ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ

রোহিঙ্গাদের সংঘর্ষে পাঁচ দিনে নিহত আট

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ৮ অক্টোবর ২০২০

রোহিঙ্গাদের সংঘর্ষে পাঁচ দিনে নিহত আট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আশ্রয়ক্যাম্পে মাদক কারবার ও চাঁদাবাজি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই আছে। কুতুপালং ক্যাম্পে নতুন ও পুরাতন রোহিঙ্গাদের মধ্যে কয়েকদিন ধরে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা চলছে। গত পাঁচদিনে দুজন স্থানীয় বাসিন্দা, ছয়জন রোহিঙ্গাসহ মোট আটজন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে জবাই ও সাতজনের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার গভীর রাতে স্থানীয় দুই গাড়িচালক ও দুই রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। জানা যায়, মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া হলেও আশ্রিত দেশের আইন মানছে না রোহিঙ্গারা। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে মৌলবি আনাস ও মুন্না গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মতবিরোধ চলে আসছিল। মৌলবি আনাস আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গী বলে তথ্য মিলেছে। তার সঙ্গে সখ্য রয়েছে ক্যাম্পের বাইরে ঘাপটি মেরে থাকা পুরনো কিছু রোহিঙ্গা জঙ্গীর। মাদকের চালান, অস্ত্র বিক্রি ও ক্যাম্প অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা দোকান থেকে চাঁদাবাজির ঘটনায় আনাস ও মুন্না গ্রুপ একে অপরকে ঘায়েল করার তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) তা প্রকাশ্যে গোলাগুলিতে রূপ নেয়। দফায় দফায় হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় এক নারীসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। কুতুপালং ক্যাম্পে গোলাগুলিতে যে চারজন নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে দুজন স্থানীয়, তারা টেকনাফের হ্নীলার বাসিন্দা। দুজনই পেশায় গাড়িচালক। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত দুই বাংলাদেশী হলো টেকনাফ হ্নীলা রঙ্গীখালীর দিলদার আহমেদের পুত্র নুরুল বশর এবং পশ্চিম সিকদার পাড়ার নূর হোসেনের পুত্র নুরুল হুদা। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে ফের গোলাগুলি শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে। বুধবার সকালেও গুলিবর্ষণ করেছে সন্ত্রাসীরা। গত পাঁচদিনে স্থানীয় দুই যুবক, এক নারীসহ ছয় রোহিঙ্গার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রাণ ভয়ে অন্তত ছয় শতাধিক পরিবার ওই ব্লক থেকে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের কঠোর হস্তে দমনে করণীয় ॥ রোহিঙ্গাদের কঠোর হস্তে দমন করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। রোহিঙ্গাদের মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, ক্যাম্প অভ্যন্তরে দোকানপাট উচ্ছেদ, মাদক ব্যবসা বন্ধ করা, অবাধ চলাচল ও বিচরণ রোধ, মাঝি প্রথা বন্ধ করা, কোন এনজিওর সঙ্গে বিবেচনা না করে নেতৃত্বশীল পুরনো রোহিঙ্গাদের গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় আনতে হবে। এনজিওতে রোহিঙ্গাদের চাকরি নিষিদ্ধ করে ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটি বাতিল করা অতীব জরুরী বলে মনে করেন তারা। অপহৃত রোহিঙ্গা উদ্ধার ॥ সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত রোহিঙ্গা যুবক আমির হোসেনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সে চাকমারকুল রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২১, ব্লক-ডি এর আশ্রিত রোহিঙ্গা মোঃ ইসলামের পুত্র। বুধবার বেলা ১২টায় এ খবর জানিয়েছেন ১৬ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সোহেল রানা। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে চাকমারকুল রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক-ডি এ আশ্রিত মোঃ আমির হোসেনকে অপহরণ করে ব্লক সি-৫ এলাকার একটি স্কুলে বেঁধে রাখে। স্থানীয়দের নিরাপত্তা দাবি ॥ আওয়ামী লীগ নেতা উখিয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, মনে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের সামলানোর সময় ও সুয়োগ উখিয়া টেকনাফবাসীর আর নাই। আমাদের অবহেলা ও উদাসীনতায় সে সুয়োগ আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এখন নিজেদের বাঁচার তাগিদে, আসন্ন চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি-সন্ত্রাস ও হত্যার হাত থেকে আমরা বাঁচতে কিভাবে পারবো সেটা নিয়েই জরুরী ভিত্তিতে মাথা ঘামানোর সময়ও হয়তো চলে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলিতে চাতুর্যের সঙ্গে চাকরি ও অন্য কাজে স্থানীয়দের অধিকার খর্ব করে এনজিও ও আই এনজিওগুলো তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার লোভে বহিরাগত ও নিজেদের আত্মীয়-স্বজনকে চাকরি-কাজ দিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছে। তারা এখন একে অপরের পরিপূরক ও পরম আত্মীয়। তাদের কাছে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কাজকর্ম অস্ত্র জোগাড় ইত্যাদি বিষয় নিশ্চয় অজানা ছিল না। এ জন্য উখিয়া টেকনাফ তথা সমগ্র কক্সবাজার অঞ্চলে অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করলেও তাদের কোন ক্ষতি নেই। কারণ তাদের প্রকৃত জন্ম স্থানে রোহিঙ্গাজনিত অশান্তি সৃষ্টির কোন সুযোগ নাই। ক্যাম্প পরিদর্শনে ডিআইজি ॥ রোহিঙ্গা শিবিরে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি, ভাংচুর, জবাই ও গুলি করে সিরিজ হত্যা ঘটনার পর চট্টগ্রামের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। বুধবার বিকেলে তিনি উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প তথা ঘটনাস্থলে যান। বিকেল পাঁচটায় কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে পুলিশ, এপিবিএন সদস্য ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে ক্যাম্পে পরিস্থিতি শান্ত রাখার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন ডিআইজি। এনজিও কর্মীদের সরিয়ে আনার নির্দেশ ॥ উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সকল এনজিও কর্মীদের দ্রুত ফেরত আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট এনজিওসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত সকল এনজিও কর্মকর্তাদের স্ব স্ব এনজিওর পক্ষ থেকে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মঙ্গলবার রাতের ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠায় এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বুধবার বেলা ১২টার পর এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়। স্থানীয়দের নিরাপত্তা দাবি ॥ আওয়ামী লীগ নেতা উখিয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, মনে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের সামলানোর সময় ও সুযোগ উখিয়া এবং টেকনাফবাসীর আর নেই। আমাদের অবহেলা ও উদাসীনতায় সে সুযোগ আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এখন নিজেদের বাঁচার তাগিদে,আসন্ন চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি-সন্ত্রাস ও হত্যার হাত থেকে আমরা কিভাবে বাঁচতে পারব সেটা নিয়েই জরুরী ভিত্তিতে মাথা ঘামানোর সময়ও হয়ত চলে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চাতুর্যের সঙ্গে চাকরি ও অন্য কাজে স্থানীয়দের অধিকার খর্ব করে এনজিও ও আইএনজিওগুলো তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার লোভে বহিরাগত ও নিজেদের আত্মীয়-স্বজনকে চাকরি-কাজ দিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছে। তারা এখন একে অপরের পরিপূরক ও পরম আত্মীয়। তাদের কাছে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কাজকর্ম, অস্ত্র যোগাড় ইত্যাদি বিষয় নিশ্চয় অজানা ছিল না। এর জন্য উখিয়া, টেকনাফ তথা সমগ্র কক্সবাজার অঞ্চলে অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করলেও তাদের কোন ক্ষতি নেই। কারণ তাদের প্রকৃত জন্মস্থানে রোহিঙ্গা জনিত অশান্তি সৃষ্টির কোন সুযোগ নেই। তাই বর্তমানে সৃষ্ট সঙ্কট সম্পর্কে তারা আগেভাগেই আঁচ করতে পারলেও নিচ্ছুপ থাকাই উত্তম মনে করেছে। ক্যাম্প পরিদর্শনে ডিআইজি ॥ রোহিঙ্গা শিবিরে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি, ভাংচুর, জবাই ও গুলি করে সিরিজ হত্যা ঘটনার পর চট্টগ্রামের ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। বুধবার বিকেলে তিনি উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প তথা ঘটনাস্থলে যান। বিকেল পাঁচটায় কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে পুলিশ, এপিবিএন সদস্য ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে ক্যাম্পে পরিস্থিতি শান্ত রাখার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেন ডিআইজি। এনজিও কর্মীদের সরিয়ে আনার নির্দেশ ॥ উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সকল এনজিও কর্মীকে দ্রুত ফেরত আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট এনজিওসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত সকল এনজিও কর্মকর্তাদের স্ব স্ব এনজিওর পক্ষ থেকে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মঙ্গলবার রাতের ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বুধবার বেলা ১২টার পর এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়।
×