ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৭ মার্চ ঐতিহাসিক দিবস ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ৮ অক্টোবর ২০২০

৭ মার্চ ঐতিহাসিক দিবস ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দেয়া ভাষণের দিনটিকে ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে দিবসটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদ্যাপন সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারিকৃত পরিপত্রের ‘ক’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও অনুমোদন পেয়েছে। এছাড়া করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহের বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিতকরণ করা হয় যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) স্বীকৃতি পায়নি করোনা প্রতিরোধের এমন টিকা কিনবে না সরকার। এছাড়া টিকা সংগ্রহের জন্য এক প্রকল্পের অধীনে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানায়, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেন, ডব্লিউএইচও’র স্বীকৃতি প্রাপ্তদের মধ্যে যেখান থেকে আগে পাওয়া যাবে সেখান থেকে ভ্যাকসিন আনতে হবে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয় থেকে মন্ত্রীরা এই বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক ৭ মার্চকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করে গেজেট জারির নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ দিনটি (৭ মার্চ) ঐতিহাসিক দিন সবাই জানেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ় বলিষ্ঠ নেতৃত্বের নির্দেশনা ও জাতীয় জাগরণের বহির্প্রকাশ ঘটেছে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেয়া ভাষণে। বঙ্গবন্ধুর দেয়া ৭ মার্চের ভাষণ এই দেশে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মূল প্রেরণা। এই ভাষণকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার চূড়ান্ত মঞ্চ গড়ে ওঠে। তিনি আরও বলেন, ৭ মার্চ ভাষণের নির্দেশনার আলোকে এ দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এটার আন্তর্জাতিক গুরুত্বও আছে। ইউনেস্কো এই ভাষণটিকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সেই বিবেচনায় জাতীয় জাগরণ ও স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম প্রেরণার উৎস হিসেবে দিবসটি উদ্যাপন করার বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক। তাই মন্ত্রিপরিষদে প্রস্তাব হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবটা দিয়েছে। খন্দকার আনোয়ারুল সচিব বলেন, এ প্রস্তাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আছে, যেমন- ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সঠিকভাবে উপস্থাপন ও তাৎপর্য তুলে ধরা দিবসটি পালনের যৌক্তিকতা। দিবসটি উদ্যাপনের মাধ্যমে দেশের জনগণের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপূর্ণ বিকাশ লালন-পালন ও যথাযথ চর্চা করা সম্ভব হবে। সকল শিক্ষার্থী ও মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পরিপূর্ণ সংস্থাপন করার প্রয়াস বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর, সংস্থা এই দিবসটি তাদের নিজস্ব কর্মসূচীর মাধ্যমে উদ্যাপন ও বাস্তবায়ন করবে। এ দিন কোন ছুটি থাকবে না। টিকায় বরাদ্দ ৬০০ কোটি, কেনা হবে না ডব্লিউএইচও’র স্বীকৃতি ছাড়া ॥ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) স্বীকৃতি পায়নি করোনা প্রতিরোধের এমন টিকা কিনবে না সরকার। এছাড়া টিকা সংগ্রহের জন্য এক প্রকল্পের অধীনে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহের বিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিতকরণ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ তথ্য জানান। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত প্রেজেন্টেশন ছিল। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে ৪৬টি ভ্যাকসিনের, আর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে ৯১টি ভ্যাকসিনের। যারা ভ্যাকসিন তৈরি করছে তাদের সঙ্গে শুরু থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যোগাযোগ রাখছে। তিনি বলেন, একটা বেজলাইন হলো ডব্লিউএইচও যেটাকে স্বীকৃতি দেবে না সেটাকে আমরা নেব না। এটাকে বেজলাইন ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ডিপার্টমেন্ট এবং ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো পার্সোনালি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এখানে প্রোডাকশনের জন্য। এখানে যে পদক্ষেপ স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়েছে সেটা হলো গত ৪ জুন অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের উদ্যোগের লন্ডনে ‘গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিট-২০২০’ অনুষ্ঠিত হয়, এ সামিটে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন। বিশেষ করে গ্যাভির (গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন