ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ত্র ছেড়ে আলোচনায় আসুন

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ৮ অক্টোবর ২০২০

অস্ত্র ছেড়ে আলোচনায় আসুন

আফগান তালেবানদের অস্ত্রসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবান নেতাদের সঙ্গে আফগান সরকারের শান্তি আলোচনা ও সমঝোতার উদ্দেশে চলমান বৈঠকে মঙ্গলবার আশরাফ গনি এ আহ্বান জানান। দুই দিনের কাতার সফরে আশরাফ গনি আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির ওপর একটি সুদীর্ঘ বক্তৃতা দেন। খবর এপি, আলজাজিরা ও এএফপির। আশরাফ গনি বলেন, অস্ত্র কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে না। শুধুমাত্র অস্ত্র পরিত্যাগের মাধ্যমেই কোন জটিল সমস্যার সমাধান আসতে পারে। তালেবান নেতাদের উদ্দেশে আফগান প্রেসিডেন্ট বলেন, দেখুন কেউ আমাদের সমস্যা সমাধান করে দেবে না। নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্য আগে আমাদের মনন্থির করতে হবে। সোমবারের ওই লেকচারে তালেবান নেতারা ছাড়াও অনেক কূটনীতিক ও শিক্ষাবিদ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত তিন সপ্তাহ আগে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবান নেতাদের সঙ্গে আফগান সরকারের এ আলোচনা শুরু হয়। আফগানিস্তানে গত ১৯ বছর ধরে চলা যুদ্ধ নিরসনে কয়েকটি উপসাগরীয় দেশের সহযোগিতায় এ আলোচনা শুরু হয়। সোমবার কাতারে পৌঁছে আফগান প্রেসিডেন্ট প্রথমে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনার অগ্রগতি বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আফগান প্রেসিডেন্ট গনি বলেন, দেখুন ২০ বছরের ক্ষত ২০ দিনে সারানো সম্ভব নয়। তালেবানের সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি বিষয়ে আশরাফ গানি বলেন, তালেবানের সঙ্গে তার সরকারের চলমান আলোচনায় শান্তি চুক্তি অর্জিত হলে তা আফগানিস্তানের পার্লামেন্ট ও লয়া জির্গায় আলাদাভাবে অনুমোদিত হতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, আফগানিস্তানের ক্ষমতা কারও পৈত্রিক সম্পত্তি নয় বরং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সবাইকে তা মাথা পেতে নিতে হবে। কাতারের আমিরের সঙ্গে বৈঠকের পর দোহার ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট স্টাডিজ এ্যান্ড হিউম্যানিটিভ স্টাডিজে বক্তব্য দেন আশরাফ গানি। আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, আফগান নাগরিকদের হতাহতের সংখ্যা শূনে তার দিন শুরু হয়, কাজেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার মূল্য তিনি অন্য সবার চেয়ে ভাল বোঝেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছাড়া আফগানিস্তান শাসন করা সম্ভব নয় বলেও আশরাফ গানি দাবি করেন। আফগান সরকারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দোহায় দীর্ঘমেয়াদী আলোচনা শুরু করেছে তালেবান যাকে আফগান-আফগান আলোচনা বলে অভিহিত করা হচ্ছে। তবে এই আলোচনায় এখন পর্যন্ত কোন অগ্রগতি অর্জিত হয়নি বরং আফগানিস্তানে তালেবানের হামলা ও হতাহতের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় দেশটির সাধারণ জনগণের মধ্যে এ আলোচনা নিয়ে হতাশা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রায় দুই দশক ধরে চলা যুদ্ধ অবসানে গত মাসে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে এ ঐতিহাসিক শান্তি আলোচনা শুরু হয়। বৈঠকের প্রথম দিন আফগান সরকারের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ, তালেবানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদরসহ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ বছরের চেষ্টার পর প্রথমবারের মতো তালেবান ও আফগান সরকার সরাসরি বৈঠকে অংশ নেয়। তবে এ আলোচনা থেকে অতি দ্রুত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নাও আসতে পারে বলে মনে করা হয়। আফগান সরকারের প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ বৈঠকে বলেন, আমরা সুদূরপ্রসারী ও স্থায়ী শান্তি চাই। তিনি বলেন, আমরা যদি খোলামনে আলোচনা করি এবং সেভাবে কাজ করি তবে অবশ্যই আফগানিস্তানের মাটি থেকে চিরতরে ক্ষুধা ও দরিদ্রতা দূর করতে পারি। তালেবান নেতা মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদর বলেন, আমরা আফগানিস্তানকে একটি প্রকৃত ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই। এ বিষয়ে তালেবান কোন ধরনের আপোস করবে না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, আফগানিস্তানের ভাগ্য আফগানরাই নির্ধারণ করুক। তিনি বলেন, তবে সব পক্ষের উচিত একটি শান্তিময় পরিবেশ খুঁজে বের করা। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি বৈঠক শুরুর আগে বলেন, বৈঠকে সফলতা নির্ভর করছে উভয় পক্ষের ছাড়ের ওপর। তবে উভয় পক্ষকে ভাল মানসিকতা পোষণ করতে হবে। গত ফেব্রুয়ারিতে সম্মত হওয়া বিতর্কিত বন্দী বিনিময় চুক্তির বিষয়ে তিক্ত অসম্মতির কারণে পরিকল্পিত সময়ের চেয়ে ছয় মাস পর যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এ আলোচনা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ ভয়াবহ বিমান হামলার ১৯তম বার্ষিকীর একদিন পর আফগান শান্তি আলোচনা শুরু হয়।
×