ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পৃথিবীকে রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ৮ অক্টোবর ২০২০

পৃথিবীকে রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীকে রক্ষায় আর বিলম্ব না করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা কেবলই হারব। আমাদের সকল কর্মকা- দেখে মনে হচ্ছে- আমরা সচেতনভাবে আমাদের বাঁচিয়ে রাখার অতিপ্রয়োজনীয় সিস্টেমগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছি। তাই পৃথিবীকে রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়; আগামীকাল নয়, আজই। বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি ‘মিডনাইট সারভাইভাল ডেডলাইন ফর দ্য ক্লাইমেট’ শীর্ষক জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ফোরামের (সিভিএফ) লিডার্স ইভেন্টে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে এমন আহ্বান জানান। সিভিএফের বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে বৈশ্বিক নেতাদের এ ভার্চুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, গ্লোবাল সেন্টার অন এ্যাডাপ্টেশন (জিএসএ) চেয়ার জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, সিভিএফ দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিগণ। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে পৃথিবীকে রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমান ক্ষতি কমিয়ে আনতে প্যারিস চুক্তির কঠোর বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের সরকারের শুধুমাত্র প্যারিস চুক্তির আওতায় জাতীয় অবদানে সন্তুষ্ট থাকা উচিত হবে না। তাদের লক্ষ্য ও অবদান আরও বাড়ানো দরকার। জলবায়ু এবং পৃথিবীর জন্য ‘ক্লাইমেট জাস্টিস’ ধারণাটি অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। প্রযুক্তিতে প্রবেশ সুবিধার পাশাপাশি অর্থায়নে বড় অর্থনীতির দেশগুলো, মাল্টিলেটারাল উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবি) ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (আইএফআই) আরও জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোকসান ও ক্ষতি মোকাবেলায় আরও সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্যোগ প্রশমন, অভিযোজন, দুর্যোগ মোকাবেলা ও পুনরুদ্ধারে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রতিবছর কমপক্ষে ১০০ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এ সম্পর্কিত ইভেন্টে চার দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে সিভিএফের বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার জনগণের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করার এবং সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ নামে একটি নতুন কর্মসূচী চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের এও নিশ্চিত করা উচিত যে- উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রশমন, অভিযোজন এবং দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া ও পুনরুদ্ধারের জন্য বছরে অন্তত ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যেন পেতে পারে। চার দফা প্রস্তাবের মধ্যে প্রথম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্যারিস চুক্তির কঠোর বাস্তবায়নই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির বর্তমান হারকে হ্রাস করার একমাত্র উপায়। দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, সরকারগুলোর প্যারিস চুক্তির অধীনে তাদের জাতীয় অবদানকেই কেবল সম্মান জানানো উচিত নয়, তাদের আকাক্সক্ষাও যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো দরকার। জলবায়ু ন্যায়বিচারের ধারণাটি জলবায়ু এবং পৃথিবীর স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, প্রধান অর্থনীতির দ্বারা (উন্নত দেশগুলো) অর্থের আরও জোরদার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, প্রযুক্তিতে প্রবেশের সঙ্গে এমডিবি এবং আইএফআই রয়েছে। সবশেষ চতুর্থ দফা প্রস্তাবে তিনি বলেন, লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি মোকাবেলায় এবং মূলধারার জন্য সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। পরিবর্তনের বিষয়টি সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমরা আমাদের সময়ের সব থেকে গুরুতর বৈশি^ক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবগুলো আমাদের সভ্যতার ক্ষতি করছে, আমাদের গ্রহকে ধ্বংস করছে এবং আমাদের অস্তিত্বকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। তাই আমরা, সিভিএফ নেতৃবৃন্দ এবং আমাদের অংশীদারগণ, ২০২০ সালের এনডিসি বর্ধিত সময়সীমার আগে জলবায়ু জরুরী অবস্থা মোকাবেলায় ত্বরিৎ এবং শক্তিশালী বৈশি^ক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ফোরামের নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত হয়ে সম্মানিত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সিভিএফ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের এক বিলিয়নেরও বেশি লোকের প্রতিনিধিত্ব করে। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে অনুল্লেখ্য অবদানের পরেও সিভিএফ দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সভাপতি হিসেবে, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যে আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে, অর্থায়ন ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করা এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার আখ্যানগুলো এবং ক্ষতি এবং ক্ষয়ক্ষতি ইস্যু তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয়ে জাতিসংঘে বিশেষ ‘র‌্যাপোটিয়ার’ নিয়োগ এবং একটি সিভিএফ এবং ভি-২০ যৌথ মাল্টিডোনার তহবিল গঠনের ওপরও গুরুত্ব দেব।
×