ঘৃণা মুছে যাক
নাসির আহমেদ
ভালোবাসা তুমি মানুষের কাছে চলো
নিসর্গ থাকে অন্তর জুড়ে, রাখো
কবি তুমি সেই মানুষের কথা বলো
ক্ষুধায় কাতর, তাদের আব্রু ঢাকো।
নেতা হতে চাও? নেই কোনো বাধা, তবে
প্রগতিবিমুখ মানুষের মতো নয়
জাতির পিতাকে মননে রাখতে হবে
সর্বমানবে শ্রদ্ধা থাকতে হয়।
ইতিহাস যত অপ্রিয় সত্য হোক
শাশ্বত জেনো শোকের আগস্ট মাস
শাশ্বত সাতই মার্চের মহাশ্লোক,
চিনে রেখো কারা করেছে সর্বনাশ!
পেছনে তাকাও সামনে এগোতে হলে
তোমার তো আছে মার্চের গৌরব
জয়বাংলা তো আাছে অন্তঃস্থলে
ছড়াবে সমাজ-প্রগতির সৌরভ।
ভালোবাসা হোক মুক্তচিন্তা আর
বিশ্বমানব-মৈত্রীর বন্ধন
থেমে যাক যত হানাহানি, হাহাকার
থামুক জগতে লাঞ্ছনা-ক্রন্দন।
গোলাপ ফুটুক প্রকৃতির প্রাণ থেকে
ঘৃণা মুছে যাক সম্প্রীতি ভাই ডেকে।
** অবিশ্বাসী দৃষ্টির দূরত্বে
ফকির ইলিয়াস
বহুকাল থেকেই আমি আমার দৃষ্টিকে আর বিশ্বাস করি না।
বহুকাল থেকেই জন্মান্ধ নদীর মতো বুকের ঢেউগুলোকে
বলি তোমরা অন্য মোহনায় প্রবাহিত হও। যেখানে অরণ্যের
আদি, তার উৎস খুঁজে পায় না- যেখানে; বেওয়ারিশ
কুকুরের মতোই কোনো বেজন্মা হামলে পড়ে সম্ভ্রমহানিতে,
যেখানে বার বার পরাজিত হয় একাত্তরের দানবীয় সন্ধ্যা-
সেখানে কী হবে আমার আত্মবিশ্বাস দিয়ে! কী হবে এই
মেকি চোখজোড়া দিয়ে!যে চোখের আলোয় আমি তাড়াতে
পারি না ধর্ষণকামীদের উল্লাস-নৃত্য! হাঁক দিয়ে বলতে
পারি না, দূরত্ব কমিয়ে হে মানুষ- আবার সমবেত হও!
** না প্রশ্ন না উত্তর
শিউল মনজুর
আমার কোন প্রশ্ন নেই আমার কোন উত্তরও নেই
যারা প্রশ্ন করে তারা জানে
কখন কিভাবে কতটুকুন প্রশ্ন করে জেনে নিতে হয়
যারা উত্তর দেয় তারাও জানে
প্রশ্নের উত্তর কি হতে পারে অথবা কিভাবে দিতে হয়
উভয়ই খাঁটি মধুর মতো মিষ্টি, মেঘনার বুকে সাম্পানের মাঝি
আমার কোন প্রশ্ন নেই আমার কোন উত্তরও নেই
কাগজের পাতায় ছবি দেখি-
ছবি দেখে দেখে চশমার ভেতর দিয়ে ঝাপসা চোখে
মায়ের বিধ্বস্ত শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে শব্দে শব্দে
বেদনার ছায়ামাখা গ্রামের ওপর কতিপয় ঝড়ের চিহ্ন পাঠ করি...
আমার কোন প্রশ্ন নেই আমার কোন উত্তরও নেই
দৃশ্যের বাহিরে অদৃশ্য তর্জনীর ছোঁয়ায় একদিন
ইঁদুরদলের নেতারা ঠিকাদারী বিল পেয়ে যেত ধানক্ষেতের
মনে আছে খবরওয়ালারা ছেপে দিত কাগজে
আজও ইঁদুরগুলো বর্ডারক্রস করে একটার পর একটা
ফুটো করে যাচ্ছে ফসলভরা সওদাগরী বর্জার...
আমার কোন প্রশ্ন নেই আমার কোন উত্তরও নেই
গুরুছাড়াই, ডিজিটাল প্রেসে মুদ্রিত হয় প্রশ্ন বান্ডিল...
গুরুছাড়াই, টাচস্ক্রিনে মুদ্রিত হয় চাহিদাসূত্রের নম্বরপত্র...
বিশ^যুদ্ধ ছাড়াই ধুলোয়মিশে যাচ্ছে মায়ের মায়াবি আঁচল
তাঁর ভাঁজে ভাঁজে চলছে চড়ুইপাখিদের শোকগাঁথা উৎসব...
** শিরোনামহীন-৫
আনোয়ার কামাল
রাত যত ঘন হয় মনের কপাট খুলে যায়
সুবাসিত গোলাপের ঘ্রাণে
মুছে যাওয়া পদচিহ্ন কিছুটা ছাপ বেঘোরে কাঁদে
গোপনে কে যেন গুটিসুটি হয়ে আসন পাতে-
নিশাচর বাদুর তড়পায়।
রাতের আঁধারে জাগতিক ক্রিয়া ভেসে যায়
লোভাতুর হায়েনার লকলকে জিহ্বায়-
কে বলো ভাবনাকে পরাজিত করে
হারাতে চায় সুখের পোষা পায়রা।
** অন্ধ
ইকবাল পারভেজ
পাঠশালার জীবনে
মাস্টার সাব অক্ষর শেখাতেন বোর্ডে
এটা কী ওটা কী
হঠাৎ যদি কোন এক অক্ষরে লাঠি যেতো থেমে
তখন লাঠি চলতো আমাদের পিঠে।
এতোদিন পর অন্য এক মাস্টার
লাঠি দিয়ে বোর্ড দেখিয়ে বললেন
বাম চোখে বলুন, এটা কী?
ডান চোখে বলুন, এটা কী?
আমি অক্ষর চিনি না
তিনি আর লাঠিপেটা করলেন না
বরং লাঠিটিই ধরিয়ে দিলেন হাতে
আমি লাঠি দিয়ে মাটিতে অক্ষর খুঁজি
ডানে খুঁজি, বামে খুঁজি
অক্ষরবিহীন এক অন্ধ আমি।
শীর্ষ সংবাদ: