা মহামারীকে আদৌ গুরুত্ব না দেয়া, দুই লক্ষাধিক মার্কিন নাগরিকের করোনা আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া, নয় লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হওয়াকে বিশ্বের সর্বাধিক উন্নত করোনা বলে পরিচিত এই দেশটির রাষ্ট্রনায়কেরা, বৈজ্ঞানিকেরা, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিয়ে করোনা মহামারী মোকাবেলা করতে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষয়টিকে গুরুত্বহীন ও হালকা বলে চালিয়ে দিয়ে মানুষ বাঁচানোর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে সীমাহীন অবহেলা প্রকাশ করায় এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার মার্কিন জনগণকে বাধ্য করেছেন ট্রাম্প স্বয়ং, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। এই ঘটনা আরও প্রমাণ করেছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প হচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক ব্যর্থ রাষ্ট্রনায়ক। কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনীরা শুধু বর্ণবিদ্বেষের শিকারই নন, ট্রাম্পশাসিত একবিংশ শতাব্দীর আমেরিকায় একের পর এক কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর নগ্ন হামলা এবং হত্যার ঘটনাও ঘটে চলেছে ঐ রাজত্বে। কিন্তু বিন্দুমাত্র দুঃখ প্রকাশ নেই, সমবেদনা জানানোর ন্যূনতম উদ্যোগ নেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি। বর্ণবাদবিরোধী সাদা-কালো উভয় বর্ণের আমেরিকানরাই এই বর্বরতায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করে চলেছেন। যদিও তার প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন সম্পূর্ণ নিষ্পৃহই থেকে যাচ্ছে। ঐ বর্বরতা বারংবার সংঘটিত হয়েই চলেছে। শুধুই কি বর্ণবৈষম্যজনিত অস্থিরতা? না, আরও রয়েছে ইমিগ্র্যান্টদের সমস্যা। প্রতিনিয়ত লাখ লাখ ইমিগ্র্যান্ট মার্কিনীর প্রতি আমেরিকা ছাড়ার হুমকি; বাস্তবে বহু ইমিগ্র্যান্টকে বিতাড়নও ট্রাম্পের ক্ষমতা দখলের পর থেকে দিব্যি চলে আসছে। নতুন করে ইমিগ্রেশন পৃথিবীর দরিদ্র দেশগুলো থেকে কঠিন করে তুলতেও ট্রাম্প প্রশাসন দ্বিধা করেনি। ফলে সাধারণভাবে ইমিগ্র্যান্টরাও ক্ষুব্ধ। তবে সুবিধাভোগী একটি অংশ ট্রাম্পকে সমর্থনে অতি উৎসাহী। এ ছাড়াও ট্রাম্পের নৈতিক, চারিত্র্যিক বিষয়াদিও খোদ আমেরিকাতেই প্রচ-ভাবে সমালোচিত। তবে আমেরিকার বর্ণবিদ্বেষ শুধু ট্রাম্প আমলের বিষয় নয়, দীর্ঘদিন যাবত ঐ দেশে তা লালন করা হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও তার অবসান সূচিত করা তো দূরের কথা, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রের সামান্য নজিরও সৃষ্টি করেনি ট্রাম্প প্রশাসন। বরং বর্ণবিদ্বেষ ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলতেই ভূমিকা রেখেছেন ট্রাম্প। অপরপক্ষে এই ত্রুটি ও বৈষম্যগুলো যে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন বিজয়ী হয়ে এলেই দূরীভূত হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়াও দুরূহ। তবে মার্কিনীরা হয়ত মন্দের ভাল হিসেবে বাইডেনকেই বেছে নেবেন। লেখক : সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত [email protected]
×