ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৯ দফা দাবি

শাহবাগের সমাবেশে লংমার্চের আল্টিমেটাম

প্রকাশিত: ২২:১৭, ১০ অক্টোবর ২০২০

শাহবাগের সমাবেশে লংমার্চের আল্টিমেটাম

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ দেশব্যাপী অব্যাহত ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্দোলনের পঞ্চম দিনে এসে প্রতিবাদ আরও বেগবান হয়েছে শাহবাগ এলাকায়। শুক্রবার বিকেল থেকে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত মহাসমাবেশ আন্দোলিত ছিল ধর্ষণের বিরুদ্ধে স্লোগান, ব্যানার, ঝাঁঝালো বক্তৃতা কিংবা ধর্ষণবিরোধী সাংস্কৃতিক পরিবেশনায়। সমাবেশ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ নয় দফা দাবি জানানো হয়। দাবি না মানলে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত লংমার্চসহ কয়েক দফা কর্মসূচীও ঘোষণা করা হয়। ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’- এর ব্যানারে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়ের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মনোয়ার হোসেন মাসুদ, জাহিদ সুজন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আল কাদেরী জয়সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও সমাবেশে সংহতি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইংরেজী বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক ড. গীতিআরা নাসরিন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান প্রমুখ। সমাবেশে তানজিম উদ্দিন খান বলেন, পুরো রাষ্ট্রই প্রতি মুহূর্তে ধর্ষিত হচ্ছে। কেননা এ রাষ্ট্র অন্যায্যতার মধ্যে রয়েছে। বিভিন্ন উপায় ও কায়দায় অন্যায্য ব্যবস্থাপনার কারণে রাষ্ট্র ধর্ষিত হচ্ছে। পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থা সংঘটিত ভন্ডামির শিকার হচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা এরই উদাহরণ। এই অন্যায্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা দূর করতে হলে ধর্ষণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতার সঙ্গে ধর্ষকের সম্পর্ক না থাকলে তারা এত দুর্বিনীত হয়ে উঠত না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দেখলে বোঝা যায়, ধর্ষক ছাত্রলীগের মদদ দিচ্ছে বড় বড় নেতারা। যারা ধর্ষকদের পাহারাদার তাদের বিরুদ্ধেও একত্রিত হতে হবে। বক্তারা বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা-মামলা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, তাদের টিয়ারশেলের ঝাঁঝ যত হবে, আমাদের আন্দোলন ততই তীব্রতর হবে। সরকার বিভিন্ন জায়গায় বলছে যে, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- করা হবে। কিন্তু এই রায় দেয়া হলেও উচ্চ আদালতে তা পরিবর্তন হয়ে যাবে। তাই ধর্ষণ বন্ধে শুধু সর্বোচ্চ শাস্তি দিলেই হবে না। ধর্ষণ স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য বিকল্প ব্যবস্থাও ভাবতে হবে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে নয় দফা দাবি জানান। তাদের অন্যান্য দাবি হলো ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত; পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সব প্রকার যৌন ও সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ করা; হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারী বেসরকারী সব প্রতিষ্ঠানে নারী নির্যাতনবিরোধী সেল কার্যকর করা, সিডো সনদে বাংলাদেশকে স্বাক্ষর ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করা ও নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব আইন প্রত্যাহার করা; ধর্মীয়সহ সব ধরনের সভা-সমাবেশে নারীবিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, সাহিত্য-নাটক-সিনেমা-বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করা, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে বিটিসিএলের কার্যকরী ভূমিকা নেয়া ও সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চায় সরকারীভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা; তদন্তের সময় ভিকটিমকে মানসিক নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধ করে ভিকটিমের আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করা ও ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সকল মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করা; ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫(৪) ধারা বিলোপ করা এবং মামলার ডিএনএ আইনকে সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে কার্যকর করা; পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যেকোন প্রবন্ধ নিবন্ধ পরিচ্ছেদ ছবি নির্দেশনা ও শব্দচয়ন পরিহার করা এবং গ্রামীণ শালিসের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা। এ সময় তাদের পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করেন অনিক রায়। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- প্রতিদিন বিকাল চারটা থেকে রাত পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচী পালন করা। অবস্থান পালনকালে ১১ অক্টোবর শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ১২ অক্টোবর ধর্ষণবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ১৩ অক্টোবর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, ১৪ অক্টোবর নারী সমাবেশ এবং ১৫ অক্টোবর নারীদের সাইকেল র‌্যালি করা হবে। তাদের দাবিগুলো মানা না হলে ১৬ ও ১৭ অক্টোবর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত লং মার্চ করা হবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়। মহাসমাবেশ আসা বিক্ষোভকারীরা- ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘ধর্ষকের আস্তানায়, আগুন জ্বালো আগুন জ্বালো’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকের ঠাঁই নাই’, ‘লাঠির বাড়ি মারবি না, সামলাতে পারবি না’, ‘বুকের ভেতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। প্রতিবাদী গান, আবৃত্তি এবং নাটকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসমাবেশ শুরু হয়। বক্তৃতা শেষে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া একই সময়ে জাদুঘরের সামনে ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতা বিরোধী আন্দোলন’-এর ব্যানারে ধর্ষণবিরোধী কনসার্টের আয়োজন করা হয়। ধর্ষণ-নিপীড়নে জড়িত সকলকে গ্রেফতার ও বিচারের দাবি ছাত্রলীগের ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের সহযোগিতার অভিযোগে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর ও ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও কোন আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্যে অনশনরত ওই ছাত্রীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ ও সারাদেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচী ও সমাবেশে এ হতাশার কথা ব্যক্ত করে সংগঠনটি। ওই ছাত্রী বৃহস্পতিবার রাতে বিচারের দাবিতে রাজুতে অনশনে বসেন। সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান এবং দক্ষিণের সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হোসেন প্রমুখ। এসময় ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, কয়েক দিন ধরে আমরা ধর্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। কিন্তু আমরা কি দেখতে পাই, গত ১৮ দিন ধরে কিছু কুলাঙ্গাররা ধর্ষণের কাজ করেছে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ১৮ দিন ধরে ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কিন্তু কই সেই ধর্ষণের মাস্টার মাইন্ড? সেই ধর্ষককে তো এখনও গ্রেফতার করা হয়নি? তাহলে আমরা কি ধরে নেবো? তারা (মামুন-নুরুলরা) কি অনেক পাওয়ারফুল? কখনই না। আমাদের প্রশাসন দিনরাত পরিশ্রম করে, কিন্তু সব ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু আমাদের বোনকে (ঢাবি ছাত্রী) ধর্ষকদের এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। আমাদের প্রশাসনের প্রতি আস্থা আছে। তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, ওই মাস্টার মাইন্ড, তথাকথিত ছাত্র অধিকার পরিষদ, যেটা শিবিরের বি টিম হিসেবে কাজ করছে। তথাকথিত ছাত্র অধিকার পরিষদ আজকে ধর্ষণ অধিকার পরিষদ হিসেবে কাজ করছে। তিনি বলেন, আজকে তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, তারা কিন্তু বড় বড় কথা বলে। আজকে ছাত্রলীগকে কারা উস্কে দেয়? আজকে ছাত্রলীগ প্রথম থেকেই ইতিহাস সৃষ্টির পরতে পরতে প্রত্যেকটি অর্জনে ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। সেই কথা কিন্তু আপনারা ভুলে যাবেন না। আপনারা ছাত্রলীগকে কলুষিত করতে চান। আজকে যে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বোন ধর্ষণের শিকার হলো, তার পাশে তো আপনারা নেই। এই লজ্জা তো আমাদের সকলের। আমার বোন ১৮ দিন কোন বিচার না পেয়ে ধর্ষকদের গ্রেফতারের দাবিতে অনশনে বসেছেন। যারা ধর্ষক তারা কোন দলের না। তিনি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হককে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ছাত্রলীগ কি জিনিস ইতিহাস জানে। যদি আপনাদের না জানা থাকে, আরেকবার জানার চেষ্টা করবেন। ছাত্রলীগ কখনও মৃত্যুকে ভয় পায় না। মৃত্যুকে উপেক্ষা করে নিজের বুক সামনে ঠেলে দিয়ে, রক্ত ঢেলে দেয়। সমাবেশে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের বোন একটি মামলা করেছে। যেখানে একটি সংগঠনের শীর্ষ নেতাকে আমরা জড়িত থাকতে দেখেছি। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছি, ধর্ষক যে-ই হোক, আপনারা তাকে গ্রেফতার করুন। প্রশাসন সবাইকেই গ্রেফতার করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ধর্ষণ মামলার কেউ গ্রেফতার হয়নি। তারা কারা। তাদের প্রতি আপনাদের কিসের ভয়। অনতিবিলম্বে তাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে সমান বিচার ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। সারাদেশের ধর্ষণের মাস্টার মাইন্ড কিন্তু তারাই। আপনারা খেয়াল করুন, কেন তারা ধর্ষকদের দলীয় লেবাস লাগানোর জন্য চেষ্টা করছে? নূর-মামুন কি ছাত্রলীগ করে? সাভারের ঘটনার হত্যাকারীরা কি ছাত্রলীগ করে? ফেনীতে এক নারীকে বিবস্ত্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তারা কি ছাত্রলীগ করে? তাহলে কেন ছাত্রলীগের প্রতি আপনাদের টার্গেট? ছাত্রলীগকে আগে জানবেন, তারপর ছাত্রলীগ নিয়ে কথা বলবেন। শাহবাগে আন্দোলনকারীরা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, এরা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে চায়। কেন সরকার নিয়ে আপনাদের কী সমস্যা? সবাইকেই তো গ্রেফতার করা হয়েছে শুধু তাদের এজেন্ডা বাহিনী ছাড়া। তাদের গ্রেফতার করুন। তাহলে সব ধর্ষক ভয় পাবে। যে বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে সেখানে নৈতিক স্খলন ছাড়া আর কোন কারণ আছে?
×