ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার শান্তিতে নোবেল পেল বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী

প্রকাশিত: ২২:১৩, ১০ অক্টোবর ২০২০

এবার শান্তিতে নোবেল পেল বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার লড়াইয়ে ভূমিকা রাখার জন্য জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম বা ডব্লিউএফপি) পেল এবারের শান্তিতে নোবেল। নরওয়ের নোবেল কমিটি শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে ১০১তম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য জাতিসংঘের সংস্থাটির নাম ঘোষণা করে। খবর গার্ডিয়ান ও নিউইয়র্ক টাইমসের। নোবেল কমিটি বলেছে, ‘যুদ্ধ ও সংঘাতের অস্ত্র হিসেবে’ ক্ষুধার ব্যবহার রোধ করার ক্ষেত্রে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই, শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধ-সংঘাত কবলিত এলাকার পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং যুদ্ধ ও সংঘাতের অস্ত্র হিসেবে ক্ষুধাকে ব্যবহার রোধ করতে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করার জন্য ক্ষুধার বিরুদ্ধে অব্যাহত লড়াই প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ সংস্থাটিকে এবার শান্তিতে নোবেল দেয়া হলো। ২০২০ সালের নোবেল বিজয়ী ডব্লিউএফপি খাদ্য সুরক্ষাকে শান্তির উপকরণ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিক সহযোগিতায় মূল ভূমিকা পালন করেছে এবং যুদ্ধ ও সংঘাতের অস্ত্র হিসাবে ক্ষুধার ব্যবহারকে মোকাবেলায় জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে একত্রিত করার জন্য জোরালো অবদান রেখেছে। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ারম্যন বেরিট রেইস এ্যান্ডারসন শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আন্তর্জাতিক সংহতি ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার প্রয়োজন আগের তুলনায় আরও স্পষ্ট ও দৃশ্যমান হওয়া প্রয়োজন। নোবেল জয়ের খবরের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডব্লিউএফপি টুইট করে বলেছে, বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন ১০ কোটির বেশি শিশু, নারী আর পুরুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিতে জীবন উৎসর্গ করেছেন ডব্লিউএফপির কর্মীরা। এই পুরস্কারে তাদের কাজ স্বীকৃতি পেল। আর ডব্লিউএফপির প্রধান ডেভিড বিয়াসলে বলেছেন, জীবনে এই প্রথম বোধ হয় আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ২১১ জন ব্যক্তি এবং ১০৭ প্রতিষ্ঠানের নাম জমা পড়েছিল নোবেল কমিটির কাছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং পরিবেশ আন্দোলনে নজর কাড়া সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গের নামও সেই তালিকায় ছিল। সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছা অনুসারে গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে অবদানের জন্য প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। ইরিত্রিয়ার সঙ্গে দুই দশকের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে গত বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আলী। এ বছর নোবেল পুরস্কারের সম্মানী বাড়িয়ে এক কোটি সুইডিশ ক্রোনা করা হয়েছে। এমনিতে প্রতি বছর স্টকহোমে অনুষ্ঠান করে নোবেল পুরস্কার তুলে দেয়া হয় বিজয়ীদের হাতে। সেখানে তারা বক্তৃতাও দেন। এবার করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে রাজকীয় সেই আয়োজন থাকছে না। তার বদলে নোবেলজয়ীরা নিজের দেশে বসে ওয়েবিনারে অংশ নেবেন নোবেল পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে। আগামী বছরের পুরস্কার বিতরণীতে তাদের স্টকহোমে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সোমবার অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এর মধ্য দিয়ে চলতি বছরের নোবেল মৌসুমের সমাপ্তি ঘটবে। ডব্লিউএফপি বিশ্বের ৮৮ দেশের আনুমানিক ৯ কোটি ৭০ লাখ মানুষকে প্রতিবছর সহায়তা করে। ইতোপূর্বে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জিমি কার্টার, পাকিস্তানের নারী অধিকার কর্মী মালালা ইউসুফজাই, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান, নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এ পুরস্কার পেয়েছিলেন। কার্যকর কোন সংস্থা হিসেবে ডব্লিউএফপিই শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রথম কোন সংস্থা নয়। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নও এ পুরস্কার পেয়েছিল। সংগঠন ও সংস্থার মধ্যে সর্বোচ্চ তিনবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস। ১৯১৭, ১৯৪৪ ও ১৯৬৩ সালে রেডক্রসকে শান্তিতে নোবেল দেয়া হয়। এছাড়া ১৯৫৪ ও ১৯৮১ সালে শান্তিতে নোবেল পেয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
×