এ্যান্ড ইমুনাইজেশন) পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার যোগ্য দেশ হিসেবে ঘোষণার যে আবেদন জানানো হয় তা গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চীনের বেসরকারী কোম্পানি সিনোভ্যাকের যে ভ্যাকসিন করেছে, সেটার থার্ড ট্রায়াল হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে এটি আইসিডিডিআরবি আবেদন জানানোর পর তা অনুমোদন করা হয়েছে। এখানে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের একটা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে। সে ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটু লেস প্রাইসে আমরা ভ্যাকসিন পাব। শুধু তাই না, আমাদের এখানকার এক বা একাধিক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি ইন্ট্রোডিউস করবে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার ক্যামেলিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টারের ‘স্পুটনিক-ভি’ ভ্যাকসিন প্রযুক্তি বাংলাদেশে হস্তান্তরের জন্য তারা আমাদের অফার দিয়েছে। এটাও বিবেচনায় রয়েছে। এ বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। কিন্তু আমরা শর্ত দিয়েছি এর জন্য ডব্লিউএইচওর অনুমোদন লাগবে। আরেকটি হচ্ছে ভারতের বায়োটেক। তারা আমাদের এখানে ট্রায়ালের আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ভ্যাকসিন কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। ৩৬ জনের প্রশিক্ষণের প্রস্তাব করেছে। অনলাইনে অরিয়েন্টেশন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামভিত্তিক সানোফি এ্যান্ড জিএসকে প্রোটিন বেজ ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। দেশের দুটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি এটি প্রডিউসের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভ্যাকসিন কেনার জন্য বাজেটে একটি প্রকল্পের আওতায় ৬০০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অর্থ সচিব নিশ্চিত করেছেন কোন কারণে যদি ফরেন কারেন্সি নাও পাওয়া যায়, বাজেটের সেটা সংস্থান রাখা হয়েছে। ভ্যাকসিন কেনার টাকার কোন সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেয়ার সময় বলেছিলেন, করোনার ভ্যাকসিন তৈরিকারী সব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থ বরাদ্দ করেছি। যেখানে ভ্যাকসিনটি প্রথম পাওয়া যাবে সেখান থেকে সংগ্রহ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনার আলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুসরণ করে এ যাবত গৃহীত কার্যক্রমের পাশাপাশি সম্ভাব্য সেকেন্ড ওয়েব মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যারা ভ্যাকসিন প্রডিউস করছে আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি তাদের সঙ্গে কমার্শিয়াল সাইট নিয়ে আলোচনা করছেন। সরকার ভাল মনে করলে সেটা খুব দ্রুত চলে আসবে। তিনি বলেন, বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন পাওয়ার সুযোগ নষ্ট হয়েছে। বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন আসার দ্রুত কোন সম্ভাবনা নেই। এটা আমাদের বুঝতে হবে। বিশ্বে একটা কম্পিটিশন চলছে। বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন পাওয়ার কোন সুযোগ এখন নেই। যদি আসে সেটা অনেক দেরি হবে। ভ্যাকসিন মার্কেটে আসার তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে কোন কোম্পানি বলতে পারছে না জানিয়ে তিনি বলেন, আমি যে তালিকাটা দেখলাম সেটা ২০২১ সালের এপ্রিল-মে-জুনের আগে মার্কেটে আসবে বলে তারা নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। যদি এর আগে সফল হয়ে যায় তবে ইনশাল্লাহ সবার সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ আছে। কিছু কিছু টেকনিক্যাল সাইটও আমাদের দেখতে হচ্ছে। দু-একটা ভ্যাকসিন আছে যেটা মাইনাস ৮০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। এটা আমাদের দেশে সংরক্ষণ খুব সমস্যা হবে। যেগুলো ২-৮ ডিগ্রীর মধ্যে সংরক্ষণ করতে হয়, সেগুলো আমাদের জন্য আনতে হবে। প্রথম থেকে ভ্যাকসিন কিনতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এবং এজন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দেয়া আছে। সিনোভ্যাক বিনিয়োগের কথা বলছে, সরকার বিনিয়োগ না করায় এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে- এ বিষয়ে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, না না, অনিশ্চয়তা কিছুই নেই। তারা বলেছে, কিছু একটা ফান্ডিংয়ের জন্য। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করছি। তারা যে ফান্ডিং চাচ্ছে সেটা রেশনাল কিনা, একটা সরকারী পর্যায়ে করতে হবে নাকি বেসরকারী, কোন জায়গা থেকে করতে হবে। এগুলো নিয়ে আলোচনা করছি। ভ্যাকসিন মানুষকে বিনামূল্যে দেয়া হবে কিনা- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ভ্যাকসিনের দামটা তো এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। সবকিছু দেখে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
×