ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র লিটনের দুই বছর

রাজশাহী এখন সাজানো নগর সবুজে ঘেরা স্বপ্নপুরি

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ১০ অক্টোবর ২০২০

রাজশাহী এখন সাজানো নগর সবুজে ঘেরা স্বপ্নপুরি

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের দ্বিতীয় টার্মের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে গত ৫ অক্টোবর। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় নগর পেয়েছে আলাদা চেহারা। উড়াল সেতু, একাধিক প্রশস্ত সড়ক, দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ফুলে ফুলে সজ্জিত ও আলো ঝলমলে শহর এখন রাজশাহী। প্রতিটি ওয়ার্ডে সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ পাল্টে গেছে নগরীর চেহারা। সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। যার কাজ শুরু হতে যাচ্ছে শীঘ্রই। কর্মসংস্থানের জন্য তিনটি শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজেও অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৮ সালে ৩০ জুলাই রাসিক নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ‘চলো বদলে দেই’- এই সেøাগানকে সামনে রেখে ওই নির্বাচনে জনগণের বিপুল ভোটে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর মেয়রকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শপথের একমাস পর ৫ অক্টোবর শতকোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের ২৮ মে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা লাভ করেন মেয়র লিটন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি রাজশাহীকে একটি পরিচ্ছন্ন, উন্নত ও বাসযোগ্য স্বপ্নের নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেন। শুরুতেই সিটি কর্পোরেশনে শৃঙ্খলা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন মাসের শুরুতে প্রদান করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এরপর গৃহীত পদক্ষেপে ধীরে ধীরে রাজশাহী পরিণত হয়ে উঠে সবুজ আর ফুলের নগরীতে। ফলশ্রুতিতে দেশের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে ‘এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি সিটি অব দ্য ইয়ার-২০২০ সম্মাননা’ অর্জন করে এই মহানগরী। রাসিক সূত্র জানায়, দুই বছরেই নগরীর যোগাযোগের এসেছে আমূল পরিবর্তন। ১৮৯ কোটি ৩৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী-নওগাঁ প্রধান সড়ক হতে মোহনপুর-রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় হতে বিহাস পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭৯৩ কিলোমিটার ৪ লেন সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সড়কের দুই পাশে ফুটপাথ, ১টি ব্রিজ, ৮টি কালভার্ট, মিডিয়ান ও ট্রাফিক কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ২৯ কোটি ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩২ টাকা ব্যয়ে ২০২ দশমিক ৫০ মিটারের ফ্লাইওভার এবং ১২০ মিটার দৈর্ঘ্য এর র‌্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। যা উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। এছাড়া ১৬৪ কোটি ১৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়ে আলুপট্টি মোড় থেকে তালাইমারি সড়কটি প্রশস্ত করে ৪ লেন সড়কে উন্নীতকরণ কাজ চলমান রয়েছে। নগরবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে প্রশস্ত করা হয়েছে বিভিন্ন সড়ক। মহানগরের ৩০টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও নর্দমাসমূহের উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মনিচত্বর থেকে সদর হাসপাতাল পর্যন্ত সড়কের পাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর, ড্রেন ও ফুটপাথ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৮১ লাখ ১০ হাজার ৮৪৮ টাকা। বিলসিমলা রেলক্রসিং হতে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত সড়ক ২৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০ ফুট প্রশস্ত সড়কটি ৮০ ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে। এই চারটি প্রকল্প ছাড়াও ১২৬ কোটি ৩৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ে উপশহর থেকে নগর ভবন, মালোপাড়া মোড় হয়ে সাগরপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ চলমান। ১৭২ কোটি ৯৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির আওতায় মহানগরীর ওয়ার্ডসমূহে ক্ষতিগ্রস্ত ও নতুন কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান। এখানেই শেষ নয়, থেমে থাকা বহুতল বাণিজ্যিক ভবনগুলোর কাজ দ্রুতগতিতে শেষ করতেও মেয়র গ্রহণ করেছেন যথাযথ উদ্যোগ। বদলে যাচ্ছে নগরী প্রাণকেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী সোনাদিঘি। এখানে ১৬তলা বিশিষ্ট সিটি সেন্টার ও আধুনিক মসজিদের পাশাপাশি দীঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হচ্ছে ওয়াকওয়ে, বসার স্থানসহ দৃষ্টিনন্দন বিনোদনকেন্দ্র। ২ হাজার ৯৩১ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের সকল ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ এবং নতুন রাস্তা নির্মাণ, ওয়ার্ডসমূহের পানি নিষ্কাশনে উপযুক্ত নর্দমা নির্মাণ, সকল গোরস্তানসমূহের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ৩টি সড়ক ৪ লেন-এ উন্নীতকরণ, ৪টি কাঁচা বাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ, নিরাপদ চলাচলে ফুটপাথ নির্মাণ, প্রাকৃতিক জলাশয় সমূহের উন্নয়ন, ওয়াকওয়ে নির্মাণ ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণ কাজ প্রকল্পের আওতায় করা হবে। টেকসই ও উপযুক্তমানের সড়ক নির্মাণার্থে গুরুত্বপূর্ণ ইক্যুইপমেন্ট ক্রয়, শিশু পার্কে গেমস্ স্থাপন, উপযুক্তমানের একটি সিটি কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ, ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২টি ওয়ার্ডে তিনতলা বিশিষ্ট ওয়ার্ড কার্যালয় কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, যানজট নিরসনে ভদ্রা, শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান চত্ব¡র, বর্ণালী, নতুন বিলসিমলা, বহরমপুর, রাজশাহী কোর্ট এবং নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিংয়ে বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ এ প্রকল্পের আওতায় করা হবে। নতুন ফোরলেন সড়কের পাশে প্রশস্ত ড্রেন ও প্রতি ওয়ার্ডে ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। সহজে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার ও কাদামাটি উত্তোলন করতে ১০টি বড় ড্রেনের পাশে ১০টি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। রাসিক সূত্রমতে বেকার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান ও রাজশাহীর অর্থনীতিকে গতিশীল করতে শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে তিনটি শিল্পাঞ্চল অনুমোদন দিয়েছেন। ইতোমধ্যে বিসিক শিল্পনগরী-২ প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। যেখানে ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। মেয়র লিটনের গেল ২ বছরেই সড়ক, অবকাঠামো ও পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। অত্যাধুনিক ৩টি এসটিএস এর কার্যক্রম চলছে। নাগরিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত রাখতে গত ১ অক্টোবর মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সিটি মেয়রের উদ্যোগে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ১০৯টি পরিবার পেয়েছে পাকা বাড়ি। রাসিকের কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট শাখার কমিউনিটি হাউজিং ফান্ড থেকে গৃহনির্মাণ ঋণের মাধ্যমে এই বাড়িগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর চলতি অক্টোবর পর্যন্ত প্রত্যেকে পরিবার ২ লাখ টাকা করে মোট ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা গৃহ ঋণ পেয়েছেন। দায়িত্বগ্রহণের পর পদ্মাপাড়ের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনতে লালন শাহ মুক্তমঞ্চ, পদ্মা গার্ডেনসহ পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। জনগণের দৌড়গোড়ার নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রধান প্রধান সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আলোকায়ন করা হয়েছে। মহানগরীর ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ১৬টি পোল বসানো হয়েছে বিদ্যুত সাশ্রয়ী সুুউচ্চ বিদ্যুত লাইট পোল, যা নগরীকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। নগরে নতুন দুইটি সরকারী স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলেছে। রাজশাহীতে একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন মেয়র। এছাড়াও মেয়রের চেষ্টায় মহানগরীর ছয়টি সরকারী স্কুল পেতে যাচ্ছে নতুন ভবন। ইপিআই কার্যক্রমে টানা নয়বার জাতীয়ভাবে দেশসেরা হয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। মেয়র লিটন জনকণ্ঠকে বলেন, তার স্বপ্ন রাজশাহীকে দেশের সবচেয়ে আধুনিক শহরে রূপ দেয়া। সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন।
×